আলিয়া মাদরাসা দিবস: প্রেক্ষিতে বর্তমান সময়
তারিখঃ ১ অক্টোবর, ২০২৪, ০৬:৪৩
(লেখাটি গতবছর আলিয়া মাদ্রাসা দিবসে লেখা, অপ্রকাশিত থাকায় পরিমার্জন ছাড়াই এবার প্রকাশ করলাম)
উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনামলে কলকাতায় তৎকালীন গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস কর্তৃক উপমহাদেশে প্রথম আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠা হয়।যার নাম ছিল কলকাতা আলিয়া মাদরাসা। এ আলিয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পেছনে ইংরেজদের ছিল বিশেষ উদ্দেশ্য। আমরা সেদিকে যাচ্ছিনা। দেশভাগের পরে ১৯৪৭ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। যা বর্তমানে পুরান ঢাকার বকসি বাজারে ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা নামে প্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশে সর্বমোট সরকারি আলিয়া মাদরাসার সংখ্যা তিনটি। ঢাকা সরকারি আলিয়া মাদরাসা, বগুড়ার সরকারি মুস্তফাবিয়া আলিয়া মাদরাসা, সিলেট আলিয়া মাদরাসা। আলিয়া ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সারাদেশে মাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান তিনটি! এ চিত্র থেকে সহজেই অনুমেয় মাদরাসা শিক্ষা কতটুকু অবহেলিত এ দেশে। সারা দেশে কামিল মাদরাসার সংখ্যা ২১৫ টি। পূর্বে মাদরাসা গুলোতে অনার্স শ্রেণি ছিল না। ছিল ফাজিল, যা ডিগ্রির সমমান।গত কয়েক বছর আগে ফাজিল অনার্স খোলার পরে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু তাদের সে আশার আলো ক্রমশ ফিকে যাচ্ছে। বর্তমানে আলিয়া ধারার মাদরাসা গুলোর ফাজিল- কামিল শ্রেণি ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। ইতিপূর্বে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়ার অধীনে ছিল। স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যই যুগান্তকারী পদক্ষেপ। কিন্তু সেশনজট, অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকা, বিভিন্ন দূর্নীতি সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আলিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য অনেকটা গলার কাঁটায় পরিনত হয়েছে। প্রতিষ্ঠার এতদিনেও স্থায়ী ক্যাম্পাসে যেতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়টি।
ফাজিল শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার কারণ শুধু মাত্র শিক্ষা জীবনে একটা ডিগ্রি ও সার্টিফিকেট অর্জন অনেকের নিকট মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনদিন ক্লাস না করেও ফাজিল কামিলের সার্টিফিকেট ধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিসাব করে নির্ণয় করা মুশকিল।
অনেকের মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার কারণে চাকরির ক্ষেত্রে যোগ্য হয়েও বাদ পড়তে হয়েছে। উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোয় যার প্রমাণ। ক'দিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা উচ্চ মাধ্যমিকে মাদরাসা থেকে পড়ে এসেছে তাদের মেধা বৃত্তি সঠিক ভাবে দেওয়া হচ্ছে মর্মে আন্দোলন করেছিল। কতটুকু অবহেলিত মাদরাসা শিক্ষার্থীরা এটি আরেকটি প্রমাণ।
দেশের আলেম উলামারা( কতিপয় অংশ ) বর্তমান সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতার মহাকাব্য রচনা করে। ইসলাম প্রচার প্রসারে, মাদরাসা শিক্ষার আধুনিকায়নে সরকারের ভূমিকা নিয়ে মহাকাব্য রচনা করে। অথচ নিজেদের স্বগোত্রীয় শিক্ষকরা ভাতে মরে!
দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভাব নেই। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোর শিক্ষকরা যে পরিমাণ সুবিধা সরকার থেকে পায় তার সিকি ভাগও এবতেদায়ী শিক্ষকরা পায়না। আমি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতি হিংসা রাখছিনা। বলছি সরকারের দ্বিমূখী নীতির কথা।
আলিয়া মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষিদের নীল নকশা দৃশ্যমান। তাদের চেষ্টা সর্বোচ্চ গতিতে এগিয়ে চলছে। তাদের চেষ্টাকে আরও বেশি তরান্বিত করছে খোদ আলিয়া ধারার আলেমরা। তাদের ঘুমন্ত বিবেক এখন না জেগে উঠলে অচিরেই আমাদেরকে শুনতে হবে দেশ থেকে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেমন করে স্কুল কলেজ গুলো থেকে ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি উঠে যাওয়ার পথে। তখন আফসোস করলেও লাভ নেই।
আরেকটা বিষয় হলো আমরা আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে যোগ্য আলেম জাতিকে উপহার দিতে অক্ষম কেন হচ্ছি?
এ প্রশ্নের জবাবে বলবো তোষামোদ করে কখনোই নায়েবে রাসূল তৈরি সম্ভব না। সম্মানিত মুহাদ্দিসবৃন্দ শিক্ষার্থীদেরকে যখন হাদিসের দারস দিবেন তখন শিক্ষার্থীরা তা হৃদয়ঙ্গম করতে ব্যর্থ হওয়াটা স্বাভাবিক। কারণ ঐ মুহাদ্দিস নিয়োগ পেয়েছে এলাকার এমপির সুপারিশে। স্বভাবতই মুহাদ্দিস এমপি নারাজ হয় এমন দারস দিবেন না। অথচ ঐ এমপি ইসলামী অনুশাসন বাস্তবায়ন হোক এটা চায় না।
অনার্স স্বীকৃতি, সরকারি অর্থায়নে ভবন সহ ইত্যকার সুবিধা পেয়ে অনেকে খুশিতে গদগদ করে। আদতে এরমধ্যে কি লুকিয়ে আছে তা অনুধাবনে অক্ষম হর্তাকর্তারা!
অনার্স এসেছে এটা সুখের কথা, কিন্তু ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান এসব বিষয়ে অনুপস্থিত। পরিতাপের বিষয় হলো কামিল পাশ অনেকে সহীহ শুদ্ধ ভাবে সূরা ফাতিহা পর্যন্ত তিলাওয়াত করতে পারে না।
বর্তমান সময়ে আধুনিক জাহেলিয়াতকে মোকাবেলা করতে হলে একদল যোগ্য মর্দে মুজাহিদের প্রয়োজন। অথচ মুজাহিদ তৈরির কারাখানা মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করছে ভোঁতা মুজাহিদ। যারা তোষামোদগীরিতে পটু। যারা আধুনিক জাহেলিয়াতকে আলিঙ্গন করে ইসলামের নাম নিশানা উড়িয়ে দিতে স্বাগত জানাচ্ছে! আহ!
এ সময়ে গর্জন এবং বর্জন উভয়টি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বর্জন করতে হবে চাটুকারী মনোভাব। গর্জন দিতে হবে ইসলামি শিক্ষা ব্যবস্থার আসল রূপরেখা সম্বলিত ইশতেহারের। আল্লাহ আমাদের সহায় হোক।
এলোমেলো ভাবনা নিয়ে উপরোক্ত কথা বলার সাহস নিয়েছি। যার জন্য সবার নিকট দু'আ ও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
পরিশেষে আলিয়া মাদরাসা দিবসে আলিয়া মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য যারা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন ঐসব আলেম উলামাদের জন্য উত্তম জাজা কামনা করছি। আমিন।
মন্তব্য: ০