Alapon

চলেন বাহাস করি

হিন্দু প্রবচনে একটা কথা আছে, " শতং বদ ম লিখ" অর্থাৎ বলো শতবার কিন্তু লিখ নাহ।এই কারনে মাঝে মাঝে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলেও লিখি নাহ। কারন লিখলে দূর্বলতা প্রকাশ পায়।আবার এদিকে ধরেন, বলতে আর শুনতে ভালো লাগে। কারন প্রজ্ঞা শুধু শুনতে চায় আর জ্ঞান কথা বলতে চায়। আর আজকে লিখলাম, যারা লিখার কথা তারা লিখছে নাহ,যাদের বলার কথা তারা বললেও অসৎ উদ্দেশ্যের নিচে পড়ে যায় সেই সবচেয়ে দামী কথন গুলো।

আচ্ছা কথায় আসেন, চারদিকে এখন শুধু বাহাস আর বাহাস।চলেন বাহাস করি।আর এদিকে হুজুরে বাহাস করতে গিয়ে মূল জায়গাটার ভীত নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। ধরেন, আপনি বলেন তারাবী আট রাকাআত নাকি বিশ রাকাআত। আর ঐদিকে জাতীয় দৈনিকে দেখলাম ছাত্র ভাইয়েরা মার খাচ্ছে, তারাবীর সালাত আদায় করতে গিয়ে। আপনি হয়ত ভাবতেছেন আচ্ছা বুঝছি, তারা মনে হয় হুজুরের কথা অনুযায়ী আট রাকাআত কিংবা বিশ রাকাআত আদায় করে নি তাই বিরোধী পক্ষ এসে মার দিছে।কিন্তু ইসলাম বিরোধী শক্তি, ইসলামের অনুসরণ করবে আর জীবন সুন্দর করে গড়ে তুলবে সেটা চায় নাহ।সবাইকে জোর করে পিটিয়ে হলেও ব্রাহ্মণ্য বাদের অনুসারী বানাতে হবে। তাই, তাদের এত আয়োজন।আর আঘাত এবং পেশী শক্তির ব্যবহার করছে।

কিন্তু আমি যদি আপনাকে বলি, ধরেন এই যে বাহাসের একটা ঢেউ আসলো, সেখানে অব্যশই দুইটা পক্ষ। কেউ তালগাছ টা চায় আর কেউ সুপারি গাছটার তালগাছ বলে চালাতে পটু হয়ে বসে আছে। কিংবা সুপারি গাছকে তাল গাছ বানানোর সরঞ্জাম আছে অথবা কেউ সরবরাহ করছে। সেটা আপনারা বিজ্ঞ দায়ীদের কথা শুনে বুঝতে পেরেছেন আশা করি। তিনি তো ঘোষণা দিলেন, কারা কলকাঠি নাড়ছে তা আমরা জানি।

কিন্তু আমি ঐ দু'পক্ষের আলেম ওলামাদের কে সম্মান করে বলছি।সারাদেশ জুড়ে উভয়পক্ষের সমর্থক কত? উত্তর আসতে পারে, সামান্য এক সংখ্যা। যেটা পুরো দেশের জনসংখ্যা হারে।কথা হলো যারা এই বিষয়গুলো একদম বোঝে নাহ।তাদের কি কোন সমস্যা হবে। আবার ধরেন, যারা তারাবী নিয়ে পিটাপিটি করল, তারা কি করবে। আবার ধরেন, যারা একদম নামে মুসলিম হয়েও ইসলামের প্রাথমিক দাবী গুলো পালন করছে নাহ।টুকটাক পালন করে আর কি।

কিছুদিন আগে শুনলাম, একটা বৃহত্তর ছাত্র সংগঠনের জরিপে উঠে এসেছে, রাজধানীর শহরের ক্লাস ফাইভে পড়ে তাদের অধিকাংশ সংখ্যাই পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত। সংখ্যাটা বলতে পারলাম নাহ। কিন্তু জানলে আপনিও হতাশ হবেন কিংবা চোখ কপালে উঠবে। তাদের জন্যও কি বাহাস লাগবে? তারা কোথায় যাবে।আর ৬ষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পরিসংখ্যান টা জাতীয় দৈনিক থেকে গুগল করে দেখে নিবেন প্লিজ।

আবার,, আমার স্মৃতি শক্তি যদি প্রতারণা না করে তাহলে বলব,এই তো ২০১৮ সালে বিবিসি বাংলা নিউজ করে ছিল। নিউজটি বলেছিল,দেশে ৭০ লাখের বেশি লোক মাদকের করাল গ্রাসে নিমজ্জিত হয়ে আছে। আচ্ছা এটা তো সেই আঠারে সালের কথা। মনে মনে ভাবছেন মিয়া বলেন, এখন কি পরিস্থিতি? সেটাই ২০২২ সালে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজে বলেছেন, ৮০ লাখ মাদকাসক্তের ৪৮ শতাংশই শিক্ষিত।কি শুনে অবাক হলেন তাই নাহ।অবাক হওয়ারই কথা।এসব শিক্ষিত লোকগুলো যদি আপনার আমার দাওয়াত পেত তাহলে কি হতো? দাওয়াত তো দূরের কথা। তাদের জন্য কেউ কি হেদায়াতের দোয়া করে? তাহলে তাদের কি বাহাস লাগবে নাহ।

কথায় আসেন! এই যে বাহাস বাহাস বলে চিল্লানি ফিল্লানি এটাই কি উম্মাহর আলেমদের কাজ ছিল।তাদের কি নিজে কয়েকটা বই খাতা পড়ে তা নিয়ে অপরকে হেয় করার দায়িত্ব ছিল।তাহলে তাদের দায়িত্ব টা কি ছিল? সেজন্য কুরআন আমাদের কে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দল থাকা উচিৎ যারা সৎ কর্মের প্রতি আহবান জানাবে, ভাল কাজের নির্দেশ দেবে এবং অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখবে। আর তারাই হবে সফলকাম।(সূরা আলে ইমরান -১০৪)

আমাদের কত কাজ! কিন্তু উম্মাহর আলেমদের অবস্থা দেখলে মনে হয়, দায়িত্ব জ্ঞানহীন রাখালের ন্যায়। যেসব রাখাল তাদের পশুগুলো কে হিংস্র হায়েনা নিকট ছেড়ে দিয়ে নিদারুণ দিন কাটাচ্ছে। কিংবা তার মতো করে আরামে বিশ্রাম নিচ্ছে।ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে দেখল,অলীক কল্পনার মতো মনে হলো আর দেখতে পেল তার পশুগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত। অতঃপর সে বুঝতে পারল, তার সময়টা ঘুমের জন্য ছিল নাহ। গল্পে তো, আমরা রাখালকে জাগতে দেখলাম যে কিনা তার ক্ষতির কথা বুঝতে পেরে অনুশোচনা করল।কিন্তু আমাদের উম্মাহর আলেমরা কি জাগবে। নাজেগে আর অনুশোচনা না করে,বলবে "চলেন বাহাস করি"।

আপনি হয়তো বলতে পারেন, যে কেন শুধু আলেমদের দায়িত্ব মনে করিয়ে দিতে চেয়েছি।এটার একমাত্র কারন হলো, কোন জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইলে আলেম সমাজকে কাজে লাগাতে হয়।আর সেই সুযোগটিই কাজে লাগাচ্ছেন ইসলাম বিরোধী শক্তিরা। যার প্রচলন আজ থেকে হাজার খানেক বছর আগে। ইতিহাস তাই বলে। তুরস্ক থেকে ইসলামি খেলাফত বিলুপ্ত হওয়ার পর আলেমের কে কাজে লাগিয়ে জাতিকে এমন বিভ্রান্ত করা হয়, পূর্বেই যারা জেনেছেন একমাত্র তারাই বুঝেছেন। আমাদের সালাউদ্দিন আইয়ুবী যখন, ক্রুসেডের হাত থেকে বায়তুল মাকদাস উদ্বার করবেন তখনই কতিপয় কিছু আলেম জাতিকে জিহাদ থেকে দূরে রাখবার জন্য জিহাদের অপব্যাখা করেছে। তা আমরা ইতিহাস পড়ে জানতে পারি।

সুতরাং, জাতিকে মেরামত করার জন্য আলেম সমাজের মেরামতই শ্রেয়।তখন আর তারা প্রধান দায়িত্ব রেখে বলবেন নাহ, "চলেন বাহাস করি"।

পঠিত : ২৫৬ বার

মন্তব্য: ০