আগামীর খাদ্য চ্যালেঞ্জ
তারিখঃ ২৮ অক্টোবর, ২০২৪, ১৩:৫৩

১৮০০/১৯০০ সালে দেশ দখল করে সম্পদ লুট করা হতো, ইউরোপিয়ানরা এটা করেছে ।
এখন করা হয় অর্থনীতি লুট,
আমাদের দেশের প্রধান সম্পদ - কৃষি লুট হয়ে যাচ্ছে ।
এই যেমন ধরেন, আমাদের দেশের যত সবজি, সব বীজের জন্য আমরা দেশি বীজ ধ্বংস করে বিদেশী হাইব্রিড বীজের উপর নির্ভরশীল হয়ে গেছি ।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্য অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে মাত্র ৭ শতাংশ বীজ উৎপাদিত হয়। বাকি ৯৩ শতাংশই আমদানি করতে হয়।
কিভাবে এটা হলো ?
কেন হলো ?
সবুজ বিপ্লবে নর্মান বর্লাগ গমের উপরে পরীক্ষা নিরীক্ষা করেন এবং সিলেক্টিভ মডেল এবং বায়োটেকনোলজি নিয়ে । যে জাত গুলো ফাঙ্গাস এবং রোগ প্রতিরোধি সেগুলোকে নিয়ে ফসল ফলানোর চেস্টা করেন।
এটা এতই বেশি উৎপাদন করা শুরু করে যে, ১৯৫৩ সালে শুরু করা প্রজেক্ট এর কারনে, মেক্সিকোর খাবারের সমাধান হবার পরেও তারা রফতানি করা শুরু করে ১৯৬৩ সালেই ।
এই সাফল্য পাকিস্তান এবং ইন্ডিয়াতেও প্রভাব ফেলে এবং এখানেও একই উপায়ে ফসল ফলানো শুরু হয় । পাকিস্তান ১৯৬৫ তে ৫ মিলিয়ন টনকে ১৯৭০ এ ৮ মিলিয়ন টনে নিয়ে যায় ।
এরপরে এটার বীজকে হাইব্রিড বীজ নাম দিয়ে এমন বীজ বাজারে নিয়ে আসা হয় যে বীজ একবার ফলন দেয়, কিন্তু সেই ফসলের বীজ আবার বুনলে তেমন বেশি ফলন হয় না ।
অতিরিক্ত বেশি উৎপাদনের ফলে, চাষিরা বেশি লাভের আশায় বেশি পরিমানে এই ধরনের হাইব্রিড বীজ চাষাবাদ শুরু করে ।
আর, বিভিন্ন স্থানীয় বীজগুলো সারা দুনিয়াতেই গুরুত্ব হারাতে থাকে ।
ফলে, বর্তমানে সারা দুনিয়াতেই পুজিবাদি কোম্পানিদের বীজের রাজত্ব ।
যেখানে আমাদের দেশের চাষিরা প্রতি ফলনের পরেই দেশী বীজ নিজেরাই সংরক্ষণ করতেন - এখন তেমনটা হয় না ।
এমনকি ধান বীজ পর্যন্ত চাষিরা বাজার থেকে কেনে ।
আমাদের দেশের ডলার সংকট চলছে খবরের কাগজে আমরা সবাই জানি ।
কোনভাবে যদি মাত্র ২ মাস বীজ আমদানি বন্ধ থাকে, তাহলে সামনের শীতের সিজনে কাচা মরিচের কেজি ১২০০ তে কিনতে হবে।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়ে আমেরিকা একটা নতুন পলিসি নেয়, ফুড অ্যাজ আ ওয়েপন ।
তারা মাঠের পর মাঠ ফসল পুড়িয়ে দিত যেন ভিয়েতনামিজরা খাবার না পায় । এই পলিসি থেকেই আসে বর্তমানের ফুড পলিসি ।
আফ্রিকার আছে সবচেয়ে বেশি জমি অথচ সেখানের অনেক দেশেই মানুষ পুস্টিকর খাবার পায়না ।
ভারতীয় উপমহাদেশে আছে সবচেয়ে উর্বর জমি অথচ এখানে ৭০% শিশু পুস্টিকর খাবার পায়না ।
হাইব্রিড ফসল উৎপাদন বাড়ায়, কিতু পুস্টি মান বিচারে তা ১০ গুণ কম পুষিট দেয় । মনোক্রপ, যেখানে একটা ফসলই এক জমিতে ফলানো হয় সেখানে উৎপাদন তো বাড়ে, কিন্তু এতে করে ফসলের সারের খরচ, কীটনাশক ব্যাবহার এর খরচ যায় বেড়ে ।
আমরা ফসলে ইউরিয়া দেই যা নাইট্রোজেন দেয় মাটিতে, অথচ এইখানেই পলিক্রপ (এক জায়গায় অনেক ফসল) করলে, যেকোন ডাল জাতীয় কোন সবজি করলে সেটাই মাটিতে নাইট্রোজেন ফিক্স করে দিত ।
অথচ, ইউরিয়া দেয়ার কারনে পোকারা বেশী আসে ।
আমরা, সার দিয়ে খরচ বাড়াই, কীটনাশক দিয়ে খরচ আরো বাড়াই ।
এই বীজে তাদের উপর নির্ভরশীল আমরা, সেই ফসল যেন তাদেরই দেয়া কীটনাশক সহনশীল হয় সেটাই তারা তাদের ল্যাবে ডিজাইন করে আমাদের চাষীদের দেয় ।
এরপরে, তারা ট্রেনিং দেয়, বৃত্তি দেয়, তাদের তৈরি সিলেবাস আমাদের গেলায় - এবং এদের পক্ষে মিডীয়াও সাফাই গায় ।
আমরা পেট ভরে তো খাই, কিন্তু পুস্টি না পেয়ে পাই ক্যান্সার !
এরপরে তাদেরই বানানো ঔষধ খাই ।
এইসব সমস্যার সমাধান করবে কে ?
কে বিড়ালের মুখোশ পড়ে থাকা চিতাবাঘের সামনে গিয়ে লড়াই করবে ? !!
আমেরিকায় কোন চাষী যদি ভুট্টা বীজ সংরক্ষন করেন পরের সিজনে লাগানর জন্য - তবে তিনি সেই কোম্পানির বীজ রাখার দায়ে জেলে যাবেন এবং বিরাট অংকের অর্থ দন্ড দিতে বাধ্য থাকবেন ।
পেটেন্ট করা আছে, কেউ বীজ সংরক্ষণ করতে পারবে না ।
তাকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কাছে থেকেই বীজ কিনতে হবে ।
আমাদের বাজারের কোণ বীজের দোকানে আপনি দেশি বীজ পাবেন না । ব্যক্তি পর্যায়েও দেশি জাতের সবজি বীজ প্রায় বিলুপ্ত ।
এই যে ৩২০০ কোটি টাকার বীজ আমদানি করতে হয় - এইভাবে লুট করা আমাদের বীজের বাজার ফিরে পাবার তেমন আর কোন উপায় নাই ।
কিছুই, না, ইন্দোনেশিয়া আর ভারত যদি আমাদের কাছে বীজ না পাঠায় - তবে পরের সীজনে দেশের ৭০% জমিতে ফসল ফলবে না ।
এই যে বীজের ব্যাবসা তাদের হাতে আমরা তুলে দিয়েছি - এটাকে তারা কিভাবে ব্যাবহার করবে ?
শুধুই কি ব্যাবসা হিসেবে নাকি অস্ত্র হিসেবে?
আমাদের করনীয় কি...?
বিষমুক্ত ও নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন
copy post

মন্তব্য: ১