Alapon

সার্টিফিকেট যথেষ্ট নয়, ভালো মানুষ হতে হবে। পর্ব :০২।

গত পর্বের পর

তবুও তাদের এই অবস্থা হবার কারণ হলো তারা শিক্ষার পরিচয় জানে না।শিক্ষা কে তারা নিচক সার্টিফিকেট পাওয়ার মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করে। যার কারণে সার্টিফিকেট অর্জন ঠিকই হয় কিন্তু নৈতিকতা অর্জন হয় না।
তাই আমাদের কে জানতে হবে শিক্ষার পরিচয় সম্পর্কে।
শিক্ষার পরিচয়:বিভিন্ন ভাষায় শিক্ষার পরিচয় তুলে ধরা হলো।
★বাংলা ভাষায় শিক্ষা শব্দটি "সাস"ধাতু থেকে নির্গত।যার অর্থ শাসন করা বা উপদেশ দেয়া।
★আরবি ভাষায় শিক্ষা শব্দের সংজ্ঞায়নে তিনটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়।প্রথমত তা'লিম।যার অর্থ জ্ঞান অন্বেষণ করা।দ্বিতীয়ত তা'দিব।যার অর্থ পরিমার্জিত,পরিশীলিত।তৃতীয়ত তারবিয়াত।যার অর্থ বৃদ্ধি করা,লালন করা।শব্দটির মাধ্যমে স্রষ্টার সাথে ব্যক্তির আধ্যাত্নিক ও নৈতিক চেতনার বৃদ্ধি ও লালন করা বুঝায়।
★ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা শব্দের প্রতিশব্দ হলো Education.যার শাব্দিক অর্থ প্রতিপালন ও শিক্ষা দেয়া।
পরিভাষায় শিক্ষার্থীর মধ্যকার ঘুমন্ত প্রতিভা বা সম্ভাবনার পথ নির্দেশনায় শিক্ষা।আরো সহজ ভাবে বলা যায় " সুপ্ত প্রতিভা বিকাশ সাধনের নামই শিক্ষা"।
শিক্ষার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিভিন্ন মনীষীরা বলেন:
★সক্রেটিসের মতে,"শিক্ষা হলো সত্যের বিকাশ সাধন ও মিথ্যার অপনোদন"।
★এরিস্টটলের মতে,"সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হলো শিক্ষা"।
★ইংরেজি কবি জন মিল্টনের মতে,"Education is the harmonious development of mind,body and soul"
★বিশিষ্ট দার্শনিক আল্লামা ইকবালের মতে,"মানুষের খুদির বা রুহের উন্নয়নই হলো শিক্ষা"।
★ভাষা সৈনিক অধ্যাপক গোলাম আযমের মতে,"যে শিক্ষা আত্মা ও দেহকে এক সুন্দর ভারসাম্য প্রদান করে এ জগতের রুপ-রস-গন্ধকে নৈতিকতার সীমার মধ্যে উপভোগ করার যোগ্যতা দান করে সে শিক্ষাই প্রকৃত শিক্ষা"।
★হ্যারসন হর্ন বলেন, "শিক্ষা হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে মুক্ত সচেতন মানবসত্ত্বাকে সৃষ্টিকর্তার সাথে উন্নত যোগসূত্র স্হাপনের একটি চিরন্তন প্রক্রিয়া"।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা কি মানুষ কে ভালো বানায়?
এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে আমাদের কে বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করতে হবে।প্রত্যেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের কে মানুষের মতো মানুষ করতে সর্বোচ্চ কষ্ট শিকার করে। হাঁড় ভাঙ্গা পরিশ্রম করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করে। নিজেরা সুন্দর ভাবে জীবন পরিচালনার স্বপ্ন ভুলে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুন্দর করার জন্য মাথার ঘাম পায়ে পেলে।তারা সার্বক্ষণিক স্বপ্ন দেখে নতুন দিগন্তের।তাদের সন্তানরা পড়ালেখা শিখে তাদের কে সুখে রাখবে।জাতিকে আশার আলো দেখাবে।সমাজে সন্তানের জন্য তাদের কে মানুষ সম্মান করবে।এরকম হাজারো স্বপ্ন দেখে যাচ্ছে প্রত্যেক বাবা-মা।কিন্তু বাস্তবে কি এসব স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে?না স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে।দেশের বৃদ্ধাশ্রম গুলোতে যারা নিবাসী তাদের সন্তানরা কিন্তু উচ্চ শিক্ষিত।পিতার জানাযায় আসতে অস্বীকৃতি জানানো ছেলেটা শিল্পপতি।পিতা-মাতা কে জবাই করে হত্যা করা মেয়েটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থী।চিকিৎসার অভাবে সরকারি হাসপাতালে কাতরানো বেওয়ারিশ রোগীর ছেলে-মেয়ে প্রশাসনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা।প্রতিদিন টেলিভিশনের পর্দায়,সংবাদ পত্রের পাতায় এরকম অহরহ ঘটনার নায়ক-খলনায়করা প্রচলিত শিক্ষায় শিক্ষিত সার্টিফিকেটধারীরা।এখন প্রশ্ন হলো শিক্ষা ব্যবস্থাতো বড় বড় ডিগ্রি প্রদান করে।ভালো সার্টিফিকেট দেয় তবুও আমাদের কে এরকম নির্মম ঘটনাগুলোর নীরব সাক্ষী হতে হয় কেন?এর উত্তরে বলা যায় এই জাগতিক শিক্ষার মধ্যে নৈতিকতার সবক নেয়।নামে মাত্র ধর্মীয় শিক্ষার লুকোচুরি দেখা যায়।মানুষের মধ্যে নৈতিকতাবোধ জাগ্রত করতে হলে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।শুধু সাটিফিকেট অর্জনের জন্য জাগতিক শিক্ষা গ্রহন করলে বা সন্ধানেকে নৈতিকতাহীন এই শিক্ষা দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লে বাবা-মাদের শেষ বয়সে আশ্রয় নিতে হবে বৃদ্ধাশ্রমে।পাওয়া থাক দূরের কথা!কখনোই আশাও করাও যাবে না নৈতিকতাহীন সন্তান থেকে কাঙ্খিত উত্তম আচরণ।তাই সন্তানদেরকে নৈতিকতা শিক্ষা দিতে হলে ধর্মীয় শিক্ষা দিতে হবে।ধর্মীয় শিক্ষা না দিলে এর ফলাফল কি পাওয়া যাবে তা সম্পর্কে সুন্দর ভাবে বলেছেন প্রখ্যাত মনিষী Stanlly Hall.তিনি বলেন,"তুমি যদি তোমার সন্তানকে ৩টি R(Reading.Writing.Arithmetic) শিক্ষা দাও কিন্তু চতুর্থ R(Religion)শিক্ষা না দাও তাহলে তুমি পাবে পঞ্চম R(Rascal)তথা বদমাশ।
তাই বলা যায় ধর্মীয় শিক্ষা বর্জিত জাগতিক শিক্ষা ব্যবস্থা কখনোই মানুষকে ভালো বানায় না।
নৈতিকমূল্যবোধ সৃষ্টিতে ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব:-
নৈতিকতার চরম অভাবের কারণেই আজ সমাজের সর্বত্রই অশান্তি বিরাজ করছে।মানুষ নৈতিকমূল্যবোধ হারিয়ে উম্মাদ হয়ে গেছে।মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পশুত্বের শৃঙ্খল গ্রহণ করেছে।যুগের সাথে তাল মিলিয়ে শিক্ষািত হচ্ছে ঠিকই কিন্তু ভালো মানুষ হচ্ছে না।তাহলে বর্তমান সভত্যার গতি কোন পথে যাচ্ছে?এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য কি প্রেসক্রিপশনের আলোকে জীবন সাজাতে হবে?এইসব প্রশ্নের উত্তরের জন্য আমাদেরকে অতীতের ইতিহাস জানতে হবে।পৃথিবীর সব অর্জন,অন্ধকারের আলোকবর্তিকার মূলে ছিলেন জ্ঞানীরা।মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আ.কে দুনিয়াতে প্রেরনের সময় শিক্ষিত করেই পাঠিয়েছেন।আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:-অতঃপর আল্লাহ‌ আদমকে সমস্ত জিনিসের নাম শেখালেন তারপর সেগুলো পেশ করলেন ফেরেশতাদের সামনে এবং বললেন, “যদি তোমাদের ধারণা সঠিক হয় (অর্থাৎ কোন প্রতিনিধি নিযুক্ত করলে ব্যবস্থাপনা বিপর্যস্ত হবে) তাহলে একটু বলতো দেখি এই জিনিসগুলোর নাম?”(সুরা আল বাকারা-৩১)
(চলবে... )

পঠিত : ১৬৭ বার

মন্তব্য: ০