যৌবনকালের গুরুত্ব
তারিখঃ ২৭ অক্টোবর, ২০২৩, ১৭:০৩
ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীর সবকিছু ক্ষণস্থায়ী। মানুষও তার ব্যতিক্রম নয়। প্রতিটি বস্তুর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ থাকে, যা ঐ বস্তুকে সচল রাখে কিংবা ঐ বস্তুর মান বাড়িয়ে তোলে। অনুরূপ মানুষের জীবনকে কয়েকভাগে ভাগ করলে তন্মধ্যে যৌবনকাল হচ্ছে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটা অধ্যায়।
একজন মানুষের সুন্দর একটি জীবন গড়ার জন্য যে প্রস্তুতি নিতে হয়, তার মোক্ষম সময় হচ্ছে যৌবনকাল। যৌবনকাল হলো ইতিহাস সৃষ্টি করার সময়। কবির হেলাল হাফিজের ভাষায়, “এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার সময় তার”।
ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় যে কোন আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সামনের সারিতে থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে যৌবনকালের অধিকারী যুবক শ্রেণি।
আল্লাহ তাআালার একমাত্র মনোনীত এবং পছন্দনীয় দিন হলো ইসলাম। সেই ইসলামের ইতিহাসেও দেখা যায় যুবকদের ভূমিকা অপরিসীম। তারা নেতৃত্ব দিয়ে কিংবা সামনের সারিতে থেকে যে কোন আন্দোলনকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
দুনিয়ায় যে কোনো সফলতা অর্জনের জন্য যৌবনকাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কশৈশবকালে মানুষের উল্লেখযোগ্য কিছু করার থাকে না। এই সময়টা শিখা, বুঝা এবং বেড়ে উঠার মাধ্যমে শেষ হয়ে যায়। আর বার্ধক্য? সেটা কেটে যায় হাসপাতালের বেডে বেডে অথবা বাসাকে হাসপাতাল বানিয়ে থাকতে হয়। এই সময়টা মানুষ নিজ ছেলে-মেয়ে এবং অন্যান্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। আর শৈশবে থাকতে হয় পিতা-মাতা কিংবা বড়দের উপর নির্ভরশীল হয়ে। এজন্য জীবনের এই দুই সময়ে তেমন কিছু করার থাকে না। তাই আমাদের যা-ই করতে হয় সবকিছু যৌবন বয়সে করতে হয়।
এ-তো বললাম দুনিয়ার জীবনের কথা। পরকালীন জীবনে সফলতা লাভ করার জন্যও যৌবনকালকে কাজে লাগাতে হবে। যৌবনকালের প্রতিটি ভালো কাজ আল্লাহর কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক। এই সময়ে মানুষ সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করে। হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের কথা প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَ لَمَّا بَلَغَ اَشُدَّہٗۤ اٰتَیۡنٰہُ حُکۡمًا وَّ عِلۡمًا
যখন সে পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমি তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম। (সূরা ইউসূফ, আয়াত-২২) সূরা ক্বসাসের ১৪নং আয়াতেও হযরত মুসা আলাইহিসালামের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা একই কথা বলেছেন। অর্থাৎ, যৌবন বয়সেই মানুষ সব দিক দিয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে।
হাদিসের দিকে লক্ষ্য করলেও আমরা অসংখ্য হাদিস দেখতে পায় যৌবনের গুরুত্ব সম্পর্কে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি বলেছেন-
" لاَ تَزُولُ قَدَمَا ابْنِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عِنْدِ رَبِّهِ حَتَّى يُسْأَلَ عَنْ خَمْسٍ عَنْ عُمْرِهِ فِيمَا أَفْنَاهُ وَعَنْ شَبَابِهِ فِيمَا أَبْلاَهُ
কিয়ামতের দিন কোন আদম সন্তান পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সামনে অগ্রসর হতে পারবে না। এর মধ্যে একটি প্রশ্ন হলো- জীবনকে কীভাবে শেষ করেছেন এবং যৌবনকে কোন কাজে অতিবাহিত করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস নং ২৪১৬)
এখানে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনের কথা বলার পর পৃথকভাবে যৌবনকালের কথা উল্লেখ করছেন।
অপর হাদিসে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, কিয়ামতের কঠিন বিভীষিকার দিন আরশের ছায়া ছাড়া যখন কোন ছায়া অবশিষ্ট থাকবে না। সেদিন আল্লাহ তাআলা সাত শ্রেণির মানুষকে আরশের ছায়ার নিচে স্থান দিবেন। তন্মধ্যে একটি শ্রেণি হলো যুবক। যে যুবক তাঁর যৌবনকালকে আল্লাহর পথে কাটিয়েছেন। ( বুখারি ৬৬০, মুসলিম।)
যৌবনকাল সম্পর্কে সতর্ক করতে গিয়ে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদিসে বলেছেন-
شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ ‘
বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে গুরুত্ব দাও। (বাইহাকী, শুআবুল ঈমান- ১০২৪৮)
কারণ, এটা একবার আসে মানুষের জীবনে। যৌবনকালের কথা বলতে গিয়ে জনৈক আলেম বলেন, এটা হচ্ছে কচু পাতার পানির ন্যায়। কচু পাতার পানি যেভাবে যে কোন সময় যে কোন দিকে পড়ে যেতে পারে, অনুরূপ যৌবনকালেও মানুষ যে কোন দিকে ধাবিত হয়ে যেতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হয় বেশি।
যৌবন বয়সটা এমন, যে কেউ যে কোন কাজের সিদ্ধান্ত নিলে সে কাজ বাস্তবায়ন সহজ হয়ে যায়। যৌবনকে যে অবহেলা করে, সে যেন ভবিষ্যৎ কে অবহেলা করে। ফলে ভবিষ্যৎ জীবন তার অন্ধকার হয়ে পড়ে। এজন্য অলসতা এবং বিভিন্ন বিনোদনের নাম করে সময় অপচয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিনোদন সম্পর্কে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম স্কলার, হাসান আল বান্না বলেন, বিনোদনের জায়গা থেকে এই ভেবে দূরে থাক যে এর বিরুদ্ধেই আমার সংগ্রাম।
যুবকদের হতে হবে পরিশ্রমপ্রিয়। তাদের দেখতে হবে আকাশসম স্বপ্ন। আর সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনরাত পরিশ্রম করতে হবে। যুবকরা হচ্ছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। আল্লামা শেখ সাদী রহিমাহুল্লাহ বলেন, দুনিয়া এবং আখিরাতে যা লাভ করতে চাও, তা যৌবন বয়সেই জোগাড় করে নাও।
সুতরাং, আমাদের যুবকদের পরিচর্যা করতে হবে যথাযথ পক্রিয়ায়। তাদের সঠিক গাইডলাইন দিতে হবে। জাতির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য তাদেরকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে। আর যুবকদের উচিত, যৌবনকে হেফাজত করা। এটাকে গুরুত্ব দেয়া। এটার যত্ন নেয়া। পরিশ্রমপ্রিয় হওয়া। বিলাসিতায় যৌবনকে ধ্বংস না করা। এভাবে যুবকদের তৈরি করতে পারলে এবং তাঁরা নিজেরা বেড়ে উঠতে পারলে আগামী দিনের জাতিকে সঠিক নেতৃত্ব দিতে পারবে। ফলে দুনিয়ার জীবন এবং আখিরাতের জীবনে সফলতা লাভ করতে পারবে।
~ ইবনে মাসুদ
~২৭.১০.২৩
মন্তব্য: ০