Alapon

১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকা লোপাট : ধ্বংসের দাড়প্রান্তে ব্যাংক ব্যবস্থা


যারা অর্থনীতি এবং ব্যাাংকিং ব্যবস্থা সম্পর্কে তেমন জ্ঞান রাখেন না, তারাও দেশের অর্থনীতির অবস্থা দেখে জেনেছেন এবং বুঝতে পারছেন যে, ব্যাংকিং সেক্টরকে লোপাট এবং ধ্বংস করা হচ্ছে মহা সমারোহে। দেশের সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে লাভজনক ব্যাংটিকে ফিল্মি স্টাইলে দখলে নেয়ার পর এ ব্যাংকটির প্রতিষ্ঠার সাথে জড়িত স্পন্সর এবং পরিচালকদেরকে শেয়ার বিক্রি করতে বাধ্য করা হয়েছে, পুরাতন দক্ষ, সৎ, একনিষ্ঠ এবং আন্তরিক ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের নানা অজুহাতে চাকুরিচ্যুৎ করে একদল দলবাজ, অথর্ব, অযোগ্য, দুর্নীতিবাজ লোককে পাইকারী হারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একজন ব্যাক্তি এবং পরিবারের দখলে নেয়া আরো ছয়টি ব্যাংককে একই স্টাইলে ধ্বংসের কাজ চলছে ধারাবাহিকভাবে।

অর্থনীতি ধ্বংস প্রক্রিয়ায় ব্যাংকগুলোকে এবং সরকারের প্রচ্ছন্ন ছত্রছায়ায় ব্যাংক ধ্বংসের যে কার্যক্রম চলমান তার একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন উঠে এসেছে সি পি ডি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে ‘‘বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে বিভিন্ন আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাত থেকে লোপাট হয়েছে ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা।শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকালে ধানমন্ডিতে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২৩-২৪: চলমান সংকট ও করণীয়’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে ঋণ, অস্তিত্ববিহীন প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণসহ নানা ধরনের আর্থিক অনিয়ম হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকে কেলেঙ্কারি বা অনিয়ম হয় সেগুলো অফিসিয়াল সূত্রে পাওয়া যায় না। সেগুলো সংবাদমাধ্যমে আসে। গণমাধ্যমকর্মীরা সেগুলো হয়তো অফিসিয়াল সূত্রেই আনেন। এগুলোকে কম্পাইল করে ২০০৮-২০২৩ সাল পর্যন্ত গণমাধ্যমে ২৪টি ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে। এসব ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশাল এই অর্থ দিয়ে কী হতে পারে, সেটি আপনারা হিসাব করতে পারেন। আপনারা হিসাব করতে পারেন আমাদের রাজস্ব ঘাটতি কত? সামাজিক নিরাপত্তা খাতে কত ব্যয় হচ্ছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে কত ব্যয় করছি। এ পরিমাণ দিয়ে আমরা কী করতে পারতাম।
তিনি আরও বলেন, এই পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ হচ্ছে, অপচয় হচ্ছে; ব্যাংকে যে টাকা সেটি জনগণের টাকা, সেটি কীভাবে ব্যয় হচ্ছে তা চিন্তার বিষয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকিং খাতে নিয়মকানুন বাস্তবায়ন করা ও সংস্কার করা জরুরি।’’

বাংলাদেশে বর্তমানে যে একদলীয় দুঃশাসন চলছে, এই দুঃশাসনকালে দেশের প্রতিটি সেক্টরকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতি কোনো কিছুরই প্রাতিষ্ঠানিক কোনো মর্যাদা, সাতন্ত্র বাকী রাখা হয়নি। সর্বত্র একদল দলদাস বা দলীয় সেবাদাস লোকদের দ্বারা পূর্ণ করে ফেলা হয়েছে। এ সব দলীয় সেবাদাস লোকেরা এ সব প্রতিষ্ঠানকে অত্যন্ত পারঙ্গমতার সাথে সব কিছু ধ্বংস করে দেয়ার কাজে তীব্র প্রতিযোগিতায় লিপ্ত আছে। দেশের এ সব প্রতিষ্ঠানকে যে যত বেশি ধ্বংস করতে পারে সে যেন তত বেশি সরকারের আপন এবং পরমপ্রিয় লোক। অর্থনীতি ধ্বংসের খাদের কিনারায়। রিজার্ভ ৪১ থেকে তা এখন নভেম্বর মাসে আইএমএফ এর প্রস্তাবিত বিপিএম৬ পদ্ধতি অনুসরণ করে করা হিসাব অনুযায়ী, রিজার্ভ ১৯.৫২ বিলিয়ন ডলার। শুধুমাত্র একজন ব্যাক্তিকে সাইনবোর্ড হিসেবে বসিয়ে দেশের লাভজনক ছয়টি ব্যাংককে দখল করে সব কয়টি ব্যাংককে খলি করে ফেলা হয়েছে। এই লুটেরা ব্যাক্তি এবং পরিবার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে শুধুমাত্র এই ছয়টি ব্যাংক থেকে।
চট্টগ্রামের এই ব্যাংক লুটেরার বিরুদ্ধে তদন্তের জন্য হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হলে তা স্থগিত করে রাখা হয়েছে অর্থাৎ ব্যাংক লুটোরর বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত করা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট থেকে অর্থ গায়েব হয়েছে, স্বর্ণ গায়েব হয়েছে তার কোনো তদন্ত রিপোর্ট এখন পর্যন্ত দেশের জনগণ জানতে পারেনি। লুটপাট আর লোপাটের মধ্যে চলছে দেশের অর্থনীতি। দেশের বিশাল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে যাতে ঘুরেফিরে বার বার নাম আসে সরকারী দলের নেতা কর্মীদের। প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন যে বি এন পি আগামী মার্চে দেশে দুর্ভিক্ষ আনার কাজ করেই ছাড়বে। ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ আর দুর্ভিক্ষ আনবে বি এন পি? এটা শুনলে পাগলও হাসবে। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলার অর্থ অত্যন্ত পরিস্কার। তারা যেভাবে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করছে তাতে বোঝা গেছে যে আগামী দিনে আমাদের জন্য ভয়াবহ দুর্দিন অপেক্ষা করছে। দেশ, দেশের জনগণ, দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, আইন, গণতন্ত্র, মানবতা, মানবাধিকার, বিচার ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা যে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তাকে আবার সঠিক লাইনে ফিরিয়ে আনতে হলে সর্বশ্রেণির মানুষকে এখন একটিই আওয়াজ তুলতে হবে, যে বর্তমান দেশ ধ্বংসকারী রেজিমের পতন চাই। ভিন্নভাবে, বিচ্ছিন্ন দাবী বা আন্দোলন দিয়ে এই ধ্বংস ও প্রলয় ঠেকানো যাবে না।

পঠিত : ১৬৫ বার

মন্তব্য: ০