Alapon

পিলখানা ট্র্যাজেডি ও ভোঁতা সীমান্ত প্রহরী

২০০৯ সালের ২৫ এবং ২৬ ফেব্রুয়ারীর কথা মনে পড়লে সচেতন নাগরিকদের বুকের ভিতর অজানা ব্যথা অনূভব হয়। যে ব্যথা সারানোর ঔষধ নেই কোথাও!
সেদিন কি ঘটেছিল সবার জানা আছে নিশ্চয়,তবুও একটু পেছনে ফিরে দেখা যাক।ঘটনা মঞ্চায়ন হয়েছিল ধানমন্ডি এলাকার পিলখানায়।যা দেশের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে পরিচিত তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তর। প্রতিদিনের মতো সেদিনের সকালেও দেশসেবার ব্রত নিয়ে নিজ পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে এসেছিল নিহত হওয়া সামরিক কর্মকর্তারা। সেই সাথে নিজ কাজের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিল মারা যাওয়া বেসামরিক নাগরিকরাও। তারা কি জানতো পরিবারের সাথে এটাই শেষ সাক্ষাৎ?
পিলখানায় চলছিলো বিডিআর সপ্তাহ। বার্ষিক আয়োজন। দেশের ক্ষমতায় ছিল স্বাধীনতার স্বপক্ষের স্বঘোষিত শক্তি হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগ। তারা ক্ষমতায় আসার তিনমাসের মধ্যকার এবং সে মেয়াদের প্রথম দেশের বিপর্যয় এটি। যাকগে! এতকিছুর আলাপের হিসাব নিকাশ মেলানোর সময় একদিন আসবে। আমরা ফিরে যাচ্ছি সীমান্ত নিরাপত্তার ইস্যুতে।
বাংলাদেশের বর্তমান সীমান্ত নিরাপত্তা ২০০৯ সালের পূর্বেকার সীমান্ত নিরাপত্তার সাথে আকাশপাতাল পার্থক্য। পাখির মতো গুলি করে হত্যা,মাদক,চোরাচালান, বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশী নির্যাতন সহ সীমান্তে যত অপকর্ম হয় সেসব আগের তুলনায় বেড়ে গেছে অনেক বেশি। বিডিআর বিদ্রোহের পূর্বে ওপার থেকে বিএসএফ কিছু করলে তার শক্ত জবাব দেওয়া হতো। আর এখন আমরা পতাকা বৈঠকের নামে শান্তনার নাটক মঞ্চায়ন লক্ষ্য করি।আমাদের নতজানু পররাষ্ট্র নীতি আরও বেশি ভঙ্গুর হয়ে গেছে ২০০৯ সালের পরে।
পিলখানা ট্র্যাজেডি তে স্বয়ং প্রাণ হারিয়েছে তৎকালীন বিডিআর প্রদান মেজর শাকিল আহমেদ। সেই সাথে ঝরে গেছে আরও ৫৬ জন দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তা।এছাড়াও ১৭ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল ঐ দু'দিনে। রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা হয়েছিল। পরে বিচারের নামে অনেক নির্দোষ বিডিআর সদস্যদের বিচার হয়েছিল। তাদের জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল মূল্যবান অনেক সময়।
বিডিআর বিদ্রোহকে অনেকে গোয়েন্দা ব্যবস্থার দূর্বলতা বলে আখ্যায়িত করে। আবার কিছু মানুষ বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র বলেও চালিয়ে দেওয়ার অপপ্রয়াস চালায়। আবার প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ হিংসা নীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন বলেও থাকে অনেকে। এর যথেষ্ট কারণ আছে।২০০১ সালের ১৮ এপ্রিলে কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি সীমান্ত যুদ্ধে বিএসএফের ১৬ জন সদস্য বিডিআরের হাতে নিহত হয়েছে। সেদিনকার ঘটনা সূত্রে জানা যায়, ভোরে স্থানীয় কৃষকরা ধানক্ষেতে কাজ করতে যেয়ে দেখে ভারী অস্ত্র নিয়ে বিএসএফ সদস্যরা বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। হিন্দি ভাষায় জানতে চায় বিডিআর ক্যাম্প কোথায়?
এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা বিডিআর ক্যাম্পে গিয়ে খবর জানায়। শুরু হয় সীমান্ত যুদ্ধ। গ্রামবাসী নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কুড়িগ্রামের বড়াইবাড়ি যুদ্ধে বিডিআরের ২ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করে। ঐ সীমান্ত যুদ্ধের প্রতিশোধ নিতেই শক্তিশালী বিডিআরকে নিশ্চিহ্ন করার মিশনে নেমে পড়ে ভারত। আমাদেরকে জানা প্রয়োজন, যেকোনো প্রভাবশালী রাষ্ট্র তার পাশের ছোট রাষ্ট্রকে সবসময় শোষণ করে রাখতে চায়। এতে তারা নানাবিধ সুবিধা হাসিল করে নিতে সহজ হয়।
আমরা খুব গভীর ভাবে লক্ষ্য করেছি বর্তমান সরকারের সময়ে ভারত বাংলাদেশ থেকে বেশি লাভবান হয়েছে।
বিডিআর বিদ্রোহের ফলে কার্যত ভোঁতা হয়ে গেছে আমাদের সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরীরা। পুরো বাহিনীর নাম পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে। বিডিআর থেকে বিজিবি। বিডিআর নামের মধ্যেই আলাদা একটা সাহসী ভূমিকা ছিল। এখন বিজিবি নামের মধ্যে তেমন তেজ লক্ষ্য করা যায়নি। বাহিনীর পোশাকেও পরিবর্তন ঘটেছে।
লেখার কলেবর বড় করতে চাই না। এছাড়াও আমার জ্ঞানের পরিধি বেশি বিস্তৃত নেই। বিবেকবোধ থেকে বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে কলম ধরা।
অপেক্ষায় রইলাম বিডিআর বিদ্রোহের মূল কুশীলবের ভূমিকায় কারা ছিল তা দেখার। কাদের প্রত্যক্ষ মদদে আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তা ভোঁতা হয়ে গেছে তার উন্মোচন একদিন হবে ইনশাআল্লাহ।
লেখক : শিক্ষার্থী,যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।

পঠিত : ৩৬৯ বার

মন্তব্য: ০