Alapon

কেন ভালোবাসব ফিলিস্তিনকে?



আমাদের সন্তানকে বারবার ফিলিস্তিনের ইতিহাস শোনাব, তাকে বারবার বলব কেন আমরা ফিলিস্তিনকে ভালোবাসি—

১. ফিলিস্তিন নবীদের পূণ্যভূমি।

২. ইবরাহীম আলাইহিস সালাম সর্বপ্রথম ফিলিস্তিনে হিজরত করেন এবং পরবর্তীতে স্ত্রী সারার সাথে সেখানে বসবাস করেন।

৩. লূত আলাইহিস সালামের কওমের ওপর পতিত গজব থেকে আল্লাহ তা‘আলা লূত আলাইহিস সালামকে উদ্ধার করেন ফিলিস্তিনে।

৪. নবী ইসহাক আলাইহিস সালাম ও ইয়াকুব আলাইহিস সালাম ও ইউসুফ আলাইহিস সালামের জন্ম এই ফিলিস্তিনে।

৫. নবী মূসা আলাইহিস সালাম মিসর থেকে বনী ইসরাইলকে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন পবিত্র এই ভূমিতে প্রবেশ করার জন্য। যদিও ইহুদিরা তাদের চিরাচরিত কাপুরুষোচিত স্বভাবের কারণে প্রবেশ করতে পারেনি। মূসা আলাইহিস সালাম এই ভূমিকে পবিত্র বলেন।

৬. নবী দাউদ আলাইহিস সালাম অত্যাচারী জালূতের কপালে পাথর ছুঁড়ে তখনকার মুমিনদেরকে ফিলিস্তিন পুনরুদ্ধারে সহযোগিতা করেন।

৭. নবী সুলাইমান আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনে বসেই জিন-ইনসানসহ পৃথিবীবাসীর ওপর রাজত্ব করেন।

৮. সুলাইমান আলাইহিস সালাম ও পিঁপড়ের যে বিখ্যাত কাহিনী কুরআনে বর্ণিত আছে, তা এই শহরেই ঘটেছিল। বর্তমান আসকালান শহরে অবস্থিত আন্ট ভ্যালি (পিঁপড়া উপত্যকা) আছে واد النمل নামে।

৭. নবী যাকারিয়া আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনেই বাস করতেন এবং তার মিহরাব এই ফিলিস্তিনেই ছিল।

৮. এই বায়তুল মাকদিসেই মারইয়াম আলাইহাস সালাম বসবাস করতেন এবং অলৌকিক খাদ্যভাণ্ডার প্রাপ্ত হতেন।

৯. এই ফিলিস্তিনেই মারইয়াম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ্ তা‘আলা কোনো পুরুষ ব্যতীত একটি শিশু গর্ভে ধারণ করার মতো আশ্চর্যজনক ঘটনার জন্য মনোনয়ন করেন।

১০. নবী ঈসা ও ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামের এই ফিলিস্তিনে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন।

১১. এই ফিলিস্তিনেই ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যার ষড়যন্ত্র হলে আল্লাহ তা‘আলা ঈসা আলাইহিস সালামকে আকাশে উঠিয়ে নেন।

১২. আমাদের প্রিয়নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহুﷺ মিরাজের রাতে আকাশের জগতে রওয়ানা হওয়ার আগে আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসে মেহমান করেন।

১৩. বায়তুল মাকদিসের দক্ষিণ দিকে কোথাও আল্লাহর রাসূল ﷺ অন্য জগতের বাহন তাঁর বোরাককে বেঁধে রেখেছিলেন।

১৪. ফিলিস্তিনের বায়তুল মাকদিসেই আমাদের রাসূল ﷺ সকল নবী-রাসূলের নামাজের ইমামতি করেন।

১৫. মিরাজের রাতে নামাজ ফরজ হওয়ার পর মসজিদুল আকসাই ছিল মুসলমানদের প্রথম কিবলা। মুসলমানরা বায়তুল মাকদিসের দিকে মুখ করে নামাজ পড়তেন। পরবর্তীতে আল্লাহর আদেশে কিবলা পরিবর্তন করে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ ঘর কাবার দিকে ফেরানো হয়।

১৬. কেয়ামতের আগে ঈসা আলাইহিস সালাম ফিলিস্তিনের কাছাকাছি শামের পবিত্র শহর দামেস্কে আসমান থেকে নেমে আসবেন ।

১৭. ঈসা আলাইহিস সালাম দাজ্জালকে শামের বাবে লুদের কাছে হত্যা করবেন।

১৮. রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, ‘বায়তুল মাকদিস হলো হাশরের ময়দান। পুনরুত্থানের জায়গা। তোমরা তাতে গিয়ে সালাত আদায় করো। কেননা, তাতে এক ওয়াক্ত সালাত আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায়ের সওয়ার পাওয়া যায়।’

১৯. দুনিয়াতে নির্মিত দ্বিতীয় মসজিদ পবিত্র শহর ফিলিস্তিনে অবস্থিত। মসজিদটি হলো মসজিদুল আকসা। বলা হয়ে থাকে আদম আলাইহিস সালামই মসজিদটি নির্মাণ করেছেন।

আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একদিন নবীজিকে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! দুনিয়াতে প্রথম কোন মসজিদটি নির্মিত হয়েছে?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদুল হারাম।’ তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, ‘তারপর কোনটি?’ প্রতিউত্তরে তিনি বললেন, ’তারপর হলো মসজিদুল আকসা।’ এরপর তিনি জানতে চাইলেন যে, ‘উভয়ের মধ্যে ব্যবধান কত বছরের?’ তিনি বললেন, ‘চল্লিশ বছরের ব্যবধান।’ [সহিহ বুখারি]

২০. বুখারী শরিফে আছে, পৃথিবীতে মাত্র তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য সকল মসজিদে ইবাদতের উদ্দেশ্য ভ্রমণ করা নিষিদ্ধ। এক হলো মসজিদুল হারাম। দুই, (বলুন তো কোন মসজিদ, কুইজ রইলো)। তিন, মসজিদুল আকসা।

২১. সূরা বনি ইসরাইলে আল্লাহ তাআলা মসজিদুল আকসার পরিবেশকে বরকতময় বলেছেন।

২২. সূরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তা‘আলা এই ভূখণ্ডের ব্যাপারে বলেন, ‘আর আমি তাকে ও লূতকে উদ্ধার করে নিয়ে গেলাম সেই ভূখণ্ডে, যেখানে আমি কল্যাণ রেখেছি বিশ্ববাসীর জন্য।’

২৩. সূরা আরাফে আল্লাহ তা‘আলা ফিলিস্তিনকে কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্য বলেছেন।

২৪. সূরা আম্বিয়ার আরেকটি আয়াতেও সুলাইমানের আলাইহিস সালামের ঘটনায় আল্লাহ তা‘আলা ফিলিস্তিনে কল্যাণ রেখেছেন বলে ঘোষণা দেন।

২৫. ফিলিস্তিনের এই ইতিহাস হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হেডলাইন। ফিলিস্তিনের আছে আরও অসংখ্য বিস্তারিত ইতিহাস, সাহাবাদের আমলের, তাবেয়ীদের আমলের, সালাফদের আমলের ইতিহাস, সালাহউদ্দীন আইয়ুবীর ইতিহাস। এই ভূমির কল্যাণের ব্যাপারে আছে হাদিসও। এখানকার মানুষের ব্যাপারেও আছে হাদিস।

এত সব কিছু ছাড়া ফিলিস্তিনের যে অধ্যায়টি আমাদের হৃদয়ের সাথে সংযুক্ত, সেটা হলো, ফিলিস্তিন হচ্ছে—শহীদদের ভূমি। এখানে নিয়মিত সেই অমূল্য নেয়ামত লাভে ধন্য হচ্ছে মানুষ, যে নেয়ামত পেলে জিন্দেগী অতিবাহিত করা সার্থক। সেই নেয়ামতের কল্যাণে যারা সেখানে বাস করে, তারা মুহূর্তেই পৌঁছে যায় জান্নাতের দোরগোড়ায়, ইনশাআল্লাহ! ফিলিস্তিন ও ফিলিস্তিনের মানুষকে ভালো না বেসে কি পারা যায়!

সবগুলো কারণেই আমরা ফিলিস্তিনকে ভালোবাসি। তবে বিশেষভাবে ফিলিস্তিনকে ভালোবাসার যদি একটা কারণ জিজ্ঞেস করা হয়—কোন বিশেষ কারণটির কথা বলবেন?

মাজিদা রিফা
রৌদ্রময়ী

পঠিত : ১৩৩ বার

মন্তব্য: ০