Alapon

আল-জিহাদ ও মুসলিম উম্মাহ



মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর যে বিধানটার সাথে বেশি প্রতারণা করেছে, যে বিধানটাকে সবচেয়ে বেশি বিকৃত করেছে, সে বিধাটার নাম হলো আল-জিহাদ।

জিহাদকে বিকৃত করতে করতে এখন আমরা এর অর্থ করেছি কেবল চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা।

জিহাদ নিয়ে যে বা যারা কথা বলেন, তাদেরকে বানিয়ে দিয়েছি উগ্রবাদী। জঙ্গিবাদী।

এখন অনেকেই অভিধান খুলে খুলে আমাকে দেখানোর চেষ্টা করবেন—দ্যাখো দ্যাখো, জিহাদ অর্থ চেষ্টা। জিহাদ অর্থ সাধনা।

আমার কথা হলো দেখুন, আপনি তো কথিত সালাফিদেরকে অক্ষরবাদী বলে গাইল দেন, কিন্তু এখানে কি আপনিও তাদের চেয়ে বেশি অক্ষরবাদিতার পরিচয় দেননি?

আসলে আমরা যদি কেবল শাব্দিক অর্থই খুঁজি বা খুঁজতে যাই, তাহলে দেখবো যে—সালাত অর্থ প্রার্থনা, দু'আ। অথচ দেখুন, আমরা আজান দেওয়ার পরে যে মসজিদে যাই তখন কি আমরা বলি— দু'আ করতে যাই? বলি না। কারণ এটা কেবলই একটা শব্দ না। সালাত শরিয়তের আলাদা একটা পরিভাষা। এটা একটা পরিপূর্ণ ও মিনিংফুল ইবাদাত। এটার আলাদা পদ্ধতি আছে। আলাদা উদ্দেশ্য আছে। নিয়ম-কানুন আছে।

অথচ এই আমরাই জিহাদের কথা আসলে বলি যে, এটা অর্থ চেষ্টা-প্রচেষ্টা। না, এটা মানে কেবল চেষ্টা প্রচেষ্টা নয়। এর অর্থ এটা করে বরং এই ইবাদাতের প্রভাবকে, এই ইবাদাতের চূড়ান্ত মিনিংকে হালকা করে ফেলা হয়। এই ইবাদাতের চূড়ান্ত মাকাসিদকে আড়ালে ঢেকে ফেলা হয়।

এখন প্রশ্ন উঠতে পারে— জিহাদ মানে কী?
জিহাদ মানে হলো আল্লাহর কালিমাকে, খোদার দীনকে বিজয়ী করার জন্য প্রাণপণ লড়াই করা। কুফ ফার শক্তির সাথে যু দ্ধ করা, যেভাবে তারা করে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
জিহাদ মানে হলো আল্লাহর দীনকে বিজয়ী করার জন্য বাতিলের মসনদকে উপড়ে ফেলা।
জিহাদ মানে হলো খোদাদ্রোহী কুফরি শক্তির জম হয়ে উঠা। ইসলাম বিদ্বেষীদের জন্য ত্রাস হয়ে উঠা। ফুকাহায়ে কেরামও জিহাদের অর্থ করেছেন এরকমই।

হানাফি মাজহাবের আইনগ্রন্থ شرح الوقاية-এর গ্রন্থকার বলেন:
اَ
لْجِهَادُ هُوَ الدُّعَاءُ إِلَى الدِّيْنِ الْحَقِ وَالْقِتَالُ مَنْ لَمْ يَقْبَلْهُ.
অর্থাৎ جِهَاد হচ্ছে সত্য দীনের প্রতি আহবান করা এবং তা অগ্রাহ্যকারীর বিরুদ্ধে যু দ্ধ করা।


শাফি’ঈ মাজহাবের আইনগ্রন্থ ’আল ইকনা’-তে বলা হয়েছে—
জিহাদ হলো আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করা।’


সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি রহ. ’ফাতহুল বারি’-তে বলেন—
জিহাদের শারঈ অর্থ হলো কাফিরদের বিরুদ্ধে যু দ্ধে সর্বাত্মকভাবে চেষ্টা-সংগ্রাম করা’’।

মালিকি মাজহাবের আইনগ্রন্থ ’মানহুল জালিল’-এ জিহাদকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এভাবে—

قِتَالُ مُسْلِمٍ كَافِرًا غَيْرَ ذِي عَهْدٍ لِإِعْلَاءِ كَلِمَةِ اللّٰهِ
’আল্লাহর কালিমাকে সর্বোচ্চে সমুন্নত করার জন্য কাফিরদের (যাদের সঙ্গে মুসলিমদের চুক্তি নেই) সঙ্গে লড়াই করা।’

আর আমরা দীন বিজয়ের এই জিহাদকে বানিয়েছি চেষ্টা করা। সাধনা করা। ইত্যাদি। যার কারণে যিনিই জিহাদের ওপর কথা বলেন, তাকেই আমরা বানিয়ে দিয়েছি এবং এখনো দিই খারেজি, চরমপন্থী।

অথচ আমেরিকা, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স, ইসরাঈল; এরা চেষ্টা করে না মুসলমানদের বিরুদ্ধে। বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যু দ্ধ করে। ইসলামকে পরাজিত করার জন্য মুসলিম মু জা হিদদের হত্যা করে। কেবল মুজাহিদদেরকেই না, সাধারণ মুসলমানদেরকেও নির্বিচারে খু ন করে (কিন্তু তারা চেষ্টা করে অন্য জায়গায়। যেমন, কীভাবে সাংস্কৃতিকভাবে আমাদের দেওলিয়া করা যায়। কীভাবে মুসলমানদের নৈতিকতাকে, মুসলিম যুবকদের চরিত্রকে দুর্বল করা যায়, ইত্যাদি।)।

আমেরিকা-ন্যাটো সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নামে সর্বমোট ১.৫ মিলিয়ন মানুষকে হত্যা করেছে। প্রতিটি মুসলিম দেশেই জঘন্যভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।

আজকে যে বাংলাদেশের মাথায় কাডালরানী চেপে বসেছে, তাকে বাংলাদেশে চাপিয়ে দিয়েছেই আমেরিকা। আলিম-ওলামা, ইসলাম ও ইসলামী মূল্যবোধকে শায়েস্তা করার জন্য।

তবুও আমরা বুঝি না। আমরা কেবল সন্ত্রাসী দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চাওয়া বা যুদ্ধ করা ব্যক্তিদেরই সন্ত্রাসী বলি।

যেমন একটা বিষয় খেয়াল করুন, শেখ হাসিনা তার উগ্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে জামায়াত-শিবিরকে নানাভাবে নির্যাতন করেছে। শীর্ষ নেতৃত্বকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে। গুম করেছে, ক্রসফায়ার দিয়েছে।

এর প্রতিবাদে জামায়াত-শিবির যখন হরতাল করেছে, কিছু গাড়িঘোড়া ভেঙেছে হরতালে, তখন মিডিয়াগুলো তেড়ে এসে বলা শুরু করলো দেখছো দেখছো জামায়াত-শিবির কতো বড়ো স ন্ত্রা সী!

অথচ তাদেরকে ঘর থেকেও যে গোপন বৈঠকের কথা বলে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদেরকে যে নির্বিচারে খু ন করেছে তখন কিন্তু এরা সবাই এ ব্যাপারে নীরব ছিল! কেবল নীরব বললেই ভুল হবে, এরা বরং এসবকে আরো উৎসাহ দিয়েছে, উস্কানি দিয়েছে।

হ্যাঁ, এভাবেই আমরা সবাই জালিমকে দায়মুক্তি দিয়ে মজলুমকে অভিযোগ করি।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমাদেরকে সঠিক সমঝ দান করুন। আ-মী-ন।

~রেদওয়ান রাওয়াহা
০৫.১০.২৩

পঠিত : ১৬০ বার

মন্তব্য: ০