Alapon

ইমাম হাসান আল বান্নার আজ ৭৫ তম শাহদাতবার্ষিকী


১৯৪৯ সাল। কায়রো।

এই দিন মিশরের কায়রোতে ইয়াং মুসলিমস এসোসিয়েশানের একটি মিটিংয়ে শায়খ হাসান আল বান্না মেহমান বক্তা হিসেবে আসেন। মিটিং শেষে তিনি বের হন বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে।

রাস্তায় নেমে তিনি ট্যাকসীতে উঠতে যাচ্ছিলেন এমন সময় আততায়ীর গুলি এসে বিঁধে তাঁর বুকে। রক্ত রঞ্জিত দেহ নিয়ে শায়খ হাসানুল বান্না ঢলে পড়েন। সংগীরা তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহর দ্বীনের মুজাহিদ আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে চলে যান।

লাশ পাঠানো হয় তাঁর বাসায়। পুলিশ এসে বাড়ির চারদিক ঘেরাও করে ফেলে। নিকট আত্মীয় ছাড়া আর কাউকে ঢুকতে দেয়া হলোনা তাঁর বাড়িতে। ট্যাংক বাহিনী ও সাঁজোয়া বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীসহকারে তাঁর লাশ কবরস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ দূরে অবস্থান করে অশ্রু বিসর্জন করতে থাকে। সরকার তাদেরকে তাঁর জানাযা ও দাফন কাজে অংশগ্রহণ করতে দিলো না।

বিংশ শতাব্দির শুরু থেকেই একের পর এক ভূমি হারাতে থাকে মুসলিমরা। সংকীর্ণ হতে থাকে মুসলিম বিশ্ব। এমন এক মুহুর্তে আবির্ভাব হয় ইমাম হাসান আল বান্নার। তিনি মুসলিম যুব সমাজকে জাগাতে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু তার এই কাজের বাধা হয়ে দাঁড়ায় মুসলিম শাসকগোষ্ঠী। যারা ইংল্যান্ডের স্বার্থকেই বেশি দেখতো মুসলিম এবং মিশরিয়দের স্বার্থের চাইতে। আর তারা এমন কাজ করবে না কেন, কারণ ব্রিটিশদের তাবেদারি করেই তারা ক্ষমতায় আছে।

হাসান আল বান্না আরব ভূমির ইসলামী রেনেসাঁর সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলেমিনের প্রতিষ্ঠাতা। মিশর থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়ে ইখওয়ানুল মুসলেমিনের বিপ্লবী বার্তা ছড়িয়ে পড়ে আরব, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে। পতনের অপেক্ষায় থাকা মুসলিমরা তাদের আত্মপরিচয় নিয়ে নতুনভাবে বেঁচে থাকার প্রত্যয় পায়। মুসলিম সমাজের এই জাগরণ স্বাভাবিকভাবেই চক্ষুশূল হয় ব্রিটিশ ও তাদের দালালদের। নানানভাবে ইমাম হাসান আল বান্নাকে হেনস্তা করতে চায় তারা। কিন্তু কিছুতেই তাঁকে দমাতে পারেনি শাসকগোষ্ঠী। বার বার কারা নির্যাতন লেগেই ছিল। অবশেষে ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি ইমামকে তারা খুন করে।

আজ ১২ ফেব্রুয়ারি। শহীদ হাসান আল বান্নার শাহদাতবার্ষিকী। ৭৫ বছর আগে তারা ইমামকে খুন করে মিশর থেকে মুছে দিতে চেয়েছিলো। কিন্তু আল্লাহ তাঁর পথে জীবন দেয়া শহীদকে বাঁচিয়ে রাখেন। ইমাম হাসান আল বান্না তাই আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছেন সারা পৃথিবীতে। আজ পুরো পৃথিবীতে তাঁর থেকে প্রেরণা নিয়ে ইসলামী আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে লাখো যুবক।

পঠিত : ২৪১ বার

মন্তব্য: ০