আমি কাফেরদের ওপর জান্নাতকে হারাম করেছি
তারিখঃ ২৪ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪:৪৮
আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
يَلْقَى إِبْرَاهِيْمُ أَبَاهُ آزَرَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَعَلَى وَجْهِ آزَرَ قَتَرَةٌ وَغَبَرَةٌ فَيَقُوْلُ لَهُ إِبْرَاهِيْمُ أَلَمْ أَقُلْ لَكَ لَا تَعْصِنِيْ فَيَقُوْلُ أَبُوْهُ فَالْيَوْمَ لَا أَعْصِيْكَ فَيَقُوْلُ إِبْرَاهِيْمُ يَا رَبِّ إِنَّكَ وَعَدْتَنِيْ أَنْ لَا تُخْزِيَنِيْ يَوْمَ يُبْعَثُوْنَ فَأَيُّ خِزْيٍ أَخْزَى مِنْ أَبِيْ الأَبْعَدِ فَيَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى إِنِّيْ حَرَّمْتُ الْجَنَّةَ عَلَى الْكَافِرِيْنَ ثُمَّ يُقَالُ يَا إِبْرَاهِيْمُ مَا تَحْتَ رِجْلَيْكَ فَيَنْظُرُ فَإِذَا هُوَ بِذِيْخٍ مُلْتَطِخٍ فَيُؤْخَذُ بِقَوَائِمِهِ فَيُلْقَى فِي النَّارِ-
কিয়ামতের দিন ইবরাহিম (আ.) তার পিতা আযরের দেখা পাবেন। আজারের মুখমণ্ডলে কালি এবং ধূলাবালি থাকবে। তখন ইবরাহিম (আ.) তাকে বললেন, আমি কি পৃথিবীতে আপনাকে বলিনি যে, আমার অবাধ্যতা করবেন না? তখন তাঁর পিতা বলবে, আজ আর তোমার অবাধ্যতা করব না। অতঃপর ইবরাহিম (আ.) আবেদন করবেন, হে আমার রব! আপনি আমার সঙ্গে ওয়াদা করেছিলেন যে, হাশরের দিন আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না। আমার পিতা রহম হতে বঞ্চিত হবার চেয়ে বেশী অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কাফিরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছি। পুনরায় বলা হবে, হে ইবরাহিম! তোমার পদতলে কী? তখন তিনি নীচের দিকে তাকাবেন। হঠাৎ দেখতে পাবেন তাঁর পিতার জায়গায় সর্বাঙ্গে রক্তমাখা একটি জানোয়ার [হায়েনা] পড়ে রয়েছে। এর চার পা বেঁধে জাহান্নামে ছুঁড়ে ফেলা হবে। [ বুখারি: ৩৩৫০]
ব্যাখ্যা
আল্লাহ পাক রব্বুল আলামিন কাফেরদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং যেই ব্যক্তিই আল্লাহ তা’আলাকে অস্বীকার করা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী। তার ব্যাপারে ওয়াদা সহ্য। সুতরাং কোনো সুপারিশ ও বংশীয় মর্যাদা তার কোনো কাজে আসবে না।
হাদিসটির মাধ্যমে নবিজি সা. সংবাদ দিচ্ছেন যে, কিয়ামতের দিন নবি ইবরাহিম আ. –এর সাক্ষাৎ হবে স্বীয় পিতার সঙ্গে। আর তখন তার পিতা আজরের চেহারায় কালি ও ধূলিবালি থাকবে। হজরত ইবরাহিম পিতাকে তিরস্কার করে বলবে: “আমি কি তোমাকে বলিনি, আমার অবাধ্যতা করো না?”
অর্থাৎ ইবরাহিম আ. যখন তার পিতাকে আল্লাহর অবাধ্যতা না করার অনুরোধ করেছিলেন সেইদিকে ইঙ্গিত করবেন। কোরআনে আল্লাহ পাক বলেন:
اِذۡ قَالَ لِاَبِیۡهِ یٰۤاَبَتِ لِمَ تَعۡبُدُ مَا لَا یَسۡمَعُ وَ لَا یُبۡصِرُ وَ لَا یُغۡنِیۡ عَنۡكَ شَیۡئًا ﴿۴۲﴾ یٰۤاَبَتِ اِنِّیۡ قَدۡ جَآءَنِیۡ مِنَ الۡعِلۡمِ مَا لَمۡ یَاۡتِكَ فَاتَّبِعۡنِیۡۤ اَهۡدِكَ صِرَاطًا سَوِیًّا ﴿۴۳﴾ یٰۤاَبَتِ لَا تَعۡبُدِ الشَّیۡطٰنَ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ كَانَ لِلرَّحۡمٰنِ عَصِیًّا ﴿۴۴﴾ یٰۤاَبَتِ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اَنۡ یَّمَسَّكَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحۡمٰنِ فَتَكُوۡنَ لِلشَّیۡطٰنِ وَلِیًّا ﴿۴۵﴾
যখন তিনি তার পিতাকে বললেন, হে আমার পিতা! আপনি তার ইবাদাত করেন কেন যে শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোন কাজেই আসে না? হে আমার পিতা! আমার কাছে তো এসেছে জ্ঞান যা আপনার কাছে আসেনি; কাজেই আমার অনুসরণ করুন, আমি আপনাকে সঠিক পথ দেখাব। হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদত করবেন না। শয়তান তো দয়াময়ের অবাধ্য। হে আমার পিতা! নিশ্চয় আমি আশংকা করছি যে, আপনাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে, তখন আপনি হয়ে পড়বেন শয়তানের বন্ধু। [সূরা মারয়াম: ৪২-৪৫]
অতঃপর তাঁর পিতা আজর অবিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি জানতে পেরে বলবেন: “আজ আমি তোমার কথা অমান্য করব না।” তখন হজরত ইবরাহিম আ. আল্লাহ তা’আলার দিকে মনোনিবেশ করে পিতার জন্য সুপারিশ কামনা করে বলবেন: “হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ওয়াদা দিয়েছিলেন মানুষের পুনরুত্থান দিবসে আপনি আমাকে লজ্জিত করবেন না, আমাকে লাঞ্ছিত ও অপদস্ত করবেন না।” তারপর ইবরাহিম আ. বলবেন: “আমার বাবা রবের করুণা ও দয়া থেকে দূরে থাকার চেয়ে বড় অপমান, অপমান এবং অপমান আমার জন্য আর কী হতে পারে?”
প্রতিপালক রব্বুল আলামিন হজরত ইবরাহিম আ. –কে চূড়ান্ত শব্দের মাধ্যমে উত্তর দেন। আল্লাহ পাক বলেন যে, তিনি অবিশ্বাসীদের জন্য জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন। তারপর ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে বলা হবে: তুমি তোমার পায়ের নীচে দেখ। ইবরাহিম আ. তাকিয়ে দেখতে পাবেন একটি রক্তাক্ত পশমযুক্ত নোংরা প্রাণী মরে পড়ে আছে। তারপর সেই জন্তুর হাত-পা বেঁধে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে। হজরত ইবরাহিম আ. এর সামনে এই আকৃতি উপস্থাপন করা হয়েছে যেন তিনি তার থেকে মুক্ত হন। আর আকৃতিটি হায়েনার আকৃতি হওয়ার পেছনের রহস্য হলো, হায়েনা সবচেয়ে গাফেল প্রাণী। আর তাদের গাফিলতি হলো, যেসব ব্যাপারে তাদের সজাগ ও সচেতন থাকা আবশ্যক সে ব্যাপারে তারা গাফেল থাকে।
সুতরাং আজর যখন মানুষের মধ্য থেকে তার প্রতি সবচেয়ে বেশি দয়ার্দ্র ব্যক্তির উপদেশ গ্রহণ করেনি এবং শয়তানের প্রতারণা ও প্রবঞ্চনাকে মেনে নিল তখন তার দৃষ্টান্ত হয়ে গেল সেই হায়েনার মতো, যে নিজের ব্যাপারে গাফেল থাকে।
হাদিস থেকে ফায়দা: হজরত ইবরাহিম আ. কে আল্লাহ তা’আলা সম্মান দান করেছেন। হাদিসে আরো দলিল পাওয়া যায় যে, সন্তানের ইসলাম কিয়ামতের দিন পিতার জন্য কোনো কাজে আসবে না, যদি পিতা মুসলিম না হয়।

মন্তব্য: ০