Alapon

আমি অপেক্ষা করি না, কিন্তু প্রতিক্ষা করি...

কীভাবে যেন তার সাথে পরিচয়টা হয়ে গেল। তবে শুরুটা খুব একটা সুখকর ছিল না।

পরিচয়ের পরের দিনই তিনি আমাকে ফেসবুকে ব্লক করে দিয়েছিলেন। ব্লক করা নিয়ে আমার কোন আফসোস ছিল না। বরঞ্জ বেশ ভালোই লাগছিল। যাক,আমি কারও সুখের কারণ হতে না পারলেও, অন্তত বিরক্তের কারণ তো হতে পেরেছি। এই সমাজে যে আমার কোনই ভূমিকা নেই তা আর কেউ বলতে পারবে না!...

পরিচয়ের ‍শুরুতে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, ‘আমি কোথায় পড়াশুনা করছি?’
এই একটি প্রশ্নের উত্তর সহসা কাউকে দিয়েছি বলে, আমার মনে পড়ে না। তাকেও দেইনি। তিনি ভেবে বসলেন- এ আমার অহংকার। 
আমি হাসলাম। খুবই হাসলাম। এই হাসিটাই ছিল ব্লক করার কারণ!

যাইহোক, এরপর নিজে থেকেই আমাকে আনব্লক করলেন। মাঝে বিরতি দিয়ে কখনো কথা হতো, কখনো হতো না। একদিন বললেন-আপনার সাথে দেখা করব। একদিন আসুন।

কোন এক শুক্রবার সন্ধ্যায় তার সাথে আমার দেখা হল। পূব আকাশের অতিকায় বিরাট সোনালী আভার চাঁদটাকে সামনে রেখে যখন আমরা হাটছিলাম তখন তিনি বললেন, আমার বিবাহ প্রায় ঠিক হয়ে গেছে। কারও বিবাহের সংবাদ শুনলে যেরূপ প্রতিক্রিয়া দেখাই তেমনটাই দেখালাম- শুকরিয়া, আলহামদুলিল্লাহ।
তিনি আমার চোখের পানে খানিকক্ষণ তাকালেন। তিনি চোখের মাঝে অন্য কিছু খুঁজতে চেষ্টা করেছিলেন কিনা, আমার জানা নেই। তবে তার চাহুনিটা ছিল অদ্ভূদ...

নাম না জানা আমার মাথা সমান গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে তিনি পুনরায় প্রশ্ন করলেন- আমি কী কোন কারণে আপনার কষ্টের কারণ হবো?
ঠিক সেই সময় আমার স্মৃতি পটে মিঠাপুকুরের এক গহীণ গ্রামের এক খালার কথা মনে হল। ঐ গহীণ গ্রামের একটি বাড়িতে মাস তিনেক থাকার সুযোগ হয়েছিল। আর সেই বাড়িতেই তিনি কাজ করতেন।

সেই বাড়ি থেকেও মাঝে মাঝে লাপাত্তা হয়ে যেতাম। আবার কোন এক রাতে চলে আসতাম। তিনি একদিন বললেন-বাবা, কখনো ফুল গাছ লাগাইছিলেন? ছোট ছোট ফুল গাছদের যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নেয়, তখন তার সাথে ঐ স্থানের মাটিও নিয়ে যায়। গাছের আর ঐ জায়গার প্রতি মায়া থাকে না। কিন্তু ঐ মাটিতে থাকা অন্য ফুল গাছগুলোর ঐ গাছটির প্রতি মায়া থেকেই যায়।

আপনে হইলেন গাছ মানুষ। যখন যে স্থান ত্যাগ করেন, ঐ স্থানের মায়া-মমতা-আবেগ সব নিয়া যান। আপনার কোন আফসোস বা কষ্ট থাকে না।

বিদায় বেলায় তাকে জ্যোৎস্না দেখবার দাওয়াত দিয়েছিলাম। বলেছিলাম- জ্যোৎস্না জলের কাছাকাছি থেকে দেখতে হয়। তবেই চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। তিনি বলেছিলেন আসব...

আমি নিজেকে প্রশ্ন করি- আচ্ছা আমি কি অপেক্ষা করছি?

একবার উত্তর আকাশের চন্দ্র দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। বন্ধুকে বলেছিলাম- উত্তর আকাশের চাঁদ যে এতো সুন্দর আর এত্তোটা বড় হয় আগে জানতাম না তো। মনে হচ্ছে, চন্দ্রটা আমার কোলে চলে আসবে।

তার হাতে থাকা জলন্ত সিগারেটটি ঠোঁটে নিয়ে লম্বা একটা টান দিয়ে বলেছিল- শালা, তোর মাথাটা খারাপ হবার আর যে কিছুই বাকি নাই! ঐটা পূর্ব আকাশ। তোর দিক ওলট-পালট হইছে।
হোক! তারপরও ওর হলের ছাদে উঠলে ঐ আকাশটাকে আমি উত্তর আকাশ বলেই সম্বোধন করি।

আমি অপেক্ষা করি না, কিন্তু প্রতিক্ষা করি। উত্তর আকাশের ঐ প্রকান্ড চন্দ্রটার প্রতিক্ষা করি...

পঠিত : ১১৯৩ বার

মন্তব্য: ০