Alapon

সুদনের গণহত্যায় আরব আমিরাতের ভূমিকা কি?



সুদানে চলছে এক চরম মানবিক বিপর্যয়। লক্ষ লক্ষ নীরিহ সুদানিকে হত্যা করছে জঙ্গী সংগঠন আরএসএফ । সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।



মূলত ক্ষমতার লড়াই হচ্ছে আজকের এই গৃহযুদ্ধের মূল কারন। ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

মূলত প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরকে ক্ষমতা চ্যুত করার সর্বশেষ ফলাফল হচ্ছে আজকের এই গৃহযুদ্ধ। বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে হয় সেনা অভুত্থান ও প্রেসিডেন্ট হন ক্ষমতাচ্যুত। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। সামরিক-বেসামরিক সরকার” বলতে বোঝায় এমন একটি সরকার যেখানে সামরিক (সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি) এবং বেসামরিক (সাধারণ নাগরিক কর্মকর্তা বা রাজনীতিবিদ) উভয় ধরনের ব্যক্তিরা সরকার পরিচালনায় অংশ নেয়। তো, সুদানের সেই সামরিক - বেসামরিক সরকারও বেশিদিন টিকেনি। ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো। এই জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালোর নেতৃত্বেই বর্তমানে সুদানে গণহত্যা সংগঠিত হচ্ছে।



তো যাইহোক ২০২১ এর অভ্যত্থানের দুই নায়ক প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো দফায় দফায় দেশের ক্ষমতায়ন ও সার্বিক বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দিলেও একমত আর হতে পারেনি। এমনকি বর্তমান জঙ্গী গোষ্ঠী আরএসএফকে তাদের সেনাবাহিনীর সাথে একীভূত করতে চেয়েছিলো কারন আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখছিলো তারা, কিন্তু একমত হয়নি দাগালো। কারন দুইজনই ক্ষমতালিপ্সু ও সম্পদ লোভী। ফলাফল স্বরুপ দুইজনের মাঝে শুরু হয় চরম দ্বন্দ। ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে ভয়ানক সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।



এই দাগালো একা বিভিন্ন কুটকৌশলে সুদানের বিভিন্ন স্বর্নের খনি দখলে নেয় ও চোরাচালানের মাধ্যমে আরব আমিরাতে পাচার করেছে। যার কারনে আজকে এই জঙ্গী সংগঠন আরএসএফ আমিরাতের টাকায় এতোটা শক্তিশালী হয়েছে। বলা হয়ে থাকে যে আরএসএফ এর গণহত্যায় আরব আমিরাতের নীরব সমর্থন রয়েছে।

যদিও সামরিক বাহিনী দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হলো মিসর, যার সঙ্গে সুদানের অভিন্ন সীমান্ত ও নীল নদের পানি ভাগাভাগির সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু মুনাফেক আরব আমিরাত গণহত্যায় ভূমিকা রাখাটা সত্যিই অত্যান্ত পরিতাপের বিষয়। বুঝাই যায় মুসলিম বিশ্বের শত্রু কারা। নিজের স্বার্থ সিদ্ধির লোভে চরম মানবতা বিরোধী কর্মকান্ডে সমর্থন জানাচ্ছে!

দোয়া করি আরব আমিরাতের শাসক গোষ্ঠী ধ্বংস হয়ে যাক। আমি হেদায়েত চাইবো না। চাইবো ধ্বংস হয়ে যাক। আমিন।

পঠিত : ১৯৬ বার

মন্তব্য: ০