খেলাফত ও রাজতন্ত্র
তারিখঃ ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ২২:০৩
আস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ,
একটা অংশে আসার পর আচমকা থমকে গেলাম। ইমাম ত্বহাবি বলছেন, তাদের (সাহাবা) প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অংশ এবং বিদ্বেষ নিফাক। মনে পড়ল আজ থেকে প্রায় ২-৩ বছর আগের একটি রাত।
তাহাজ্জুদের সালাতের ওয়াক্ত। হৃদয়ের সাগরে একের পর এক ঢেউ ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। চোখে অশ্রু। রাগ-ক্ষোভ, বিরক্তি আর সন্দেহ। একেকটি অধ্যায় আমার কাছে ভার হতে লাগল। বইটি এক বৈঠকে শেষ করলাম। বইয়ের নাম ‘খেলাফত ও রাজতন্ত্র’। তার আগে ‘কারাগারের রাতদিন’ পড়ে এমন অবস্থা হয়েছিল। কান্না ধরে রাখার মত না।
মনে হতে লাগল, উক্ত সাহাবাদের কারণেই আজ আমাদের এমন করুণ পরিণতি। তাদের হাতেই খেলাফত ধংস হয়েছে। সবচেয়ে সন্দেহ এবং রাগ জমা হলো আবু মূসা আল-আশয়ারি রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু-এর প্রতি। (হে আল্লাহ! আপনি যাদেরকে ভালোবাসেন আমিও তাদেরকে ভালোবাসি।)
তাঁর অনেক হাদিস আমার পড়া হয়েছিল। সন্দেহ তৈরি হলো, তবে তিনি এসব মিথ্যা বর্ণনা করেননি এসবের কোন নিশ্চয়তা আছে কি?
কয়েকজন সাহাবার প্রতি রাগ-ক্ষোভ আর সন্দেহ জমা হলো। কিন্তু মন আবার এসবে সায় দিচ্ছিল না। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করেছে এতক্ষণে।
কারো এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে কিনা জানি না। তবে আমার হয়েছে। পরদিন একজন ভাইকে বিষয়টি বললাম। তিনি বললেন, সাহাবাদের বিষয়ে এমন ধারণা আসা উচিত নয়। কিন্তু মন মানছিল না।
হয়ত আমার এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার পিছনে কতগুলো কারণের মাঝে উল্লেখযোগ্য কারণ হলো হাদিস শাস্ত্রের প্রতি টান থেকে আমি উসুলুল হাদিস নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছি। ফলে এমন সব নীতি জানা ছিল যা সহজেই এসব কথার আলোকে সাঁজালে আমার সন্দেহ হওয়াটা একেবারে স্বাভাবিক।
আমি মাওলানা রহিমাহুল্লাহ-কে সাহাবা বিদ্বেষী বলতে চাই না। এমন বলাটা যথারীতি যুলুম হয়ে যাবে। তবে তাঁর বইটি পড়ে আমার অবস্থা এমনি হয়েছিল। এমন অবস্থা তৈরি হওয়ার পিছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করতে চাই। যেমন-
১) মাওলানার বলার ধরণ-
তিনি প্রত্যেকটি কথা বলেছেন যে তা সহজেই মনের মাঝে ক্ষোভ এবং সন্দেহ উদ্রেক করেছে। এভাবে আমি আর কাউকে বর্ণনা করতে দেখি নেই। বাকিদের কথা বলা এবং শ্রদ্ধা দেখে মনে হত যেন কোন অন্য জগতের কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
যেন অপরাশেন থিয়েটরে রোগীর উপরে চুরি চালানো হচ্ছে; চুরির সাবধানতা অবলম্বন না করলে মৃত্যু নিশ্চিত।
২) যোগ্যতার অভাব-
আমি যতজনকে উক্ত বই পড়তে দেখেছি তাদের বেশিরভাগ অংশ একাদশ থেকে অনার্সের ছাত্র; তাও আবার স্কুলের ছাত্র। যাদের কাছে আকিদা, ইসলামের ইতিহাস, সনদ, মতন, বর্ণনারীতি ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ জ্ঞান নেই। তাদের মাঝে আমিও একজন। ফলে বই পড়ে অবস্থা গুলিয়ে যায়।
৩) মাওলানার সিয়াসাতকে বেশি জোর দেওয়া-
আমার সাথে কেউ একমত হতে না পারেন। আল্লাহ ভুল হলে আমাকে মাফ করুন। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে তিনি সকল কিছুতেই সিয়াসাতকে বেশি জোর দেন। ফলে এমন কিছু কথা এবং ব্যাখ্যা বের হয়ে আসে।
তিনি কাউকেই পরোয়া করেন না। এটা কিছুক্ষেত্রে ভালো তবে কিছু খারাপ প্রভাবও আছে। আজকে এমন কিছু ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি; যা আমাদের মাঝে হতাশা তৈরি করেছে। তিনি সেখানে গণতন্ত্র-খেলাফত-রাজতন্ত্র নিয়ে এমন ভঙ্গিমায় বক্তব্য দিয়েছেন যা আমার কাছে অবাক লাগে।
৪) উস্তাদবিহীন পাঠক-
উক্ত বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। তিনি সত্য বলেছেন কিন্তু তবুও এখানে অবস্থা অপারেশন থিয়েটরের মতো। ফলে কোন অযোগ্য ব্যক্তি এসব যখন কোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ও নির্দেশনা ব্যতীত পড়া শুরু করেন তখন সে যে উলট-পালট হবেন তার সম্ভাবনায় বেশি।
এত কিছুর পরও আমার কাছে মনে হয় যে অযোগ্য পাঠকদের জন্যই এমন অবস্থা তৈরি হতে পারে। মাওলানার কিছু কথা বাদে বেশিরভাগ কথার সাথেই আমি একমত হয়েছিলাম। কিন্তু এমন অবস্থা তৈরি হওয়া আমাকে রীতিমতো পীড়া দেয়। আমি একটি রাত কেন এমন কাটিয়েছিলাম?
বইটি আমার যতটুকু মনে পড়ছে দুইবার পড়েছি এবং একবার আংশিক পড়েছিলাম। আমার এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সম্ভবনা কম। যেমন তৃতীয়বার এমন হয়নি।
উক্ত কথাগুলো অনেকেরই মানতে কষ্ট হবে। তবে আমি ক্লিয়ার করছি এসব আমার অনুভূতি। মাওলানার কথাকে রদ করার যোগ্যতা আমার নাই। আমি সর্বোচ্চ যা করি তাহল আলিমদের অনুসরণ। তাঁকে আমি আল্লাহর জন্য ভালোবাসি। কেউ অন্যায় কথা বললে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করি। যেমন- কেউ বলে তিনি সাহাবী বিদ্বেষী ইত্যাদি। এসব অন্যায় কথা থেকে আমি দূরে থাকি।
লেখাটি তাদের জন্য যারা সাবধানতা অবলম্বন করতে চান। আল্লাহ তায়ালা তাঁর ভুলগুলো ক্ষমা করুন। আমাদের অন্তরকে সাহাবাদের জন্য সন্তুষ্ট করে দিন।
বই পড়ার আগে আলিমদের সাথে পরামর্শ করুন।
মন্তব্য: ০