Alapon

“প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের হাফপ্যান্ট পরা”




আমাদের সময়ই আমরা প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেদের হাফপ্যান্ট পরাটাকে অপছন্দের, অপমানের আর লজ্জাজনক কাজ হিসেবে দেখেছি।

কিন্তু হুট করেই এখন চিত্রটা বদলে গেলো। প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক-তরুণরাও গণহারে হাফপ্যান্ট পরে বাইরে বের হয়। ঘরেও কেউ কেউ বাবা-মা ভাইবোনদের সামনেও এমন অবস্থায় অবস্থান করে।

এখন পর্দা নষ্ট কেবল বেপর্দা নারীদের জন্যই হয় না, চোখের হেফাজত কেবল নারীদের থেকেই করতে হয় না। এখন পুরুষের থেকেও পুরুষ হয়ে শক্তপোক্তভাবে চক্ষু হেফাজত করে চলতে হয়। এখন খুব সহজেই ছেলেদের জন্যও ছেলেদের চোখের পর্দা নষ্ট হয়।[০১]

এই যে এমন বিষয়টা, এটাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য আবার গরিবের মালিকী ফিকহও জন্ম নিচ্ছে বাংলাদেশে।

এক সময় আমাদের উপমহাদেশের সম্মানিত দেওবন্দি আলিমদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে, অপমান অপদস্ত আর হেনস্তা করার তাড়না থেকে ব্যাপকভাবে প্রমোট করা হয়েছে সালাফি বা আহলে হাদিস আলিমদের।

কিন্তু এখন আবার সালাফি আলিমদের অনুসরণ করে কুল হওয়া যায় না। ড্যাশিং হ্যান্ডসাম হওয়া যায় না। অন্যদের চেয়ে নিজেকে খুব বেশি আলাদা করা যায় না। এখানেও কিছু ধর্মান্ধতা থাকে। এখানেও কিছু খ্যাতনেস থাকে।

এখানেও দাড়ি রাখাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। না রাখলে গুনাহ হবে বলে বক্তব্য উচ্চারিত হয়। গোড়ালির নিচে প্যান্ট পরলে, পীরিতি করলে গুনাহ হবে, ইত্যাদি বক্তব্য শোনা যায় এখান থেকেও।

আবার ফ্রি-মিক্সিংকে বৈধতার বয়ান, অপরিচিত নন মাহরাম নারীকে চুমু খাওয়ার পরে রাসূলুল্লাহ সা. শাস্তি দেননি, এমন বয়ানেরও দেখা মেলে না এখানে। মানে পর্দার বিধান নিয়ে দেওবন্দি তথা কওমি আলিমদের মতো এখানেও শিথিলতার সুযোগ পাওয়া যায় না।

আবার উম্মুল মুমিনীন আয়িশা রা. ও উম্মুল মুমিনীন খাদিজাতুল কুবরা রা.-কে নারীবাদের ফ্রেইমেও উপস্থাপন করার তোড়জোড় দেখা যায় না এদের মধ্যেও। অথবা বাদ্যযন্ত্র, ঢোল-তবলাকেও জায়েজ হিসেবে উপস্থাপন করেন না এরাও।

মাহরাম ছাড়া নারীদের দূর-দূরান্তের সফরকে নাজায়েজ মনে করেন এই মৌলভীরাও, এবং রাসূলুল্লাহ সা. এর কথাটাকেই এখানে উপস্থাপন করেন তারা। এক কথায় তারাও কেমন যেন প্রত্যেক বিষয়ে সংকীর্ণ সংকীর্ণ ফতোয়া প্রদান করেন। খুব পুরনো প্রাগৈতিহাসিক ও মৌলবাদী কথাবার্তা বলেন।

তাই এবার এই সংকীর্ণদের শায়েস্তা করতে হলেও গরিবের মালিকী ফিকহের দরকার। অথবা ওমর সুলাইমান আকরাম নদভী মাহমুদ গরমেজ ও জাসের আওদাহদের মতো কিছু ওয়েস্টার্ন সুইট শায়েখদের আমদানি করা দরকার। যারা সবকিছুকেই হালাল করার চেষ্টা করবে। যাদের ফতোয়াগুলো আমাদের নফসের অনুকূলে যাবে। যারা কাফির-মুশরিকদের বা পাশ্চাত্য সভ্যতার সবকিছুকেই ইসলামাইজেশন করার কাজ করবে।

আর এই দরকার থেকেই যখন তাদের আমদানি করা হচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা গোড়ালির নিচে প্যান্ট পরলে যেভাবে গুনাহ হবে না বলে ফতোয়া প্রশব করেন এবং করেছেন, তদ্রূপ হাফপ্যান্ট পরার কালচারকেও গুনাহমুক্ত একটা কালচার হিসেবে প্রমোট করবেন, মাহরাম ছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে জেন্ডার স্টাডিজে পিএইচডি করা জায়েজ বলেও ফতোয়া প্রদান করবেন; এটাই স্বাভাবিক। এছাড়াও একই রুমে একই সাথে একই প্রোগ্রামে নারী-পুরুষ ক্লাস করাটাকেও সহীহ্ ইসলামি কাজ হিসেবে ফতোয়া দান করাটা তো বহুকাল আগেই হয়ে গেছে। যা অনুসরণ করে আমরাও কুল মুসলিম সাজার প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছি!

[০১] পর্দা নষ্ট মানে ছেলেরাও ছেলেদের সতর দেখতে পারবে না। দেখলে গুনাহ হবে। ছেলেদের সতর হলো, নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত। এইটুকু ঢেকে রাখতেই হবে। আড়াল করতেই হবে। মানে হলো কোনো প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ যদি হাঁটুর ওপরে কাপড় তোলে, তাহলে এটা কবিরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত হবে। পুরুষের জন্য সতরের সীমানা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত নির্ধারণ করেছেন। তিনি বলেছেন—“নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত সতর। (দারুকুতনি: ৯০২)।” শরীরের এ অংশ স্ত্রী ছাড়া আর কারোর সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে খোলা হারাম এবং গুনাহের কাজ।

অন্যত্র রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “পুরুষের লেবাস যেন নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত অবশ্যই আবৃত রাখে। যেহেতু ওটুকু অঙ্গ পুরুষের লজ্জাস্থান।” (সহিহুল জামে: ৫৫৮৩)। অন্য একজন সাহাবি বর্ণনা করেছেন যে, তিনি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মজলিসে গিয়েছেন। তখন সেখানে ওনার রান খোলা ছিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা দেখে বললেন— তুমি কি জানো না, রান ঢেকে রাখার জিনিস। (তিরমিজি:২৭৯৬, আবু দাউদ: ৪০১৪)।

তার মানে কি সারা শরীর খালি রাখা যাবে? উঁহু, এটা তো কমন ভদ্রতা, ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন ছেলে মানুষ তো খালি গায়ে থাকার কথা চিন্তাও করতে পারে না। এইটুকু দীন-ধর্ম বাদেও মানুষ তার কমনসেন্স দিয়ে উপলব্ধি করতে বা বুঝতে পরে। কোনো সভ্য ভদ্রলোক এটা করে না। কিন্তু করলে শরীয়তের আলোকে ফরজ তরকের গুনাহ হবে না। কিন্তু এটিও মাকরুহ। অপছন্দনীয়।

~রেদওয়ান রাওয়াহা
t.me/RedwanRawaha

পঠিত : ১৮০ বার

মন্তব্য: ০