কবে বোধোদয় হবে আমাদের?
তারিখঃ ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১০:৩৪

কবে বোধোদয় হবে আমাদের?
.
সাতচল্লিশ থেকে একাত্তর, একাত্তর থেকে পচাত্তর, পঁচাত্তর থেকে চব্বিশ- অসংখ্য আন্দোলন সংগ্রামের স্বাক্ষী হয়েছি আমরা। প্রতিবারই এর মাধ্যমে শাসকের পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। এত রক্ত ও ত্যাগের পর মানুষ আশা ভরসা করে যাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়েছে তারাই তাদের সাথে গাদ্দারি করেছে। ক্ষমতা হাতে পেয়ে পুরো দেশকে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বানিয়ে বসেছে। দলীয় লোকদের চাঁদাবাজি, ছিনতাই, চুরি, ডাকাতি করার সুযোগ করে দিয়েছে। খাস লোকদের উঁচু পদে বসিয়েছে। পছন্দের লোকদের ব্যাবসা বাণিজ্য এবং সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ করে দিয়েছে।
.
সরকারের পরিবর্তন হলেও সরকারের নীতির কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকারী আমলা, কর্মচারী ও দলীয় লোকদের চরিত্রের কোন পরিবর্তন হয়নি। সরকার যায় সরকার আসে, ঘুষ, দুর্নীতি, অনাচার, অবিচার আগের মতই চলে, গরীব গরীবই থাকে, ইসলাম বিদ্বেষীদের আস্ফালন আগের মতই থাকে। কোন কিছুর পরিবর্তন হয়না, পরিবর্তন হওয়ার কোন সম্ভাবনাও দেখা যায়না। নতুন সরকারের অনাচার অবিচার দেখতে দেখতে একটা সময় মানুষ আবার নিজেকে এই জুলুমের সাথে মানিয়ে নেয়। অত্যাচারিত হওয়াকেই নিয়তি ভেবে নেয়। এরপর যখন সহ্য সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন আবার মাঠে নামে।
.
এভাবেই চলে আসছে যুগের পর যুগ, হাজারো প্রাণ বিলিয়েও পাচ্ছেনা কেউ একটুখানি সুখ। মানুষ কেমন যেন একটা বৃত্তের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে। এক কুমিরের মুখ থেকে বেরিয়ে আরেক কুমিরের মুখে পড়ছে।
এই চিত্র শুধু আমাদের দেশের নয়, আশে পাশের দেশগুলোর চিত্রও একই। কথিত সভ্য রাষ্ট্রগুলোর চিত্রও এর থেকে ভিন্ন নয় বরং আরো ভয়াবহ, তারা শুধু নিজ দেশেই জুলুম নির্যাতন করছেনা, অন্য দেশে গিয়েও লুটতরাজ জুলুম নিপীড়ন চালাচ্ছে।
.
কিন্তু প্রশ্ন হল কেনো এত ত্যাগ এত কোরবানীর পরও মানুষের ভাগ্যের বদল হচ্ছেনা ? কেনো দেশ থেকে জুলুম নির্যাতন বিদায় নিচ্ছেনা?
এই প্রশ্নের উত্তর হল- এই অবস্থার জন্য মূলত দায়ী হল বিদ্যমান মানবরচিত রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া বিচারব্যবস্থা। বিদ্যমান রাষ্ট্রব্যবস্থা ক্ষমতাসীন এবং সরকারী আমলাদের জনগণের সেবক বানায়না, বরং জালিম বানায়।
.
এই ব্যবস্থায় একজন ব্যাক্তিকে জালিম বানানোর জন্য যত উপায় উপকরণ দরকার সবই বিদ্যমান আছে। কারণ এখানে কারো কাছে জবাবদিহী করতে হয়না, অন্যায় করলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়না, কিছু হলে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে নেয়া যায়। এরপর যেসকল আকিদা বিশ্বাস একজন মানুষকে অন্যায় অপরাধ থেকে বিরত রাখে সেগুলোকে এখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। কোন কর্মকর্তা কর্মচারী ইসলাম পালন করতে চাইলে তাকে হয় শাস্তির মুখোমুখি করা হয় অথবা প্রমোশন আটকে দিয়ে অন্যদের ইসলাম পালনে ভীতি তৈরি করা হয়।
.
এখানে যেই জিনিসকে পবিত্র মনে করা হয় সেটি হল সংবিধান। সংবিধান পালনের বাধ্যবাধকতা থাকলেও একে সংস্কার করার ক্ষমতা থাকে এই জালিমদেরই হাতে। তাদের হাতেই থাকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা। তারা তাদের ইচ্ছামত যখন যেভাবে খুশি আইন বানাতে পারে। কোন আইন নিজেদের প্রতিকূলে থাকলে সংশোধন করে অনুকূলে করে নিতে পারে। সংবিধানের কোন ধারা নিজের বিরুদ্ধে থাকলে সংবিধানকেও সংস্কার করে নিতে পারে। এ যেন শিশুদের মাটির খেলনা, যখন যেভাবে খুশি পরিবর্তন করার স্বাধীনতা।
এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ চাইলে এই সিস্টেমকে পরিবর্তন করতে হবে এবং এই ছেলেখেলার পথ পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। সিস্টেম পরিবর্তন না করে শুধু শাসক পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করলে প্রতিবারের মত হতাশ হতে হবে।
.
কিভাবে সিস্টেম পরিবর্তন করা সম্ভব হবে?
যেভাবে সাহাবায়ে কেরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম জাহিলী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তাঁরা মূলত দুইটি কাজের মাধ্যমে এই পরিবর্তন এনেছিলেন ১. দাওয়াত ২. জি*হা*দ। বর্তমানে আমরাও যদি আধুনিক জাহিলী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে ইসলাম আনতে চাই তাহলে আমাদের সামনেও এই দুই পথ অনুসরণের বিকল্প নেই। এই ব্যাপারে ইমাম মালিক রহিমাহুল্লাহ স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত একটি কথা বলেছেন, তিনি বলেছেনঃ এই উম্মতের শেষভাগের সফলতা সেই পথে যেই পথে প্রথমভাগ সফল হয়েছিল।

মন্তব্য: ০