প্রকাশ্যে দান করা উত্তম
তারিখঃ ২৮ আগস্ট, ২০২৪, ১৯:৩৬
দানের ব্যাপারে কুরআনে যে কয়টি আয়াত আছে তাতে প্রকাশ্য ও গোপন উভয়টাকেই উত্তম বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটো বিষয়কে সামনে রাখা যেতে পারে।
১. ব্যক্তিগত দান
২. সাংগঠনিক বা সামষ্টিক দান
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, "যারা তাদের সম্পদ ব্যয় করে রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে। অতএব, তাদের জন্যই রয়েছে তাদের রবের নিকট তাদের প্রতিদান। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিতও হবে না।" (সূরা বাকারা : ২৭৪)
সূরা রা'দে বলা হয়েছে, "যারা তাদের রবের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সবর করে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যে রিয্ক প্রদান করেছি, তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের মাধ্যমে মন্দকে দূর করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখিরাতের শুভ পরিণাম।"
(সূরা রা'দ : ২২)
সূর ইব্রাহীমে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, "আমার বান্দাদের বল, ‘যারা ঈমান এনেছে, তারা যেন সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, ঐ দিন আসার পূর্বে যে দিন কোন বেচা-কেনা থাকবে না এবং থাকবে না বন্ধুত্বও।" (সূরা ইব্রাহীম : ৩১)
এখানে দেখা যাচ্ছে দানের সাধারণ নীতি হচ্ছে গোপন ও প্রকাশ্যে উভয় অবস্থায় দান করার ব্যাপারে আল্লাহ উৎসাহিত করেছেন।
সূরা বাকারার অপর একটি আয়াতে আল্লাহ বলেন, "তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান কর তবে তা ভালো। আর যদি গোপনে দান কর তাহলে আরও ভালো।" (সূরা আল-বাকারা : ২৭১)
তবে যেহেতু প্রকাশ্যে দানকেও আল্লাহ উৎসাহিত করেছেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবে এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, যদি প্রকাশ্যে দান করলে প্রদর্শনেচ্ছা চলে আসে, তাহলে পুরো আমলই বরবাদ হয়ে যাবে! লোক দেখানো আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।
এজন্য আল্লাহ আবার সতর্কও করে দিয়েছেন এই বলে, ‘হে মুমিনগণ, দানের কথা প্রচার করো না এবং দান নিতে আসা মানুষজনকে কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান ওই ব্যক্তির মতো ব্যর্থ করো না, যে নিজের ধন-সম্পদ কেবল লোক দেখানোর জন্যই ব্যয় করে।' (সূরা আল-বাকারা : ২৬৪)
গোপন দানের ব্যাপারে একটি প্রসিদ্ধ হাদিস আছে ‘কিয়ামতের দিন যখন আরশের ছায়া ছাড়া কোনো ছায়া থাকবে না তখন আল্লাহতায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে তাঁর আরশের নিচে আশ্রয় দেবেন। তাদের মধ্যে একজন হল ওই ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করত, ডান হাত দান করত বাম হাত টেরও পেত না। (সহিহ বুখারি)
ব্যক্তিগত দানের ক্ষেত্রে শেষ কথা হলো, গোপন ও প্রকাশ্যে উভয় অবস্থায় দান করা উত্তম। বিশেষ করে যখন একে অপরকে উৎসাহিত করার ব্যাপার থাকে, তখন প্রকাশ্যে করাই ভালো। ব্যক্তিগতভাবে কাউকে দান করলে সেটা গোপনে করাই উত্তম। আর মনের মধ্যে প্রদর্শনেচ্ছা চলে আসলে উৎসাহিত করার জন্যও প্রকাশ্যে করা যাবে না, গোপনেই করতে হবে, অন্যথায় আল্লাহর কাছে তা কবুল হবে না।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে যদি সে দান কোনো সংস্থা বা সংগঠনে পক্ষ থেকে হয়, তখন কী হবে। এই ব্যাপারে কথা হচ্ছে- সেটা প্রকাশ্যেই করা উচিত এজন্য যে, সেখানে অনেক মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও দান আছে। সামষ্টিক কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য তা প্রকাশ্যেই করা উচিত। তবে মানুষকে ছোট করে, কষ্ট দিয়ে করা যাবে না। সেটা অবশ্যই নিন্দনীয়।
মন্তব্য: ০