Alapon

মাওলানা মওদূদীর সঙ্গে মরিয়ম জামিলার পত্রালাপ



মাওলানা মওদূদীর সঙ্গে মরিয়ম জামিলার পত্রালাপ এ বইটিতে মরিয়ম জামিলার ইসলাম গ্রহণের প্রাথমিক প্রদেক্ষপ সমূহ আলোচনা করা হয়েছে। সাথে কিছু বিশেষ প্রশ্নের উত্তর তিনি মাওলানার নিকট থেকে জানার চেষ্টা করেছেন যে সকল প্রশ্নের উত্তর মাওলানা খুবই সুন্দর ভাবে দিয়েছেন এবং মরিয়ম জামিলার চাহিদার আলোকে প্রশ্নগুলোর উত্তর হওয়াতে তিনি আনন্দিত হয়েছেন যা তার পত্রালাপে এবং পরবর্তীতে পাকিস্তান প্রত্যাবর্তনের মাধ্যমে প্রমাণিত।

মূল যে বিষয়টি আমার নিকট বিশেষ শিক্ষণীয় মনে হয়েছে তা হলো, একজন ইহুদী নারী-মার্কিন নাগরিক। যার কাছে আধুনিক জীবনকে উপভোগ করার সকল উপকরণ বর্তমান থাকার পরেও তিনি ইসলাম সম্পর্কে এত আগ্রহী হওয়ার কারণ কি?
তখন মনে হয়েছে এই হাদিসটি, হজরত আবু হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক সন্তানই ইসলামী ফিতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর তার মাতা-পিতা তাকে ইয়াহুদী, নাসারা অথবা অগ্নিপূজক বানিয়ে ফেলে। যেরূপে চতুষ্পদ জন্তু পূর্ণাঙ্গ জন্তুই জন্ম দিয়ে থাকে, এতে তোমরা কোন বাচ্চার কানকাটা দেখতে পাও কি? এরপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিলাওয়াত করলেনঃ
فِطْرَةَ اللهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللهِ ذلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ
’’আল্লাহর ফিতরাত, যার উপর তিনি মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি রহস্যে কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সরল প্রতিষ্ঠিত দীন।’’সূরা আর রূম : ৩০ (বুখারী : ১৩৫৮)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী প্রত্যেক মানব সন্তান ইসলামকে মানার উপযোগী হয়েই জন্ম নেন। কিন্তু তার পরিবেশ ও পরিবার তাকে বিভিন্ন মত ও পথে পরিচালিত করতে থাকে। এ ক্ষেত্রে মরিয়ম জামিলা আল্লাহর বিশেষ রহমত প্রাপ্ত বলা যায়। তা নাহলে জাহেলি সমাজে ও পরিবেশে বসবাস করে নিরেট আল্লাহর নৈকট্য লাভের উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলা অনেক বেশি চেলেঞ্জিং একটি কাজ। যা তিনি ইসলাম গ্রহণ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী জীবনে অতিবাহিত করেছেন। কিন্তু কখনও হতাশ হননি বরং আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছেন এবং তিনি সফল হয়েছেন।

তিনি ইসলামকে জানার আগ্রহ থেকে তাত্ত্বিক পড়াশোনা ও আলোচনা শোনার পাশাপাশি মুসলিম জনসাধারণের জীবন যাত্রাকে সরাসরি দেখার জন্য কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মুসলিম ছাত্র সমিতিতে যোগদান করেন। এবং সেখানকার মুসলিম ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনযাত্রা পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে দেখতে থাকেন। কিন্তু তিনি কুরআন ও হাদিসে যে ইসলাম পড়েছেন এবং বুঝেছেন তার সাথে মুসলিম জনসাধারণের জীবন যাত্রায় অনেক বৈপরিত্ব লক্ষ করেন! যা তাকে নতুন করে ভাবনার মধ্যে ফেলে দেয়। তবে তিনি হতাশ না হয়ে ইসলামের মূল সৌন্দর্যকে ধারণ করার উপযোগী করে নিজেকে গড়ে তোলার জন্য আরো পড়াশোনা করতে থাকেন। পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বড় বড় ইসলামিক স্কলারদের সাথে পত্রালাপ শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি আল্লামা মওদূদী রহ. খোঁজ পান এবং তার সাথে পত্রালাপ করেন।
এখানে ইমাম মালেক রহ. উক্তির কথা মনে পড়ে। তিনি বলেন,“তুমি মানুষ দেখে সত্যকে চিনতে যেয়ো না; আগে সত্যকে চেনো। এতে করে আপনাতেই তুমি সত্যের ধারকদের চিনতে পারবে।”
এই বাণীর পূর্ণ প্রতিফলন মরিয়ম জামিলার জীবনিতে দেখতে পাই। যার কারনে উনি মার্কিন মুলুকে মুসলিম ছাত্রদের অনৈসলামিক কার্যক্রম দেখেও হতাশ হননি কিংবা ইসলাম সম্পর্কে বাজে ধারণায় পড়েননি।

কারণ তিনি আগে সত্যকে জেনেছেন, এর পর কারা সত্যকে ধারন করছে তাদেরকে চেনার চেষ্টা করেছেন। যে কারনে তিনি হতাশ হননি কিংবা দিকভ্রান্ত হননি।
সর্বশেষ তিনি ইসলামকে যথাযথ ভাবে মানার জন্য নিজ জন্মভূমি থেকে হিজরত করে পাকিস্তান চলে আসার এবং মাওলানার পরিবারের সাথে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। যা ছিলো উনার এবং উনার পরিবারের জন্য কঠিন এক সিদ্ধান্ত।
উনি কখনও মাওলানাকে দেখেননি তার নাম শুনেছেন শুধু এতেই মাওলানাকে বিশ্বাস করে তার কথামতো পাকিস্তান পাড়ি জমানো! একটি ইহুদি পরিবার তাদের নিজ কন্যাকে অন্য ধর্মের, অপরিচিত ও ভিনদেশি একজন ব্যক্তিকে বিশ্বাস করে তার নিকট পাঠাবে, যা ছিলো অনেক বেশি চেলেঞ্জিং। এবং ততকালিন মার্কিন সমাজের জন্য অদ্ভুত এক সিদ্ধান্ত। কেননা মার্কিনীরা প্রাচ্চের দেশ সমূহকে মনে করতো গরিব, বর্বর! প্রাচ্চের লোকজনের স্বপ্ন থাকে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমানোর। কিন্তু মার্কিন কোনো নাগরিকের ইচ্ছার মধ্যে প্রাচ্চের দেশে স্থায়ী বসবাসের চিন্তা কখনও আসেনা এবং তারা এটা কল্পনাও করতে পারেনা।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে মরিয়ম জামিলা তার লক্ষে পৌঁছাতে পেরেছেন। আমাদের জন্য শিক্ষণীয় একটি বই রেখে যাওয়ার উত্তম প্রতিদান আল্লাহ তাকে দান করুন।

বই : মাওলানা মওদূদীর সঙ্গে মরিয়ম জামিলার পত্রালাপ
বিষয় : পত্রালাপ ও সংক্ষিপ্ত জীবনী
পৃষ্ঠা : ১১০
প্রকাশনী : তাফহীম পাবলিকেশন
প্রকাশকাল : সেপ্টেম্বর ২০২২
লেখক : মরিয়ম জামিলা
অনুবাদ : এ. কে. এম. হানিফ

পঠিত : ১৭৩ বার

মন্তব্য: ১

২০২৩-১২-০১ ২১:১৫

User
খোরশেদ মাহমুদ

বইটি সংগ্রহ করে পড়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ

submit