Alapon

বাংলাদেশ কি সাম্প্রদায়িকতার দিকে যাচ্ছে?



আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহু,

গতকাল থেকে সংখ্যালঘুদের নিয়ে চিন্তায় ছিলাম আমরা সবাই। আদতে আমার দেখা মতে কোন মুসলিমকে দেখি না যে তাদের উপর হামলা করার চিন্তা করেছে। মুজিবের মূর্তি বা কিছু ভাস্কর্যের হিসাব আলাদা। কেউ থাকতে পারে; একেবারেই স্বাভাবিক অস্বাভাবিকভাবে।

কিন্তু যা বুঝলাম যে মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সংখ্যালঘুদের দ্বারা এতদিন যে সংখ্যাগুরুরা নির্যাতিত হয়েছে তার ক্ষোভ থেকেই হামলার শিকার হয়েছে তাঁরা। এমন নয় যে তারা সংখ্যালঘু তাই হামলা করা হয়েছে। বরং মুসলিম নামধারীদের যেমন বিভিন্ন জায়গায় মারা হয়েছে এবং তাদের সম্পত্তি ধ্বংস করেছে তেমনি সংখ্যালঘু দুষ্কৃতিকারীদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জনতা। কিন্তু এটাকে তাঁরা হিন্দুদের উপর নির্যাতন বলে চালিয়ে দিতে চাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যে কতটা বিজেপি নির্ভর ছিল এটা কি ভুলে যাচ্ছেন?

সুতরাং এটাকে একেবারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মধ্যে ধরার প্রয়োজন দেখছি না। বরং মুসলিমরা ঘরে ঘরে-মন্দিরে মন্দিরে গিয়ে পাহারা দিয়েছেন। আমি চট্টগ্রামে থাকি। আপনার এলাকাতে আপনি একটা দুষ্কৃতিকারীদের লিস্ট করুন দেখবেন যে সেখানে হিন্দুদের নাম মুসলিমদের সাথে আসবেই। আর সংখ্যাটা ছোট হবে না মনে হয়।

তার মধ্যে একপক্ষ গণহারে গুজব ছড়াচ্ছে। এতদিন চুপ ছিল বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের চুরি নিয়ে কিন্তু এখন সচেতনতা দেখাতে চায়। সমস্যা নাই এটাও ভালো তবে বাড়াবাড়ি ভালো না।‌ শুধু খারাপটা দেখবেন আর ভালোটা দেখবেন না এবং সাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়াবেন। এটা কিভাবে হয়?

গোবিন্দ প্রামাণিক একটা বক্তব্য দিয়েছেন তাঁর কথা শুনুন। সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু এই খেলা থেকে বের হতে হবে। কিছু পাবলিকের কথা শোনে মনে হল তাদের মধ্যে এতদিন সুপ্ত লুকিয়ে থাকা জামায়াত-হেফাজতের প্রতি বিদ্বেষ জাগা শুরু হচ্ছে এখন। অথচ এই দলগুলোই বরং সব জায়গায় নিরাপত্তা দিচ্ছে; দুষ্কৃতিকারীদের সংখ্যা নিতান্তই কম। কিন্তু সেটাকে যে কি বানিয়ে দিচ্ছে যেন এমন কিছু হয়েছে যে ভারত এখনি হামলা করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। আর আমরা এতে পা দিচ্ছি। কি একেবারে হয়ে যাচ্ছে যে ভারত হিন্দুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে?

ভারতের কিছু মিডিয়া এসবই প্রচার করছে আর ভারত সরকার বলছে যে তাঁরা বাংলাদেশের হিন্দুদের অধিকার নিশ্চিত করবে। এরা ভারতের মুসলিম/হিন্দুদের নিরাপত্তা দিতে পারে না। বরঞ্চ এদের থেকে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক ভালো। আর এখন আসছে বাংলাদেশে নিরাপত্তা দিতে। মূলত দুষ্কৃতিকারীদের বটবৃক্ষ ছিল শেখ হাসিনা/আওয়ামী লীগ। ফলে এরা একটা ভয়ে আছে যদি টান দেয় তাহলে এদের নামও আসবে। তাই আগেভাগেই সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে খেলছে। আমরা চট্টগ্রামের ইসকন নওফেল, লেখক ভট্টাচার্য, বনজ কুমার কিংবা বিপ্লবের মত লোকদের ভুলে যায়নি। এখন এদেরকে কেউ হামলা করলে সেটা কি সাম্প্রদায়িকতা হবে? –না। অবশ্যই এটাও অপরাধ।

পরিশেষে বলতে চাই আওয়ামী লীগ হোক আর না হোক যে কাউকেই বিনা বিচারে আঘাত করা এবং নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়াটা মারাত্মক অপরাধ। যার জন্য দ্রুত শৃঙ্খলা আনতে হবে এবং অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যারাই আইনের কাজ নিজের হাতে নিবে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

এই বাংলাদেশে থাকলে আবার সংখ্যালঘু কি শব্দ? ছাত্ররা যখন আন্দোলন করেছে সেখানে সালাতের ওয়াক্তে মুসলিমরা সালাত আদায় করেছে আর তাদেরকে প্রটেকশন দিয়েছে অন্যরা; এমনকি হিন্দুরা। কেউ আঘাত পেলে সাম্প্রদায়িকতা আসেনি বরং একে অপরকে জান দিয়ে রক্ষা করেছে। এরাই হামলা করবে এটাও কি মেনে নিতে হবে?
হিন্দুদের বলি ভারত থেকেও আপনারা এখানে বেশি নিরাপদ। দয়া করে ভারত সেখানে যা মুসলমানদের উপর করে এমন অপবাদ জোর করে বাংলাদেশের মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিবেন না। নিজেদের উচ্চাবিলাষকে আটকিয়ে রাখুন। আপনাদের উপর হামলাকারীকে চিহ্নিত করুন বা অভিযোগ করুন এরপর বিচার হয় কিনা সেটা দেখুন।

এই নিয়ে গতকাল একটা গ্রুপ থেকে লিভ নিলাম। সবাই গণহারে বিভিন্ন গ্রুপে শুধু পোস্ট দিচ্ছিল সংখ্যালঘুরা কি নিরাপদ বা তাদের কি হবে ইত্যাদি ধরণের। যখন জিজ্ঞেস করলাম আপনাদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে বলুন তখন দেখলাম যে কিছু বলতে পারে না। বরং সম্ভবনার কথা বলে। পরে বুঝলাম এসব হল গুজব। তাছাড়া কিছু দুষ্কৃতিকারী হিন্দু তো আছেই; এরা গুজব ছড়াতে চায় এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে করাতে চায়।

সবাই সতর্ক থাকুন; আপনারা দরদ দেখাতে গিয়ে বরং গুজবকেই ছড়িয়ে দিচ্ছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন।

পঠিত : ২৭৮ বার

মন্তব্য: ০