Alapon

নির্বাচন, পিআর, খালেদা জিয়া ইত্যাদি (পর্ব ৫)

১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা তার বাবার নীতি 'বিরোধী দল নির্মূল'-এর রাজনীতি অনুসরণ করলো। প্রায় প্রতিটা জেলায় গডফাদার তৈরি করলো। যেমন ফেনীতে জয়নাল হাজারী, নারায়ণগঞ্জে শামীম ওসমান। পাইকারী হারে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের খুন করতে লাগলো। ৭২ এর সংবিধানে ফিরে যেতে চাইলো। স্থানীয় নির্বাচনে একচেটিয়া ভোটকেন্দ্র দখল করলো। শেয়ারবাজার লুটসহ হেন অন্যায় কাজ নেই যা শেখ হাসিনা করেনি। তার সাথে যুক্ত হয়েছে ইসলামফোবিয়া ও ভারতপ্রীতি।

চুক্তির নামে বাংলাদেশের সম্ভাবনাগুলোকে একের পর এক ভারতের হাতে তুলে দিচ্ছিল। সবশেষ ভারতের পরামর্শে পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশ থেকে আলাদা করে দিচ্ছিল। এমনই এক প্রেক্ষাপটে বিএনপির খালেদা জিয়া নিজের কর্মী ও দলকে বাঁচাতে উদ্যোগী হয়ে বিরোধী দলগুলোর মধ্যে জোট করার পরিকল্পনা করেন। এর ধারাবাহিকতায় ৪ দলীয় জোট গঠন হয়।

১৯৯৯ সালের জানুয়ারীতে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি একটি ৪ দলীয় জোট গঠন করে, যা অন্তর্ভুক্ত ছিল: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, জাতীয় পার্টি (নাজিউর), ইসলামি ঐক্য জোট। এই জোট গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল আওয়ামী লীগের শাসনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী বিরোধী জোট তৈরি করা এবং আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া।

এই জোট কাজ করেছে। আদর্শগতভাবে বিএনপি ও ইসলামপন্থী দলগুলোর সাপোর্টাররা কাছাকাছি মানসিকতার। সারাদেশে এই জোটের প্রভাবে ২০০১ সালে বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসে। ইসলামপন্থীদের সাথে নিয়ে বিএনপি'র এই ক্ষমতায় আসা ভারত ভালো চোখে দেখে নি। সাথে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেরর।

২০০১ সালে আমেরিকা 'ওয়ার অন টেরর' নামে মুসলমানদের বিরুদ্ধে সারা পৃথিবীতে লড়াই শুরু করে। আমেরিকান সিআইএ'র সহায়তায় তৈরি হওয়া জঙ্গী সংগঠন আল কায়েদার হামলাকে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবীর ইসলামপন্থার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে পশ্চিমারা। ভারত ও পাকিস্তান সেই লড়াইয়ে আমেরিকার পক্ষ নেয়। বাংলাদেশ এই লড়াইয়ে যুক্ত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আমেরিকা প্রথমে ভারতকে ব্যবহার করে বাংলাদেশকে রাজি করানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।

২০০২ সালের জানুয়ারিতে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বাংলাদেশকে যুদ্ধে রাজি করানোর জন্য চলে আসে। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি টনি ব্লেয়ারকে জানিয়ে দেন। বাংলাদেশ কারো বিরুদ্ধে কোনো লড়াইয়ে যুক্ত হবে না। বাংলাদেশ কাউকে শত্রু বানাতে চায় না। বাংলাদেশের এই অবস্থানে পশ্চিমা বিশ্ব বেশ বিরক্ত হয়। টনি ব্লেয়ার বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে যায়, যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি বাংলাদেশ, সেই সন্ত্রাসীদের আক্রমনের শিকার হতে হবে বাংলাদেশকে।

এদিকে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজী বেড়ে যায় মারাত্মকভাবে। এটা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে জোট সরকার। বিএনপি তার নেতাদের ও সন্ত্রাসীদের কন্ট্রোল করতে ব্যর্থ হয়। খালেদা জিয়া সন্ত্রাসীদের রুখতে সেনাবাহিনী দিয়ে অপারেশন ক্লিনহার্ট পরিচালনা করে। পরবর্তীতে এই অভিযান কন্টিনিউ রাখার জন্য র‍্যাব গঠন করে। স্বাভাবিকভাবেই এই অভিযানের ৭০% শিকার বিএনপি নেতা-কর্মীরাই। সন্ত্রাসবিরোধী এই অভিযান জনমনে স্বস্তি আনে ও সরকারের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করে।

এদিকে ক্রমবর্ধমান বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ক্রমাগত অর্থনৈতিক উন্নতি ভারতের ওপর চাপ তৈরি করে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পে বাংলাদেশ ১ নং পজিশনে চলে যাওয়া, সার্ক পুনঃগঠন করা ইত্যাদি। বাংলাদেশে আমেরিকার ইশারায় শুরু হয় ভারতের জঙ্গীবাদ প্রজেক্ট। আওয়ামী লীগ নেতা মীর্জা আজমের বোন জামাই শায়খ আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় জঙ্গীবাদ প্রজেক্ট। এই প্রজেক্ট জেএমবি নামে আত্মপ্রকাশ করে ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট। বোমা মেরে মানুষ খুন করতে থাকে ভারতীয় জঙ্গীরা।

বিএনপি সরকার ১ বছরের মধ্যেই জঙ্গীবাদ কন্ট্রোল করে ফেলে। বাংলাদেশই একমাত্র রাষ্ট্র যারা আধিপত্যবাদীদের অস্ত্র হিসেবে কাজ করা জঙ্গীবাদকে পুরোপুরি কন্ট্রোল করতে সক্ষম হয়েছে। না, ক্রসফায়ার দিয়ে নয়, সকল জঙ্গীকে বিচারের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে র‍্যাব ভালো ভূমিকা রাখে।

বাংলাদেশ জেএমবি সদস্যদের কাছ থেকে জেনেছে কীভাবে তারা অস্ত্র-বোমা নিয়ে এসেছে ভারত থেকে এবং প্রশিক্ষণও নিয়েছে ভারতের মাটি ব্যবহার করে। তাদের প্রজেক্ট নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভারত প্রতিশোধের চেষ্টা চালায়। তারা বাংলাদেশের সেনাপ্রধান বিশ্বাসঘাতক মঈন ইউ আহমেদকে হাত করে। বাংলাদেশে বিরাজনীতিকরণ করে ভারত নিয়ন্ত্রিত সেনাসরকার তৈরির চেষ্টা করে।

কোনো ইস্যু না থাকলেও খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের হাতে ইস্যু তুলে দিতে ওস্তাদ। ২০০১ সালে বিএনপি ১৯৩ টি সিট পায়, আর আওয়ামীলীগ ৬২ টি। ফলাফল এনালাইসিস করলে জানা যায়, বিএনপি ভোট পায় ২,২৮,৩৩,৯৭৮ এবং আওয়ামী লীগ ভোট পায় ২,২৩,৬৫,৫১৬। কাস্টিং ভোটের শতাংশ খুবই কাছাকাছি। বিএনপি ৪০.৯৭%, আওয়ামী লীগ ৪০.১৩%। যদিও সিটের পার্থক্য অনেক বেশি কিন্তু ভোটের পার্থক্য বেশি না। সুতরাং সিটের পার্থক্যকে উড়িয়ে দিতে আওয়ামীলীগের সময় লাগবে না।

এই ভয় খালেদা জিয়াকে তাড়া করে ফিরছে। তিনি দুর্নীতি দমনে মোটেই ভালো করতে পারেন নি। মিডিয়া ট্রায়ালে তিনি এবং তারেক জিয়া দুর্নীতিবাজদের গডফাদার হিসেবে ইতোমধ্যে চিহ্নিত হয়েছেন। দুর্নীতিতে ৩/৪ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তাই খালেদা জিয়া জনগণের ভোটের ওপর আস্থা রাখতে পারেন নি।

বিএনপি'র পছন্দের বিচারপতি যাতে ২০০৭-এর অনুষ্ঠিতব্য কেয়ারটেকার সরকারের প্রধান হতে পারে এজন্য খালেদা জিয়া কৌশলের আশ্রয় নিলেন। বিচারপতি কেএম হাসানকে প্রধান উপদেষ্টা করতে খালেদা জিয়া বিচারপতিদের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেন। ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করেন। এই নিয়ে আন্দোলন শুরু করে করে হাসিনা। কেএম হাসানের অধীনে তারা ইলেকশনে যাবে না। হাসিনার কাছে ভারতের গ্রিন সিগন্যাল আছে, ভালো আন্দোলন করতে পারলে সেনাবাহিনীকে ইউজ করে তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশ করবে।

একদিকে খালেদা কেএম হাসানকে উপদেষ্টা করতে অনড়, অন্যদিকে হাসিনা কেএম হাসানের অধীনে ইলেকশনে যাবে না। এই প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসী হাসিনা জালাও পোড়াও আন্দোলন শুরু করে। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর সেই জ্বালাও পোড়াও-এর বলি হয় জামায়াত। সবাই যুদ্ধ শুরু করে প্রক্সি দিয়ে। আওয়ামী লীগও তাই করেছে। যেহেতু ইসলামপন্থীদের মানবাধিকার নেই। তাই আওয়ামী লীগ বিএনপি'র সাথে ফাইট না করে বিএনপি'এ এলাই হিসেবে জামায়াতকে জঘণ্যভাবে আক্রমণ করে ও জামায়াতের ওপর গণহত্যা চালায়। ১৪ জনকে খুন করে।

--- চলবে....

পঠিত : ১৯ বার

মন্তব্য: ০