Alapon

মহান টলস্টয়



এই মানুষটি কোনো ভিক্ষুক বা ভবঘুরে নন।।

তিনি লিও টলস্টয়—বিশ্বসাহিত্যের এক মহান নাম। রাশিয়ার এই মহান ঔপন্যাসিক এবং দার্শনিকের লেখা উপন্যাস *"War and Peace"* এবং *"Anna Karenina"* আজও সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কীর্তিগুলোর অন্যতম বলে বিবেচিত। বাস্তববাদী সাহিত্যের একজন অগ্রগণ্য পথিকৃৎ হিসেবে তার অবদান অপরিসীম।

তবে শুধু সাহিত্যিক প্রতিভার জন্যই নয়, টলস্টয় স্মরণীয় তার জীবনের দর্শন এবং মানবতার প্রতি অগাধ ভালোবাসার জন্য। ধনসম্পদ, আরাম-আয়েশের জীবন, সবকিছু তিনি ত্যাগ করেছিলেন। তার বিশ্বাস ছিল, গৃহহীনদের জন্য আশ্রয় এবং ক্ষুধার্তদের জন্য খাবার নিশ্চিত করাই মানবতার প্রকৃত সেবা। তার জীবন ছিল এক জীবন্ত উদাহরণ যে, প্রকৃত সুখ খুঁজে পাওয়া যায় ত্যাগের মধ্য দিয়ে।

লিও টলস্টয় ১৮২৮ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর রাশিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। কিন্তু বিলাসী জীবন তাকে কখনো টানেনি। বরং জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পাওয়ার তাগিদে তিনি আত্মনিবেদন করেছিলেন সাহিত্য, দর্শন, এবং মানুষের কল্যাণে। ১৯১০ সালের ২০শে নভেম্বর তিনি পরলোকগমন করেন। কিন্তু তার রচনা এবং আদর্শ আজও মানুষের মননে অমর হয়ে আছে।

টলস্টয়ের লেখা শুধু কাহিনি নয়; তার রচনাগুলোতে নৈতিকতা, ন্যায়বোধ, এবং মানবিকতার গভীর প্রশ্ন উঠে এসেছে। মানুষ কিভাবে নিজের জীবনের সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে বৃহত্তর কল্যাণে আত্মনিয়োগ করতে পারে, তার প্রতিফলন দেখা যায় তার রচনায়।

✅তার কিছু বিখ্যাত উক্তি আজও আমাদের প্রেরণা জোগায়:
-“তোমার ধর্ম সম্পর্কে আমাকে কিছু বলার দরকার নেই; তোমার কাজের মধ্যে তা আমি দেখতে চাই।”
- “যদি তুমি নিজের কষ্ট অনুভব করো, তবে তুমি জীবিত। কিন্তু যদি তুমি অন্যের কষ্ট অনুভব করো, তবে তুমি প্রকৃত মানুষ।”

টলস্টয়ের প্রভাব শুধুমাত্র সাহিত্য জগতে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং দার্শনিক। তার অহিংস প্রতিরোধের দর্শন এবং সরল জীবনের আদর্শ মহাত্মা গান্ধী ও মার্টিন লুথার কিং জুনিয়রের মতো নেতাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিল। গান্ধী নিজেই একাধিকবার বলেছেন, টলস্টয়ের আদর্শ তার জীবনে এক বিশেষ ভূমিকা রেখেছে।

টলস্টয়ের জীবন ও কাজ আমাদের শেখায় যে মানবতার জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করা কতটা মহৎ। তিনি দেখিয়েছেন, জীবনের প্রকৃত সার্থকতা পাওয়া যায় অন্যের জন্য কিছু করার মাধ্যমে। টলস্টয় শুধু একজন সাহিত্যিক নন; তিনি মানবতার একজন পথপ্রদর্শক।

- সংগৃহীত

পঠিত : ৫২ বার

মন্তব্য: ০