ব্যক্তিস্বাধীনতার মুখোশ!
তারিখঃ ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮:৪২
ব্যক্তি স্বাধীনতার মুখোশ!
মূল লিখার লিংক।
কথিত মুক্তচিন্তকরা, নারীবাদীরা আমাদের কাছে বড় গলায় দাবি করে, তারা নাকি ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তাদের মতে, ব্যক্তি কী করবে, কী করবে না, কী পোশাক পরবে বা পরবে না এসব একান্তই তার নিজের সিদ্ধান্ত। ব্যক্তিই নাকি নিজের জীবনের সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব। কথাগুলো শুনতে অবশ্যই সুন্দর, মুখরোচকও বটে। কিন্তু বাস্তবতা? কেউই আসলে সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়।প্রত্যেক মানুষ কোনো না কোনোভাবে সমাজ, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, কিংবা প্রভাবশালী মতাদর্শের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও প্রভাবিত। যা-ই হোক, সেই তাত্ত্বিক আলোচনায় না যাই। চলুন দেখি ব্যক্তিস্বাধীনতার এই কথিত ধারক-বাহকেরা বাস্তবে কতটা নিজেদের কথার প্রতি সৎ!
বোরকা-হিজাব পরিহিত নারী শিক্ষার্থীদের নোংরা ভাষায় গালাগাল তসলিমা নাসরিনের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত বোনদের শপথ অনুষ্ঠানের পর মুক্তচিন্তকদের দেখলাম মায়া কান্নায় ফেইসবুক ভাসিয়ে দিতে! হিজাব পরিহিত বোনদের বিভিন্ন কটু ভাষায় গালাগাল করে ব্যক্তিস্বাধীনতার চর্চা করছে। এই হিপোক্রেসিই তো আমরা দেখলাম সেই তথাকথিত স্বাধীনতার ধারকবাহকদের মুখোশের আড়ালে! এই যেমন দেখুন নাস্তিক তসলিমা নাসরিনের ফেইসবুক পোস্টটি দেখা নেওয়া যাক।
তসলিমার মতো কিছু অসভ্য নারী মুখে “ব্যক্তিস্বাধীনতা”র বুলি আওড়ালেও বাস্তবে তারা তার সম্পূর্ণ বিপরীত চর্চা করে। তাদের কাছে বোরকা বা হিজাব মানেই নাকি গু-গোবরে ভরা মস্তিষ্ক, শিক্ষাহীন নারীর প্রতীক! তাদের মতে, এ পোশাক নাকি অন্ধকারে পড়ে থাকা ক্রীতদাসীর পোশাক, সভ্য ও শিক্ষিত সমাজের নয়। সভ্য হতে হলে নাকি এই পোশাক ছুড়ে ফেলতে হবে! অথচ তারাই আবার মুখে বলে “শরীর আমার, সিদ্ধান্ত আমার।”
তাহলে প্রশ্ন আসে, এই কথাগুলো তারা কখন বলে? যখন তাদের শালীন পোশাক পরতে বলা হয়, তখনই তারা “ব্যক্তিস্বাধীনতা”র ঢাল তুলে বিকিনি পরার স্বাধীনতা দাবি করে। কিন্তু যখন কোনো নারী নিজের ইচ্ছায় বোরকা বা হিজাব পরে, তখন সেই ব্যক্তিস্বাধীনতার বুলি গর্তে ঢুকে যায়। প্রকাশ পায় চরম অসহিষ্ণুতা, হিংস্রতা ও ঘৃণা। আসলে এটাই তাদের আসল মুখ। তারা এমন এক মানদণ্ড তৈরি করেছে, যেখানে হিজাব, নিকাব বা বোরকা পরা মানেই নাকি পশ্চাৎপদ, অশিক্ষিত, অসভ্য! প্রশ্ন হলো এই মানদণ্ড ঠিক করল কে? যদি ব্যক্তি নিজেই ঠিক করে কী পরবে, কী পরবে না, তাহলে কেন একজন নারী নিজের পছন্দে শালীন পোশাক পরলে তাকে বিদ্রূপের শিকার হতে হবে?
ব্যক্তিস্বাধীনতা কি শুধু অসালীন পোশাকের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য? কেন একজন নারী হিজাব পরে নিজের মর্যাদা রক্ষা করলে সেটাকে অন্ধকার বলে গালি দেওয়া হবে? তাহলে কি আমরাও বলতে পারি তসলিমার মতো নারীরা যে অসালীন পোশাক পরে প্রকাশ্যে আসে, সেগুলো মূলত অসভ্যদের পোশাক? যেসব পোশাক একসময় রাজাদের সামনে নৃত্যরত নারীরা পরিধান করত তাদের কামনা মেটানোর জন্য সেগুলোই আজ “আধুনিকতা”র নামে প্রচারিত হচ্ছে! যদি তাদের বক্তব্য বলা যায় “ব্যক্তিস্বাধীনতা”, তাহলে আমাদের প্রতিবাদও সেই একই স্বাধীনতার আওতাতেই পড়ে। পার্থক্য হলো আমাদের পোশাক শালীনতার প্রতীক, আর তাদের পোশাক লজ্জাহীনতার প্রতীক।
তাদের বানানো নীতি অনুযায়ী ব্যক্তি স্বাধীনভাবে পোশাক পরবে। এই ‘স্বাধীনতা’র নামেই তারা অশালীন পোশাক ও নৈতিক অবক্ষয়ের জাস্টিফিকেশন দাঁড় করাতে চায়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো যেই মুহূর্তে কোনো নারী বোরকা পরে, হিজাব পরে, ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত জীবনযাপন করতে চায়, ঠিক সেই মুহূর্তেই এই কথিত মুক্তচিন্তকদের স্বাধীনতার বুলি গিলে ফেলে। তারা তখন সেই নারীকেই বলে বসে “সেকেলে”, “বদ্ধমনা”, “মধ্যযুগীয়”! অর্থাৎ, তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতা ততক্ষণই স্বাধীন, যতক্ষণ আপনি তাদের চিন্তার দাসত্ব করবেন। আপনি তাদের ধারণার দাস থাকলে তবেই আপনার ‘স্বাধীনতা’ স্বীকৃত, আর তাদের বিপরীতে দাঁড়ালেই আপনি ‘অসভ্য’ ও ‘পশ্চাৎপদ’। এই ভণ্ডামি নিয়ে আওয়াজ তুলতেই হবে। মানুষের সামনে তাদের দ্বিচারিতা উন্মোচন করতেই হবে। বামপাড়ার এই হিপোক্রেটিক চিন্তার কবর না রচিত হওয়া পর্যন্ত আমাদের কলম থামানো যাবে না।
হিজাব পরিহিত নারী শিক্ষার্থীদের নোংরা ভাষায় গালাগাল তসলিমা নাসরিনের।
২৯ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাশে এক নারী শিক্ষার্থীকে হিজাব পরার কারণে থুথু নিক্ষেপ ও শারীরিকভাবে হেনস্তা করেছেন আরেক নারী। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘটনাটি প্রকাশ করে লিখেছেন,
ক্লাস শেষে কার্জন থেকে ফিরছিলাম। জুলোজি ডিপার্টমেন্টের (প্রাণিবিদ্যা বিভাগ) ঐদিকের রাস্তা দিয়ে আসছি, হঠাৎ করেই একজন আপু আমার দিকে থুতু নিক্ষেপ করে বিশ্রী ভাষায় বলে উঠলেন– আরেহ তুই ঐখানকার মেয়ে না? সব পাকিস্তানি! কোথা থেকে মুখ পুড়িয়েছিস যে মুখ ঢেকে রেখেছিস?’
তিনি আরও লিখেন, ‘খপ করে হাত ধরে বলল, হাত কি দেখতে এত খারাপ যে ঢেকে রেখেছিস? আগুনে পুড়েছে নাকি? দেখি দেখি... আরও অনেক বিশ্রী গালি তো আছেই। আমি যে কিছু বলবো মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না, শুধু চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল। অনেক কষ্টে হাত দুইটা ছাড়িয়ে দৌড়ে হলে এসেছি। এখনও মনে হচ্ছে গালি গুলো কানে ভাসছে। (( বোরকা-হিজাব পরায় ঢাবি শিক্ষার্থীকে ‘থুতু’ নিক্ষেপ ও হেনস্তার অভিযোগ ))
এই ঘটনা শুধু একজন শিক্ষার্থীর ওপর ব্যক্তিগত অপমান নয়, এটি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংবিধানে স্বীকৃত ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও নারীর মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত। যারা মুখে “নারীর স্বাধীনতা”, “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত” বলে স্লোগান দেয়; তারা আজ হিজাব পরা এক নারীর স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে। এই দ্বিচারিতা ও ভণ্ডামির চরম উদাহরণ এটি। হিজাব পরা মানে কোনো নারীর অন্ধকারে থাকা নয়, বরং তার আত্মমর্যাদা, সম্মান ও ঈমানের প্রতীক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তথাকথিত ‘মুক্তচিন্তা’র নাম নিয়ে আজ কিছু মানুষ নারীর শালীন পোশাককেও অপরাধ হিসেবে দেখতে শিখেছে। তথাকথিত ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলে অস্লীলতাকে প্রমোট এবং শালীন থাকার স্বাধীনতা কেঁড়ে নেওয়া হচ্ছে!!
যেসব নারীবাদী, যেসব “মুক্তচিন্তক” মুখে নারী-স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা আর “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত” বলে গলা ফাটান, তারা এখন চুপ! তাদের মুখে কুলুপ! কেন? কারণ হেনস্তার শিকার হওয়া নারী হিজাব পরা মুসলিম নারী! কারণ এই ঘটনা তাদের ‘বাছাই করা স্বাধীনতা’-বোধের সাথে মেলে না! যেখানে বিকিনি পরা নারীকে সাহসী বলা হয়, সেখানে হিজাব পরা নারীকে বলা হয় ক্রীতদাসী। এটাই তাদের নারীবাদ! পক্ষপাতদুষ্ট, ভণ্ডামিমিশ্রিত একমুখী চিন্তা। তারা শুধু তখনই “নারী অধিকার” নিয়ে চিৎকার করে, যখন সেটি তাদের পশ্চিমা চিন্তার সাথে যায়। কিন্তু একজন মুসলিম নারী নিজের ঈমান, মর্যাদা ও বিশ্বাসের কারণে শালীন পোশাক পরলে, তখন তাদের স্বাধীনতার বুলি থেমে যায়।

মন্তব্য: ০