Alapon

“ইসলামী অর্থনীতির ভাষ্যকার ও আন্দোলনের চিন্তানায়ক: অধ্যাপক খুরশিদ আহমদ”



“ইসলামী অর্থনীতির ভাষ্যকার ও আন্দোলনের চিন্তানায়ক: অধ্যাপক খুরশিদ আহমদ”

অধ্যাপক ড. খুরশিদ আহমদ ছিলেন মাওলানা মওদুদী গঠিত ইসলামী আন্দোলনের অন্যতম চিন্তানায়ক ও সংগঠক। তিনি শুধু একজন তাত্ত্বিক নন, ছিলেন এক জীবন্ত দিশারি—যিনি ইসলামী অর্থনীতির মতো একটি জটিল বিষয়ের কাঠামো দাঁড় করিয়েছেন আধুনিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতে। ইসলামী আন্দোলনের অর্থনৈতিক ক্যানভাসে তিনি যেন ছিলেন এক ‘পোস্টার বয়’—যার চিন্তা, গবেষণা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে ইসলামি আদর্শের বাস্তবায়ন সম্ভব বলেই প্রমাণ করেছেন।

তিনি পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ছিলেন এবং ছাত্র সংগঠন জমিয়তে তালাবার কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। রাজনৈতিক ময়দানে তিনি ছিলেন পাকিস্তানের সিনেট সদস্য (২০০৩–২০১২) এবং অতীতে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের ফেডারেল মন্ত্রী ও পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন। এসব দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে তিনি ইসলামী মূল্যবোধকে রাষ্ট্রপরিচালনার পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছেন।

শিক্ষা ও গবেষণায় তাঁর অবদানও অনন্য। করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন, ছিলেন যুক্তরাজ্যের লেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা স্কলার। আন্তর্জাতিক ইসলামি অর্থনীতির বিকাশে তিনি ছিলেন পথিকৃত; আন্তর্জাতিক ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, ইসলামাবাদে ইসলামি অর্থনীতির ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান ছিলেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, লেস্টার-এর প্রতিষ্ঠাতা, এবং বহু আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।



তাঁর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও উল্লেখযোগ্য—হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডক্টরেট সম্মানে ভূষিত করে, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক তাঁকে প্রথম অর্থনীতি পুরস্কার দেয়, এবং সর্বোপরি, ইসলামের সেবায় অবদানের জন্য তিনি লাভ করেন কিং ফয়সাল আন্তর্জাতিক পুরস্কার—যা মুসলিম বিশ্বের নোবেল বলেই বিবেচিত।



খুরশিদ আহমদের জীবন ছিল এক অনন্য সমন্বয়ের প্রতিচ্ছবি—চিন্তা ও বাস্তবতা, আদর্শ ও কর্ম, একাডেমিয়া ও রাজনীতি। তিনি প্রমাণ করেছেন, ইসলামী চিন্তা কেবল আবেগ নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সভ্যতাগত প্রস্তাবনা—যা রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনীতির প্রতিটি স্তরে প্রয়োগযোগ্য।

তাঁর ইন্তেকালে একটি সময়ের পরিসমাপ্তি ঘটলেও, তাঁর চিন্তা ও কাজ আগামী প্রজন্মের পথ চলায় প্রেরণা হয়ে থাকবে। তিনি রেখে গেছেন এক শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তিক ও নৈতিক উত্তরাধিকার—যা দিয়ে গড়ে তোলা যেতে পারে একটি আত্মমর্যাদাশীল ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা।

আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতুল ফেরদৌসের উচ্চ স্থান দান করুন।

আমিন।

পঠিত : ৬৫ বার

মন্তব্য: ০