Alapon

কর্মের দ্বন্দ্ব

মানুষের তৈরি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান গড়তে সময় লাগে বেশি আর ভাংগা বা ধ্বংস করতে সময় লাগে অনেক কম। টিন - কাঠের তৈরি ঘরে একবার আগুন লাগলে যেমন মুহুর্তেই সব শেষ ; তেমনি দায়িত্বশীল বা কর্মকর্তাদের ব্যর্থতার কারণে গোছানো সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে যায়। একটি সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল ব্যাক্তিগনের পারস্পরিক ভুলবোঝাবুঝি, গীবত-শেকায়েত, পরনিন্দা ও পরচর্চা অভ্যন্তরীন পরিবেশকে নষ্ট করে।এতে পরস্পরের মধ্যে ফাটল তৈরি হয়ে বিশাল দূরত্ব ও মনক্ষুন্নতা প্রকাশ পায়।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণ তথা অভন্তরীন পরিবেশকে সুন্দর ও শৃঙ্খল করার জন্য আল্লাহ তায়া’লা সুরা হুজরাত এর মধ্যে দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো :-
১)পরস্পরের মাঝে ভাতৃত্ব তথা উখুওয়্যাত প্রতিষ্ঠা করা।
২) একে অপরকে সংশোধন করা।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন :-
انما المؤمنون اخوة فاصلحو بين اخويكم (الاية)

আর যে সকল প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রেজামন্দি হাসিলের উদ্দেশ্য গড়ে উঠে ; সে প্রতিষ্ঠান বা দায়িত্বশীলদের হতে হবে আল্লাহভীরু, তাকওয়াবান, তার রবের বিধান ও নববী আদর্শের একনিষ্ঠ অনুসারী। তাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি একান্তই আল্লাহর উপর হয়। তাদের রিযকের ফায়সালা আসমানে হয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সুরা মুলকে বলেন:-
ان الذين يخشون ربهم بالغيب لهم مغفرة و اجر كريم (الاية)
অর্থাৎ নিশ্চয়ই যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় পায় অদৃশ্যের মাধ্যমে ; তার জন্য রয়েছে ক্ষমা ও সম্মানজনক প্রতিদান। (আল-কুরআন)

অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেন :-
لهم درجات عند ربهم و مغفرة و رزق كريم (الاية)
অর্থাৎ, তাদের জন্য তাদের রবের নিকট রয়েছে উত্তম মর্যাদা, ভূল ত্রুটির ক্ষমা এবং উত্তম রিযক।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যারা চেষ্টা করে, জীবিকা নির্বাহ ও নিত্য প্রয়োজনীয় চাহিদা পুরণের জন্য সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান থেকে সামান্য বিনিময় গ্রহণ করে। চুড়ান্ত বিনিময় আল্লাহর নিকট থেকে পাওয়াই তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকে। এটাই রাসুল (সsmileও আসহাবে রাসুলের আদর্শ।

রাসল (সাsmile ও আসহাবে রাসুলের জীবনী পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তারা আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব ও রাসুল (সাsmile
কতৃক বন্টনকৃত দায়িত্ব পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হক আদায় করে পালন ও বাস্তবায়ন করেছেন। এজন্য তারা পরবর্তী উম্মাহর জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়েছেন। সাহাবাদের মধ্য থেকে কেউ ইন্তেকাল করলে তারা নিজ সন্তানকে নিয়ে নুন্যতম চিন্তা দেখা দিত না। কারণ, তারা তাদের পরবর্তী কয়েক প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য পৃথিবী হিসেবে উপহার দিয়েছিল। ইসলামকে সমুন্নত আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়ছিল।

অথচ আমি আমার পরবর্তী প্রজন্মের ব্যাপারে চিন্তিত। আজকে আমি মৃত্যুবরণ করলে, আমার ভবিষ্যৎ উত্তরসুরী কি দ্বীনি শিক্ষা শিখতে পারবে? ইসলামী সংস্কৃতি চর্চা করতে পারবে? নাকি অপসংস্কৃতির থাবায় মূল পরিচয় হারিয়ে ফেলবে?

আমি আমার সন্তানকে নিয়ে, আমার পরবর্তী প্রজন্মকে নিয়ে চিন্তিত ও দ্বিধান্বিত।

কারণ, আমি তো আমার দায়িত্ব যথাযথ পালন করছি না। কর্তব্য আদায় করছি না। কর্মে ফাঁকি দিচ্ছি। শুধু যে আমি দিচ্ছি তা নয় ; আমার সহকর্মী ও সহপাঠী সবাই একই দোষে দুষ্ট।

তাই, আমি প্রথমে নিজেকে পরিবর্তন করতে চাই।কারণ,
ان لله لا يغير ما بقوم حتي يغير ما بانفسهم (الاية)
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জাতিকে পরিবর্তন করেন না। যতক্ষণ তারা নিজেরা পরিবর্তন না হয়।

পরিবর্তন আমাকেই হতে হবে। পরিবর্তনের প্রতিদান আল্লাহ নিকট রয়েছে। ইনশাআল্লাহ। কোন সুউচ্চ বিশ তালা বিশিষ্ট ভবনের মাটির উপরের চাকচিক্যময় পুরো ভবনের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব যত বেশি।ভবন দাড়িয়ে থাকার জন্য ভবনের নিচের ভিত্তি প্রস্থরের রট ও ইট-সিমেন্টের তৈরি খুটির ভুমিকা আরো অনেক বেশি। আর ইসলামি আদর্শে উজ্জীবীত সংগঠন বা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে যারা এ খুটির ভুমিকা পালন করে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা ও
প্রতিদান আল্লাহর নিকট আরও বেশি।

اللهم اجعلنا من التوابين و من المتطهرين ■ [امين]

পঠিত : ২৯৩ বার

মন্তব্য: ০