Alapon

দাবী দাওয়া পার্টির দাবীগুলো কি দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য?

দীর্ঘ ষোল বছর দেশের মানুষের কাঁধে জেকে বসা হিংস্র দৈত্য ছাত্র-জনতার দূর্বার আন্দোলনে দেশ ছেরে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। অবৈধভাবে বাংলার মসনদ আকড়ে থাকা হিংস্র ড্রাকুলারা দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে এর রাষ্ট্রীয় বৈশিষ্ট্যকে হত্যা করে একটি মাফিয়া তাল্লুকে পরিণত করেছিলা। অনেকে পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারকে ফ্যাসিষ্ট বলে অভিহিত করে। তাঁকে ফ্যাসিষ্ট বললে তা অনেক কম বলা হবে। ফ্যাসিবাদের একটি আদর্শ থাকে এবং লক্ষ্য থাকে; ফ্যাসিস্টরা প্রতিপক্ষকে নির্মমভাবে দমন করলেও তাদের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য নিজস্ব কিছু নিয়ম এবং আইন তৈরী করে শাসন ব্যবস্থাকে পরিচালনা করে। কিন্তু গত ষোল বছরের শাসন ব্যবস্থায় যে মক্ষীরানী ক্ষমতায় ছিলো তাদের কোনো আদর্শ ছিলো না, কোনো লক্ষ্য ছিলো না। শুধুমাত্র নিজ ইচ্ছা এবং বাসনাকে চরিতার্থ করার জন্য যখন যাকে মনে চায় খুন করা, গুম করা, মামলা দেয়া এবং দেশের সকল প্রতিষ্ঠানকে এককভাবে নিজের ইচ্ছার দাস বানিয়ে এটিকে পারিবারিক তাল্লুকে পরিণত করেছিলো। মাফিয়া জমিদারীর দানবীয় এই শাসন ব্যবস্থায় একজন অতি হিংস্র মক্ষীরানীর অধীনে প্রতিটি সেক্টরে আরো শত শত এবং ছোট ছোট দৈত্য তার হুকুম তামিল করতো। দানবীয় এই শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কারো টু শব্দ করার সূযোগ ছিলো না। যারাই প্রতিবাদ করেছে, তারা কেউ গুম হয়েছে, কেউ খুন হয়েছ্,ে কাউকে বছরের বছরের পর পর আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়েছে। প্রতিবাদী মানুষগুলোর জীবন ছিলো বড়ো দূর্বিসহ। দাবী আদায়ের জন্য প্রতিবাদ মিছিল, বিক্ষোভ করা তো দূরের কথা, পোষ্টার লিফলেট বিতরণ কিংবা ফেসুবুকে দুই লাইন লিখলে তা যদি সরকারের বিরুদ্ধে যেতো তবে ঐ ব্যক্তির অবস্থা হতো বড় করুণ এবং নির্মম। দানবীয় এই শাসন ব্যবস্থার শেষ দিকে ছাত্র জনতার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে তখনো মাফিয়া তাল্লুকের অধীকারী মক্ষীরাণীর নির্দেশে মানুষকে নির্দয়ভাবে গুলি করে হত্যার মহোৎসব চলছে অবিরত। আন্দোলনকারীদের যারা পানি পান করিয়েছে তাদের ধরে নিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর টর্চার সেলে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। এই ষোল বছরের মাফিয়া তন্ত্রের বিরুদ্ধে যারা ইতঃপূর্বে কোনো মিছিল সংগ্রাম করা তো দূরের কথা ফেসবুকে দুই লাইন লেখার সাহস করতো না। তারাও আজ প্রেসক্লাব, হাইকোর্ট, সচিবালায়, ব্যাংকপাড়া এমনকি প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন পর্যন্ত ঘেরাও করছে।
দাবী-দাওয়া পার্টিগুলোর কয়েকটি ঘটনা খুবই স্পর্শকাতর। একদিন কয়েকটি গ্রুপ বিভিন্ন দাবীতে সচিবালয়ের সবগুলো গেট বন্ধ করে সমাবেশ করেছে, সচিবালয়ের কোনো কর্মকর্তা তখন সেখানে বের হতে এবং প্রবেশ করতে পারেননি। ছাত্রদের একটি গ্রুপ গেট ভেঙে সরাসরি ভেতরে ঢুকে মিছিল করেছে। পত্রিকায় দেখলাম ২২ আগস্ট একটি গ্রুপ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করে দাবী আদায়ের জন্য সমাবেশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টা গাড়ি নিয়ে তার বাসভবন থেকে বের হতে পারেন নি।
মাফিয়াতন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশকে স্বাধীন করার জন্য যারা জীবন দিয়েছে, এখনো তাদের তালিকা সম্পন্ন হয়নি। এমনকি সকল শহীদের পরিচয়ও এখনো সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আহতরা হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। শহীদ পরিবারগুলো দুঃখ, বেদনা আর শোকে মুহ্যমান। পঙ্গু মানুষগুলো জীবনের বাকী সময়ের দুঃখের জীবন কল্পনায় চোখের পানি মুছছে। প্রতি ক্ষেত্রে দুঃখ বেদনার ক্ষত। শহীদ পরিবার এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য একদল মানুষ অহর্ণিষ ছুটে চলছে। যারা গত ষোল বছর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছে, সব কিছু হারিয়েও তারা অসহায় শহীদ পরিবার আর আহত যোদ্ধাদের পাশে সর্বস্ব নিয়ে দাড়াবার চেষ্টা করছে। অপরদিকে দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় মানুষের জীবন বিপন্ন। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি, আশ্রয় খাবার আর উদ্ধার তৎপরতায় সরকার এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থা ব্যস্ত। যখন রাষ্ট্রীয় ভঙুর একটি কাঠামোর এখন পর্যন্ত কোনো কুল কিনারা করা যায়নি। মাফিয়াতন্ত্র সব কিছুকে যেভাবে ধ্বংস করেছে তা থেকে স্বাভাবিক হতে আরো বহু সময় দরকার। তখন রাষ্ট্র বিনির্মাণ কিংবা শহীদ ও আহত পরিবারের পাশে না দড়িয়ে অথবা বন্যার্তদের পাশে দাড়ানোর পরিবর্তে দাবী দাওয়া পার্টি খুলে বসেছে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন অসাটাই স্বাভাবিক।
দাবী দাওয়া পার্টিগুলোর আসল উদ্দেশ্য কী? গত ষোল বছর তাদের এই দাবী কোথায় ছিলো? তারা কি তখন এই দাবী উত্থাপন করার সাহস করেছিলো? মিছিল সমাবেশ করা তো দূরের কথা, এই দাবীতে কোনো স্মারকলিপি প্রদান কিংবা লিফলেট বিতরণের মতো সাহস তাদের ছিলো কি না? এখন তারা সচিবালয় ঘেরাও করছে, রাস্তা অবরোধ করছে। প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করছে। প্রতিবাদ এবং দাবী আদায়ের জন্য এই যে অবাধ স্বাধীনতা তারা পেয়েছে, এটাকে ব্যবহার করে তারা যে দেশে আবার অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের মটিভ দেখে তা বোঝাই যায়। তাদের মধ্যে পতিত মাফিয়া স্টেটের প্রেতাত্মারা ভর করেছে কি না? এই প্রশ্ন দেশ প্রেমিক প্রতিটি নাগরিকের। উপদেষ্টাগণ এখনো তাদের মন্ত্রালয়গুলো সম্পর্কে জানছেন এবং জঞ্জাল সাফ করার চেষ্টা করছেন। এই জঞ্জাল সাফ করতেই তো অনেক সময় লেগে যাচ্ছে। এরপর নতুন করে ঢেলে সাজানো এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার পালা। তার আগেই যারা শহীদদের রক্ত শুকাবার সময় দিতে চাচ্ছেন না। আহত মানুষগুলো হাসাপাতালে কাতরাচ্ছে -তাদের প্রতি সামান্যতম দয়া ভালোবাসা দেখানোর কোনো ন্যূনতম অনুভূতি মনের মধ্যে পোষণ না করেই দাবী দাওয়া পার্টি খুলে বসছেন, আর যাই হোক তাদের অবশ্যই উদ্দেশ্যগুলো মহৎ নয়। পতিত মাফিয়াতন্ত্রের পলাতক প্রেতাত্মারা খুশি হয় এমন কোনো কার্যক্রম হাতে নিলে জনগণ ধরে নিবে দাবী দাওয়া পার্টিগুলো এমন অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে।

পঠিত : ১৪৯ বার

মন্তব্য: ১

২০২৪-০৮-২৩ ০৯:০০