কোটা সিস্টেম থেকে কেন বাংলাদেশকে মুক্ত হওয়া দরকার?
তারিখঃ ৬ জুলাই, ২০২৪, ১৫:০৫
আমাদের দেশে মোট নিবন্ধিত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১লাখ ৬৮ হাজার যা মোট জনসংখ্যার ০.২% ও না তাদের জন্য বরাদ্দ ৩০%। এছাড়াও অন্যান্য কোটা বাদ দিলে দেশের লাখ লাখ সাধারণ ছাত্রের জন্য থাকে ৪৫%। ৪৬ তম বিসিএসে প্রার্থী সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি। দিন দিন প্রতিযোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।
দেশের জন্য যারা জীবন দিয়েছেন তাদের সমান কেউ হতে পারে না। কিন্তু তাদের সম্মান ব্যবহার করে বৈষম্য তৈরি করা খুবই অনুচিত কাজ।
প্রথমে কোটা সুবিধায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি তারপর আবার কোটায় চাকরিটাও দিয়ে দিলেন। কেন বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ভর্তি হলো কোটা সুবিধায় তখন কি রাষ্ট্র প্রাপ্য সম্মান দেখায় নাই? হাজার হাজার ছাত্র যে দেশে চাকরির অভাবে হন্যে হয়ে আজ পথে পথে সেই দেশে ৫৫% কোটা!
পৃথিবীতে শুধুই আমরা করছি না কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন। অনেক দেশেই হয়েছে এই আন্দোলন। আমেরিকার মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, রিডা, নেব্রাস্কা, অ্যারিজোনা, ওয়াশিংটন, ওকলাহোমা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, জর্জিয়া, টেক্সাসে রেসিয়াল কোটা নিষিদ্ধ পর্যন্ত করেছে। আমেরিকায় কোটাধারীরাও কোটার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল কারণ তাদের অভিযোগ কোটায় ভর্তি হওয়ায় তাদেরকে সবাই ভিন্নভাবে দেখে। এইরকম বহু ছাত্র-ছাত্রী কোটা সুবিধা বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিল।
এই হল ইতিহাস আর আমরা বাঙালিরা মানুষের দয়ায় বাঁচতে অভ্যস্ত। মুক্তিযোদ্ধা কমা ভারতেও কোটা আছে। ভারতের ইতিহাসে বেশ কয়েকবার সংবিধান সংশোধন করা হয়েছে। ২০১১ সালে এলাহাদাবাদ আদালত গোটা ভারতীয় সাংবিধানিক কোটা প্রথাকে চ্যালেন্জ করে এবং অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। উল্লেখ্য ভারতীয় কোটা প্রথাকে Reservation system বলে।
২০তম থেকে ৩৩তম পর্যন্ত কোটার প্রয়োগটা ছিল এক রকম কিন্তু ৩৪ তম বিসিএস থেকে ভিন্ন আঙ্গিকে কোটার প্রয়োগ হয়। পূর্বে প্রিলি, লিখিত, মৌখিক পরীক্ষার পর চূড়ান্ত ভাবে কোটা প্রয়োগ করা হত কিন্ত ৩৪তম বিসিএস থেকে প্রিলিমিনারিতে কোটা প্রয়োগ করা শুরু হয়। দেখা গেল ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় কেউ কেউ ৭৫-৮০ পেয়েও ক্যাডার কপালে জুটে নাই অন্যদিকে কেউ কেউ ৪০-৫০ পেয়েও ক্যাডারের স্বাদ গলাধকরণ করল। একজন সিরিয়ালে ২০০তম হয়েও সোনার হরিণ ছুঁতে পারলো না। অন্যদিকে কেউ সিরিয়ালে ৫০০০ তম হয়েও সোনার হরিণ নিশ্চিত করতে পারলো।
এটা কোটা রাষ্ট্রের জন্য অভিশাপ। শুধু অভিশাপ নয় এটা সন্ত্রাসী। কোটা সন্ত্রাস থেকে আমরা মুক্তি চাই। এই সন্ত্রাস থেকে যতদিন মুক্ত হচ্ছে না বাংলাদেশ ততদিন এদেশের মুক্তি নাই। মেধাবীদের বাদ যে রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখা হচ্ছে সে রাষ্ট্র কোনদিনই সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হতে পারে না। আমরা কোটা বাতিল চাই না। সংস্কার চাই। আমরা চাই সকল কোটা মিলে ১০% এর মধ্যে হতে হবে। এটা আমাদের দাবী এবং এই দাবী মানতেই হবে।
মন্তব্য: ০