Alapon

নামাজে টুপি পরা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?




নামাজে টুপি পরিধান করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? টুপি ছাড়া কি নামাজ হবে? নামাজের মধ্যে যদি মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়, তাহলে কি সেটি উঠিয়ে আবার পরিধান করতে হবে?- নামাজের সময় টুপি পরিধান নিয়ে আমাদের মধ্যে এরকম নানা প্রশ্ন। সংক্ষেপে প্রশ্নগুলোর সমাধান দেওয়া হলো-

টুপি ইসলামী সংস্কৃতির অংশ এবং একইসঙ্গে তা মাথার সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। রাসুল (সা.) এবং সাহাবায়ে-কেরাম (রা.) সবসময় টুপি পরতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে, পৃষ্ঠা : ২০২)

উপরোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যে টুপি পরিধান করা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সুন্নাত। এজন্য খালি মাথায় নামাজ আদায় করা সুন্নাত ও ইসলামি আদবের পরিপন্থী। তবে কোনও ওজর কিংবা প্রতিবন্ধকতার কারণে নামাজের সময় টুপি পরিধান করতে না পারলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যদি খালি মাথায় নামাজ আদায় অভ্যাসে পরিণত হয়, সেটি অনুত্তম।

আর নামাজের মধ্যে যদি কারও মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়, তাহলে সম্ভব হলে এক হাত দিয়ে টুপিটি উঠিয়ে আবার মাথায় দেওয়া উত্তম। যুহাইর (রহ.) বলেন, ‘আমি প্রখ্যাত তাবেয়ি আবু ইসহাক সাবিয়ীকে দেখেছি, তিনি আমাদের নিয়ে নামাজ পড়েছেন। তিনি মাটি থেকে টুপি উঠিয়ে মাথায় পরেছেন।’ (তাবাকাতে ইবনে সাদ : ৬/৩১৪)

নামাজে টুপি পরিধান প্রসঙ্গে আল্লামা নিজামুদ্দিন (রহ.) লেখেন, ‘পাগড়ি (অথবা টুপি ইত্যাদি) থাকা অবস্থায় খালি মাথায় নামাজ আদায় করা মাকরুহ। আর এই খালি মাথায় থাকাটা যদি গাফলতি কিংবা নামাজকে গুরুত্বহীন মনে করার কারণে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু টুপিবিহীন খোলা মাথায় নামাজ আদায় যদি খুশুখুজু (আল্লাহর ভয় ও তাঁর প্রতি বিনয়নম্রতা) প্রকাশের জন্য হয়, তাহলে কোনও সমস্যা নেই; বরং এটি প্রশংসনীয়।’ (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি : ১/১০৬)

আল্লামা আলাউদ্দিন হাসকাফি (রহ.) লিখেছেন, ‘যদি গাফলতির কারণে খোলা মাথায় নামাজ আদায় করা হয়, তাহলে তা মাকরুহ। কিন্তু যদি এটি হয় অক্ষমতা কিংবা কোনও প্রতিবন্ধকতার কারণে, তাহলে কোনও আপত্তি নেই। তবে যদি নামাজের ব্যাপারে হালকা মনোভাবের কারণে টুপি ছাড়া তা আদায় করা হয়, তাহলে এটি কুফরি।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আর যদি নামাজ চলাকালীন মাথা থেকে টুপি পড়ে যায়, তাহলে সেটি উঠিয়ে আবার মাথায় দেওয়া উত্তম। তবে এক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে- টুপি এমনভাবে ওঠানো যাবে না, যা ‘আমলে কাসির’ বলে গণ্য হয়। পরিস্থিতি এরকম হলে নিচ থেকে টুপি না ওঠানোটাই কাম্য।’ (রদ্দুল মুহতার : ২/৩৫১)

আমলে কাসির কী?
নামাজ ভঙ্গের যেসব কারণ রয়েছে, তার একটি হলো- আমলে কাসির। কারো নামাজে আমলে কাসির ঘটলে নামাজ নষ্ট হয়ে যায়। এর কারণে আবার নতুন করে নামাজ পড়তে হয়। ফকিহদের মতে- ‘আমলে কাসির’ হলো- নামাজে এমন নড়াচড়া, যেটিকে নামাজের বাইরের কেউ দেখলে মুসল্লি সম্পর্কে তার নিশ্চিত ধারণা জন্মে যে, এই মুসল্লি এখন আর নামাজে নেই। পক্ষান্তরে যদি নামাজের বাইরের কেউ মুসাল্লিকে দেখে তার সম্পর্কে নামাজরত বলে ধারণা করে, তাহলে এমতাবস্থায় মুসল্লির কাজকে ‘আমলে কালিল’ বলা হবে এবং এতে নামাজ নষ্ট হয় না। (হিদায়া : ১/১৪১, আল-বাহরুর রায়িক :২/১১-১২ ও ফাতাওয়া আলমগীরী : ১/১০১)

পঠিত : ১৯৭ বার

মন্তব্য: ০