Alapon

তবে কি আমরা স্বাধীন?

“কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে
আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা”
— কবি হেলাল হাফিজ
আজ লাল সবুজে রাঙানো একটি পতাকা পেয়েছি কিন্তু বেদনার কবিতা লেখা কি শেষ হয়েছে? এখনো মানুষ বহুমাত্রিক কষ্টে জর্জরিত। অধিকার বঞ্চিত সর্বস্তরের জনতা। তবে স্বাধীনতার মূল্য কি? স্বাধীন পতাকা পাওয়ার পরে যখন বেদনায় অশ্রু সিক্ত হয়। তখন বুক ভরা কান্না নিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা হয়, তবে কি আমরা স্বাধীন?

স্বাধীনতা আমার অধিকার। স্বাধীনতা আর অধিকারের প্রশ্ন কার কাছে করবো? স্বাধীনতার ধারক-বাহক আজ স্বাধীনতা লঙ্ঘনকারী। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। অর্থাৎ শিক্ষিত মানুষেরা জাতি দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি। শিক্ষিত মানুষেরা যদি স্বাধীনতা রক্ষা করে অপরকে অধিকার দিয়ে চলে তবে জাতি তার অধিকার পাবে এবং অধিকার বঞ্চিত মানুষ অধিকারের ব্যাপারে কথা বলার সাহস পাবে। আজ আমরা এতটাই স্বাধীনতা বঞ্চিত যে, স্বাধীনতার প্রশ্ন করতে পারি না। নিজের অধিকারের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে পারি না। আমরা কি আসলে এই স্বাধীনতা চেয়েছিলাম? যারা এক সাগর রক্তের বিনিময়ে একটি স্বাধীন পতাকা আমাদের দিয়েছেন, তারা এমন স্বাধীনতার প্রত্যাশী ছিলেন না। যে স্বাধীনতা অর্জনকারী স্বাধীন দেশে নিজের ভূখণ্ডের কথা বলতে গিয়ে আবরার ফাহাদকে জীবন দিতে হয়। সেদিনের আহাজারী আমাদের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। সেদিন চিৎকার করে কান্নার অধিকারও দেওয়া হয়নি। আমরা যদি কথা বলতে না পারি! যদি নিজেদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হই! প্রশ্ন থেকে যায় তবে কি আমরা স্বাধীন?

আইনের শাসন বাস্তবায়ন হলে মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে, অনাহারে কেউ কষ্ট পাবে না, দেশপ্রেম থাকার কারণে কোন মা কে তার সন্তান হারাতে হবে না। গুম হতে হবে না কোন ব্যক্তিকে। বিচারকের দৃষ্টিতে আজ সবাই সমান না হওয়ার কারণে কিছু মানুষ আধিপত্য বিস্তার করে আর কিছু মানুষ অধিকার বঞ্চিত হয়ে তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যায়। অথচ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে পরিষ্কারভাবে বলা আছে: ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’ এই অধিকারটি আইনের শাসনের প্রাথমিক শর্ত। এই শর্ত যখন বাস্তবায়ন হচ্ছে না তখন প্রশ্ন থেকে যায় তবে কি আমরা স্বাধীন?

মানুষের সৃষ্টির সাথে অপরাধ প্রবণতা লেগে আছে। অপরাধ প্রবন হওয়ার কারণে মানুষ অপরাধ করতে চাইবে এটা স্বাভাবিক। এজন্য মৌলিক অধিকারের অর্থ এই নয় যে একজন নাগরিক যা খুশি তা-ই করবে। অপরের অধিকার লংঘন না করে নিজের অধিকার বাস্তবায়ন করাটা স্বাধীনতা। এজন্য নাগরিককে হতে হবে আইন মান্যকারী ও সুশৃঙ্খল মানুষ। আইনে নিষিদ্ধ কোনো কাজ করলে তার শাস্তি প্রাপ্য। তবে সুবিচারের যে নীতি বা দর্শন তা হলো এমন শাস্তি একজন অপরাধীকে দেওয়া যাবে না, যাতে কারাগার থেকে বেরিয়ে সে আরও প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠে। এজন্য ইসলামের বিচার সর্বোচ্চ সুন্দর। ইসলামী বিচারকার্যের সৌন্দর্যে মানুষ ইসলামের প্রেমে পড়েছে এবং মুসলিম হয়ে সুবিচার এবং সৎ শাসনের স্লোগান দিয়েছে। কিন্তু এখন কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষ অন্যায় করে ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে আর কোন ক্ষেত্রে মানুষ নিজের অধিকারের কথাও বলতে পারছে না। একটি জাতি শিক্ষিত হচ্ছে নৈতিক ও আদর্শিক শিক্ষায় শিক্ষিত হচ্ছে না, যার কারণে বারবার শুনতে হচ্ছে কলেজ ভার্সিটিতে প্রকাশ্যে গণধর্ষণের কথা। যেহেতু এই কাজ করার ফলে অন্যের অধিকার লঙ্ঘন হয় কাজেই এটা স্বাধীনতা না। কিন্তু যারা এভাবে অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে আমরা কেন অধিকার বঞ্চিত হচ্ছি? কেন আমরা লাঞ্চিত হচ্ছি? তবে কি আমরা স্বাধীন?

প্রশ্নবিদ্ধ স্বাধীনতাকে আর প্রশ্নবিদ্ধ না করে ব্যক্তির সচেতনতা বৃদ্ধি করে সকলকে জবাবদিহীতার আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নয় আর নৈতিকতা শুধু এই দুনিয়ায় নয় বরং সকল জায়গাতেই নৈতিকতা প্রয়োজন, নিয়ম শৃঙ্খলার মধ্যেই প্রকৃত শান্তি নিহিত, এই চেতনাগুলো নিজেরা লালন করা এবং সমাজে তার প্রতিফলন ঘটানো প্রয়োজন। তাহলে আগামী প্রজন্ম আর জিজ্ঞেস করবে না তবে কি আমরা স্বাধীন?

মোঃ আব্দুল মজিদ
আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

পঠিত : ৯৪৪ বার

মন্তব্য: ০