Alapon

মুক্তিকামী জনতার মহাসমাবেশ



নানা জল্পনা আর কল্পনার অবকাশ শেষে আজ রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণ কেন্দ্র মতিঝিলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ কয়েক লক্ষ মুক্তিকামী মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।ফজরের নামাজের পর থেকেই জামায়াত ও শিবিরের নেতাকর্মীরা নটরডেম কলেজের সামনে অবস্থান নেয়।দেশপ্রেমিক ও মুক্তিকামী জামায়াত কর্মীরা শাপলা চত্বরে প্রবেশে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হতে হয়।ঢাকার প্রবেশ পথে পুলিশের অমানবিক তল্লাশিতে অনেক নেতাকর্মীকে হয়রানি ও গ্রেফতার করা হয়।এত কিছুর পর ও জামায়াতে ইসলামী তার শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ সফল করে।

জামায়াতে ইসলামীর মহাসমাবেশ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়া জুড়ে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ফেইসবুকে অনেকে প্রতিক্রিয়া জানান, "জামায়াতে ইসলামী এত বড় মহাসমাবেশ করতে পারবে,কল্পনা ও করতে পারেনি"আলহামদুলিল্লাহ। অনেকে লিখেছেন,"মুক্তিকামী জনতাকে ঠেকানো সম্ভব নয়"।আবার অনেকে লিখেছেন, জামায়াতের মহাসমাবেশের ব্যাপ্তি কিলোমিটার জুড়ে। জামায়াতের খোলা আকাশের নিচে সমাবেশ বাস্তবায়ণ হওয়ায় ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান(সাবেক এমপি) মহান আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সমাবেশ মূলত তিনটি দাবীতে অনুষ্ঠিত হয়,,তাদের দাবী সমূহ হলো-অবিলম্বে দলের প্রধান মানবিক নেতা আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ কারাবন্দি জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম উলামাদের মুক্তি,নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্বাবয়াধক সরকারের অধীনে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধ করা।অবশ্য এ দাবী গুলো শুধু জামায়াতে ইসলামীর দাবী নয়।দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)ও এসকল দাবী নিয়ে আন্দোলন করছে।এছাড়া ও গনতন্ত্র মঞ্চ, গন অধিকার পরিষদ,এবি পার্টি,বাংলাদেশ লেবার পার্টি,লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ,বামজোট একাংশ,জাতীয়তাবাদী সমমাননা জোট,১২ দলীয় জোট,ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস,খেলাফত আন্দোলন সহ বিরোধী প্রায় ৩৭ টি রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চায় এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন চায়।রাজনৈতিক দল সমূহের পাশাপাশি দেশের আটার কোটি মানুষ ও পরিবর্তন চাই।

গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৬,৩৭,৩৮ অনুচ্ছেদে বাংলাদেশী সকল নাগরিকদের স্বাধীন ভাবে সভা-সমাবেশ মিছিল মিটিং পালন ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। কিন্তু আমরা আজ লক্ষ্য করছি যে,দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও আইনের লোকেরাই সংবিধান স্বীকৃত অধিকার পালনে হস্তক্ষেপ করছে।সম্প্রীতি ঢাকায় মহাসমাবেশ শান্তিপূর্ণ ভাবে পালনের লক্ষ্যে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)কমিশনার বরাবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দপ্তর সম্পাদক সাক্ষরিত একটি দরখাস্ত প্রেরণ করা হয়।মহানগর পুলিশ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি কে তাদের পছন্দের জায়গায় সমাবেশ করতে অনুমতি প্রদান করলে ও জামায়াতের বিষয়ে সংবিধান বিরোধী আচরণ করে।পুলিশের কাছে সহযোগিতার আবেদন করলে ও পুলিশ জামায়াতের সমাবেশের সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দেয়।

২৭ অক্টোবর জাতীয় দৈনিক মানবজমিন এর ডিজিটাল ভার্সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান জনাব আসিফ নজরুল স্যার,মানবজমিন কে বলেনঃ-জামায়াতের অবশ্যই সমাবেশ করার অধিকার রয়েছে। কেননা তাদের দল তো কোণ দোষ করেনি।আপনারা যাদের যুদ্ধাপরাধী বলছেন-তাদের তো ফাঁসি হয়ে গেছে। তাহলে তাদের দল জামায়াত কেন সমাবেশ করার অধিকার পাবে না? ড.আসিফ নজরুল এর মতো কোটি কোটি জনতার একই কথা।জামায়াতে ইসলামি কেন সমাবেশ করতে পারবে না?


২০১১ সালের পর থেকে সারা দেশে ক্রমে ক্রমে জামায়াতে ইসলামী ও বাংলাদেশ ইসলামি ছাত্রশিবির এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় সহ সারা দেশের অফিস সমূহ অন্যায় ভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ দশবছর পর কয়েক দফা আবেদন এর পর গত ১০ ই জুন রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ কে অলিখিত অনুমতি দেয় ডিএমপি।এবার প্রশ্ন হলো-ঢাকা মহানগর পুলিশ যদি গত ১০ জুন জামায়াতে ইসলামী কে সমাবেশের অনুমতি দিতে পারে,তাহলে এখন কেন দিচ্ছে না?
গতকল জার্মান ভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলা বিভাগের একটি টকশো তে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা বিভাগ) হারুন অর রশিদ পরিস্কার ভাবে বলেন,জামায়াত কে ইতি পূর্বে কখনো সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি!কেননা তাদের নিবন্ধন নেই? অথচ আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পায়,সারা দেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ছাডায় রাজনীতি করে আসছে।তাহলে জামায়াতে ইসলামী কেন পাবে না?

আজ মতিঝিলে জামায়াতের মহাসমাবেশ চলাকালে সভাপতির বক্তব্যের সময়,পুলিশ সমাবেশের ফকিরাপুল অংশে অতর্কিত ভাবে গুলি বর্ষণ ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।কিন্তু জামায়াতের কর্মীরা নেতৃবৃন্দের নির্দেশে শৃঙ্খলার পরিচয় দেয়।এর দ্বারা প্রমান হয় জামায়াত কখনো পুলিশের সাথে সংঘর্ষ জড়াতে চায় না।তারা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ শান্তিপূর্নভাবেই শেষ করেছে।

সম্প্রীতি ঢাকায় জামায়াতের মহাসমাবেশ কে কেন্দ্র করে অসংখ্য নেতাকর্মী অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করেন।জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর-সমাবেশে তাদের মুক্তি দাবী করেন।অন্যদিকে আটাশ অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নেতা কর্মীদের হয়রানি ও অন্যায় ভাবে গ্রেফতারের প্রতিবাদে আগামীকাল ২৯ অক্টোবর সকাল সন্ধ্যায় শান্তি পূর্ণ হরতাল কর্মসূচি আহ্বান করেন।

আমি মনে করি দেশের সকল রাজনৈতিক দলের ন্যায় জামায়াতে ইসলামী ও সভা-সমাবেশ করার অধিকার রাখে।কাজেই আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিৎ জামায়াতে ইসলামীর কর্মসূচিতে সহযোগিতা করা।

দেশের ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে নেমেছে। ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে দেশের সকল মানুষের অংশ গ্রহণ জরুরী।বাঁচতে হলে লড়তে হবে।নচেৎ মুক্তি নেই।অবিলম্বে সহিংসতা এড়াতে সরকার জনগণের ন্যায্য দাবী মেনে নিবে সেই প্রত্যাশা করি।
সর্বোপরি বলব,জামায়াতে ইসলামি সহ সকল রাজনৈতিক দলের চলমান আন্দোলন দেশ ও জাতির মুক্তির জন্য।কাজেই দেশ প্রেমিক নাগরিকদের কে রাজনৈতিক কর্মীদের পাশে দাডাতে হবে।আমাদের অধিকার এর জন্য আমরা না লড়াই করলে তবে কে লড়বে?

আসুন সবাই রাজপথে নেমে স্বৈরাচার নিপাত করি।

পঠিত : ৫০৫ বার

মন্তব্য: ১

২০২৪-০১-০৪ ০৮:৪২

User
Md. Abdul Ohab Babul

আসুন সবাই রাজপথে নেমে জুলুমের অবসান করি

submit