Alapon

স্বাধীনতার ৪৭ বছর: বয়ে চলেছি ঋণের বোঝা

অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার পাশাপাশি বেড়েছে বাজেটের আকার। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বাজেট ঘাটতি। ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিচ্ছে সরকার। এ ঋণ বছর শেষে শোধ না করে স্থিতি হিসাবে রেখে দিচ্ছে। বর্তমানে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৯ হাজার টাকা।

সর্বশেষ খানা জরিপ অনুসারে দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ ৫০ হাজার। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে রাষ্ট্রের মোট ঋণের পরিমাণ ৭ লাখ ৯৮ হাজার কোটি টাকা। হিসাব অনুসারে মাথাপিছু ঋণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার ৩৩৫ টাকা।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সরকার ঠিকমতো ঋণ ব্যবস্থাপনা করতে পারছে না বলেই এর দায় নিতে হচ্ছে জনগণকে। চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য দেওয়া ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে অনুন্নয়ন বাজেট ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৩ কোটি টাকার। এর মধ্যে সুদ পরিশোধে রাখা হয়েছে ৪১ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা, যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদই ৩৯ হাজার ৫১১ কোটি টাকা। মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ অর্থই ব্যয় হচ্ছে ঋণের সুদ পরিশোধে। সুদ পরিশোধের পুরো বরাদ্দ কোন কোন খাতে ব্যয় করা হবে, বাজেটে তার চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় হবে সঞ্চয়পত্রের সুদে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় হবে মেয়াদি ঋণের সুদে।

জানা গেছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ২৪ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ। এই অর্থবছরে মোট মাথাপিছু ঋণ ছিল ১৫ হাজার ৭২৪ টাকা। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ৮৬৩ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪৮ লাখ। এ অর্থবছরে মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ১৭ হাজার ১১৯ টাকা।

২০০৯-১০ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৭৮ লাখ। এই অর্থবছরে মাথাপিছু ঋণ ১৬ হাজার ১৭ টাকা। মাথাপিছু আয় ছিল ৬২ হাজার ৪০০ টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ ছিল ২ লাখ ৭৪ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৯৭ লাখ। এই অর্থবছরে মাথাপিছু ঋণ ছিল ১৮ হাজার ৩২৬ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ১৭ লাখ। এই অর্থবছরে মাথাপিছু ঋণ ছিল ১৯ হাজার ৭৪৩ টাকা।

২০১২-১৩ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ ছিল ৩ লাখ ৩৬ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৩৭ লাখ। মাথাপিছু ঋণ ছিল ২১ হাজার ৮৯৪ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশি ও বৈদেশিক ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৫৮ লাখ। মাথাপিছু ঋণ ছিল ২৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে দেশি ও বিদেশি ঋণ ছিল ৩ লাখ ৭২ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৭৯ লাখ। মাথাপিছু ঋণ ছিল ২৩ হাজার ৫৬৬ টাকা।

মাথাপিছু ঋণ নিয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান ২০১৪ সালে প্রতিবেদন তৈরি করে। সেখানে বলা হয়, বৈদেশিক ঋণ বাড়ায় বাড়ছে ঋণ পরিশোধের চাপ। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ফলে বৈদেশিক সম্পদের পরিমাণও কমে যাচ্ছে। সুদ পরিশোধ করতে গিয়ে বাজেট ঘাটতি বড় হয়ে যাচ্ছে। বাজেট ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা উৎপাদনশীল খাতের বরাদ্দকে সংকুচিত করার মাধ্যমে অর্থনীতিতে উৎপাদন সক্ষমতা হ্রাস করতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, উন্নয়নের পথে গতি আনতে বিনিয়োগ দরকার। এ জন্য ঋণের প্রয়োজন আছে। ঋণের টাকা উন্নয়নে ব্যবহার হয় কিনা তা দেখা দরকার। ঋণের টাকা উৎপাদনে ব্যয় হলে সমস্যা নেই। কিন্তু ভোগে ব্যবহৃত হলে তার প্রভাব পড়বে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর।

পঠিত : ১১৯৫ বার

মন্তব্য: ০