Alapon

সরকারের অব্যবস্থাপনার জন্যই নিয়ন্ত্রণের বাইরে ডেঙ্গু



ডেঙ্গুকে আগে শহরের রোগ হিসেবে চিহ্নিত করা হতো। কিন্তু এই বছর সেই ব্যাপারটা আর নেই। ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশা ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে গেছে, এতে সামনে এই রোগটি আরও ব্যাপকভাবে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ।

বাংলাদেশে এখন সারা বছরই দেশজুড়ে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃত্যুতেও রেকর্ড হয়েছে। শুক্রবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩ লাখ ৬ হাজার ৪৩৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

এর মধ্যে ঢাকায় ১ লাখ ৬ হাজার ৬৭৮ জন এবং ঢাকার বাইরে প্রায় এর দ্বিগুণ। ১ লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৯ রোগী ভর্তি হয়েছে। আর এ বছর মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৫৮৩। এর আগে কখনই এত রোগী বা মৃত্যু-কোনোটাই দেখেনি বাংলাদেশ।

আগে সারা বছরে ডেঙ্গুতে পাঁচশ রোগী হত না, এখন সেখানে প্রতিদিনই পাঁচশর বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কোনো পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়নি।

যথাসময়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা। যথাসময়ে ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু এতটা ভয়াবহ রূপ নিত না বলে মনে করেন তারা। একটা সময় ঢাকাতে সবচেয়ে বেশি রোগী থাকলেও এখন তা সারাদেশে প্রায় সমান হয়ে গেছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

২০২৩ সালের আউটব্রেকে দেখা গিয়েছে, ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকাতেই ডেঙ্গু রোগী। মোট সংক্রমণের ৩৫ শতাংশই ঢাকা এবং ৪৪ শতাংশ ঢাকার বাইরে থেকে আসছেন। এমনকি ৮৬ শতাংশ কেস শনাক্ত হয়েছে হাসপাতালের চারপাশে দুই কিলোমিটারের মধ্যে পাওয়া গেছে।

বছরের মে, জুন, জুলাই তিন মাসে এডিসের প্রজনন হার ছিল অনেকটাই বেশি। এই সময়টাতে বৃষ্টিও বেশি হয়। এই সময়ের আগেই মশা নিয়ন্ত্রণের কাজটা করা উচিত ছিল। কিন্তু সরকার এই ব্যাপারে কোনো উদ্যোগই নেয় নি। সিটি কর্পোরেশন ফগার মেশিন নিয়ে ফটোসেশন করা ছাড়া আর কিছুই করে নি। যথাযথ পদক্ষেপ তো দূরের কথা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে হাসিনা সরকার কোনো পরিকল্পনা বা উচ্চ পর্যায়ের কোনো কমিটি গঠন করেনি।

করোনার সময় থেকে কমিউনিটি এঙ্গেজমেন্টের বিষয়ে চেষ্টা করেছিল সরকার। সেটাও ব্যর্থ হয়েছে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েও আরো সঠিকভাবে পরিকল্পনা করা উচিৎ ছিল। কিন্তু তা না করে সুরকার উদাসীন থেকেছে।

ডেঙ্গু সংক্রমণ নিয়ে পূর্বেই একটা ন্যাশনাল স্ট্রেটেজি তৈরি করা হয়েছিল। সেটা রিভিশনের জন্য কোনো উদ্যোগ বা চেষ্টা চালানো হয়নি। ডেঙ্গুতে প্রতিদিনই ডাবল ডিজিটের মানুষ মারা যাচ্ছে। আমরা ডেঙ্গু প্রতিরোধে কোনো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম দেখিনি। অথচ সবাই বিচ্ছিন্নভাবে ইচ্ছেমতো ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। কমিউনিটি লেভেলে ট্রিটমেন্ট করার কোনো গাইডলাইন নেই।

এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ডেঙ্গু করোনার চেয়েও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এর থেকে মুক্তির জন্য সবাইকে পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে হতে সমন্বিত। আর এই অবশ্যই সরকারকেই করতে হবে।

পঠিত : ১৪১ বার

মন্তব্য: ০