Alapon

ট্রান্সজেন্ডার আন্দোলনঃ একটি বিকৃত মন-মানষিকতার বহিঃপ্রকাশ



আসলে আমি দিনকে দিন অবাক হচ্ছি যে মানুষ আধুনিকতার নামে কতটা নিচে নামতে শুরু করেছে। এবার সমকামিতার সমার্থক শব্দ মানে ট্রান্সজেন্ডার দেশে প্রবেশ করেছে! শুধু প্রবেশই করেনি, খুললাম খুল্লা ভাবে চলাচল করার জন্য নাকি একবারে আন্দোলন শুরু করেছে। সত্যিই বিষয়টা ভাববার বিষয়!

এই ধরনের নোংরামির বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করতে হবে এবং আমি আমার এই লেখার মাধ্যমে সেটাই জানাচ্ছি। কোন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ এমন বিষয়কে সমর্থন করতে পারে না - পারে না - পারে না।

আপনি জানেন ট্রান্সজেন্ডার কি? অনেকে এর উত্তরে বলবেন হিজড়ারাই ট্রান্সজেন্ডার। আদতে কিন্তু তা নয়। ট্রান্সজেন্ডার একপ্রকার মানষিক বিকৃতি, যা যেকোন ভাবেই হোক মানুষের ভেতরে প্রবেশ করে। আমি অনলাইনে স্টাডি করে যা দেখলাম, ট্রান্সজেন্ডার একপ্রকার হিপোক্রেসি ছাড়া আর কিছুই না। এদের সাথে হিজড়াদের গুলাবেন না। ওরা আলাদা।

একজন ডাক্তারের আর্টিকেল থেকে নেয়াঃ " হিজড়া আর ট্রান্সজেন্ডার কোনোভাবেই এক নয়। এই দুই শ্রেণির মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। মেডিকেলের পরিভাষায় হিজড়াদের লিঙ্গকে বলে ইন্টারসেক্স। এই লিঙ্গের মানুষেরা হারমাফ্রোডাইট নামেও পরিচিত। এদের শরীরে গঠনগতভাবে পুরুষ এবং মহিলা জননাঙ্গ এবং হরমোনের মিশেল থাকে, তাই এককভাবে তাদের পুরুষ বা মহিলা লিঙ্গে বিভক্ত করা যায় না। অন্যদিকে, ট্রান্সজেন্ডাররা হলো সিসজেন্ডারের বিপরীত। সিসজেন্ডার টার্মটা ব্যবহার করা হয় তখন যখন একজন পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে পুরুষ হিসেবে ভাবে বা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। একই টার্মটি সিসজেন্ডার নারীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ট্রান্সজেন্ডারদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা সম্পূর্ণই উল্টো। একজন মানুষ যখন পুরুষ জননাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে নারী হিসেবে পরিচয় দিতে এবং ভাবতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তখন তাদের আমরা ট্রান্সজেন্ডার নারী বলি। একইভাবে একজন নারী জননাঙ্গ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে পরবর্তিতে নিজেকে পুরুষ হিসেবে দাবি করলে তাকে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষ বলা হয়।"

বুঝাই যাচ্ছে, ট্রান্সজেন্ডার জন্মগত কোন বিষয় নয়। এটা মানষিক বিকৃতি বৈ আর কিছুই না। পশ্চিমারা এই বিষয়টাকে ঢালাও ভাবে প্রচার করছে। তাদের স্কুল কলেজে এসব পড়ানো হয়।

মূলত ট্র্যান্সজেন্ডারবাদ বলে, একজন শিশু জন্মানোর পর তাকে যে ছেলে বা মেয়ে বলা হয়, তা পুরোটাই হয় অনুমানের ভিত্তিতে। ডাক্তাররা আন্দাজ করে ছেলে বা মেয়ে পরিচয় ‘বরাদ্দ’ করে দেয়। কিন্তু পরে একজন শিশু ‘জন্মকালে নির্ধারিত’ পরিচয়ের বদলে অন্য কোনো পরিচয় বেছে নিতে পারে। জন্মের পরপর যাকে ছেলে ধরে নেওয়া হয়েছিল, সে একসময় গিয়ে নিজেকে মেয়ে বলতে পারে। শরীর যেমনই হোক না কেন, তাকে তখন মেয়েই ধরে নিতে হবে। কারণ কিছু মানুষ ‘ভুল দেহে জন্ম নেয়’। আপনারাই বলেন, এমনটা কি আদৌ ঘটে?

সম্প্রতি বাংলাদেশের কিছু মানুষ নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার বলে দাবি করেছে। যেমন হো চি মিন সহ আর একজন। ওর নাম আমার মনে নেই।

একটা বিষয় স্পষ্ট, ট্রান্সজেন্ডারের সাথে শারীরিক সমস্যার কোন সমস্যা নেই। সমস্যা হলো মানষিক। অনলাইনে ট্রান্সজেন্ডার হো চিমিনের একটা বক্তব্য দেখলাম, " আমার শরীরটা পুরুষের ছিল, কিন্তু ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে নারী ভাবতাম। অবশেষে অস্ত্রোপচার করে পুরুষ
থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই। এখন আমি শারীরিক ও
মানসিকভাবে একজন নারী। ‘অস্ত্রোপচারের আগে আমার শরীরটা ছিল পুরুষের। নিজের আইডেন্টিটি বা পরিচিতির জন্য এবং নিরাপত্তার জন্যও অস্ত্রোপচার করাটা জরুরি ছিল…" [সূত্র: অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই: হো চি মিন ইসলাম, দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ৭, ২০২৩ ] (https://www.prothomalo.com/bangladesh/jretv8gk5i)। এই কথার মাধ্যমে ১০০% নিশ্চিত হওয়া গেলো ট্রান্সজেন্ডার শারীরিক কোন সমস্যা নয়। এটা মানষিক সমস্যা।

আমি আরো কিছু জিনিস তুলে ধরছি, যা পড়লে আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারবেন যে তারা সরাসরি সমকামিতাকেই প্রমোট করছে। যা স্পষ্টতই ইসলাম বিরোধী।

-- ট্রান্সজেন্দারবাদ তার অবস্থানকে ব্যাখ্যা করার জন্য চারটি থিউরেম ব্যবহার করে––
১। বায়োলজিকাল সেক্স (Biological Sex) বা জন্মগত লিঙ্গ
২। সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন (Sexual Orientation) বা প্রণয়বোধ ও
যৌন আকর্ষণ
৩। জেন্ডার
৪। জেন্ডার আইডেন্টিটি (Gender Identity) বা মনস্তাত্ত্বিক
লিঙ্গবোধ/’মনের লিঙ্গ’)

এই বিষয় গুলো থেকে আমি দুটি জিনিস ব্যাখ্যা করছি, যা স্পষ্টতই সমকামিতাকে সমর্থন। সব গুলো বিষয় আমি বলতেও চাচ্ছি না, আর রুচি বোধও নেই।

১ নং এর বায়োলজিকাল সেক্স বা জন্মগত লিঙ্গ হলো স্রেফ দেহের বর্ণনা। মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য, যেমন ক্রোমোসোম, যৌনাঙ্গ, হরমোন ইত্যাদি মিলে তার জন্মগত লিঙ্গ ঠিক হয়। কিছুমানুষের পুরুষাঙ্গ থাকে, কিছুমানুষের যোনী থাকে। কিন্তু এগুলো দিয়ে; দেহ দিয়ে মানুষের পরিচয় ঠিক হয় না।

২ নং এ সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন হলো মানুষের যৌন রুচি বা আকর্ষণ। যৌন আকর্ষণ বিভিন্ন রকমের হতে পারে। এক্ষেত্রে ভালোমন্দ, ভুল কিংবা সঠিক বলে কিছু নেই। কেউ বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে, কেউ সমলিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে, কেউ আকৃষ্ট হতে পারে উভয়ের প্রতি। আবার কারো মধ্যে হয়তো যৌনতার কোনো আকাঙ্ক্ষাই নেই। যৌন রুচি একটা বর্ণালীর মতো। এখানে আছে অনেক রঙ। পুরুষ হলেই নারীর প্রতি বা নারী হলেই পুরুষের প্রতি আকর্ষণবোধ করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আর এটাই হলো সেই রেইনবো। যেই পতাকাকে আমরা ঘৃণা করি।

আপনারা স্পষ্টতই বুঝতে পারছেন এটা সরাসরি সমকামিতাকে সমর্থন। আর বাংলাদেশের মতো মুসলিম প্রধান দেশে এসব বিকৃত মানষিকতার উত্থাণে বিদেশি কারো ইন্ধোন আছে কি না সেটাও দেখতে হবে। এমন সামাজিক অবক্ষয় মেনে নেয়া যায় না। এই সমকামিতাকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে।

ইসলামে সমকামিতা ইসলামে হারামই নয় বরং এটি অভিশপ্ত অপরাধ। যে অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআলা কাওমে লুত তথা লুত আলাইহিস সালামের অপরাধী জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন, “...... লুত যিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বললেন, তোমরা কি এমন মারাত্মক অশ্লীল কাজ করছো যা ইতিঃপূর্বে বিশ্বের আর কেউ করে নি। তোমরা স্ত্রীলোকদেরকে বাদ দিয়ে পুরুষ কর্তৃক যৌন উত্তেজনা নিবারণ করছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালংঘনকারী সম্প্রদায়”। [সূরা আল-আ‘রাফ, আয়াত: ৮০-৮১]

" অতঃপর আমি তাঁকে ও তাঁর পরিবার পরিজনকে বাঁচিয়ে দিলাম, কিন্তু তার স্ত্রী। সে তাদের মধ্যেই রয়ে গেল, যারা রয়ে গিয়েছিল। আমি তাদের উপর প্রস্তর বৃষ্টি বর্ষণ করলাম।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৮৩)

‘অতএব দেখ! গোনাহগারদের পরিণতি কেমন হয়েছে।’ (সুরা আরাফ : আয়াত ৮৪)

আল্লাহ তা‘আলা অন্য আয়াতে সমকামীদেরকে যালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “ফিরিশতারা (ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে) বললেন, আমরা এ জনপদবাসীদেরকে ধ্বংস করে দেবো। এর অধিবাসীরা নিশ্চয় যালিম”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৩১]

বর্তমান যুগে সমকামের বহুল প্রচার ও প্রসারের কথা কানে আসতেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে ভবিষ্যদ্বাণীর কথা স্মরণে এসে যায় যাতে তিনি বলেন, “আমি আমার উম্মতের ওপর সমকামেরই বেশি আশঙ্কা করছি।” তিরমিযী, হাদীস নং ১৪৫৭; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৬১১;

ফুযাইল ইবন ইয়ায রহ. বলেন, “কোনো সমকামী আকাশের সমস্ত পানি দিয়ে গোসল করলেও সে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অপবিত্রাবস্থায়ই সাক্ষাৎ করবে”। দূরী/যম্মুল্লিওয়াত্ব: ১৪২

বাংলাদেশের মতো এমন মুসলিম প্রধান দেশে এমন সামাজিক অবক্ষয় মূলক কাজ মানি না। আমি আমার অবস্থান থেকে এই আর্টিকেল লিখে প্রতিবাদ করছি। ওয়ামা-আলাইনা ইল্লাল বালা-গুল মুবীন।

সমকামিতার ফেতনা থেকে আল্লাহর দরবারে আশ্রয় চাই এবং দোয়া করি আল্লাহ যেন এই জাতিকে এই ফেতনা থেকে রক্ষা করেন। আমিন।

পঠিত : ২৪০ বার

মন্তব্য: ০