উসওয়াতুন হাসানা ; মুহাম্মদ (সা)
তারিখঃ ২ নভেম্বর, ২০২৫, ১৮:১৩

"নিঃসন্দেহে তুমি মহান চরিত্রের উপর (প্রতিষ্ঠিত) রয়েছে"(সূরা ক্বালাম-০৪)। মানবজাতির ঐশী গ্রন্থ মহাগ্রন্থ কুরআনুল কারিমে বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে মহান চরিত্রের অধিকারী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যার আনীত জীবন ব্যবস্থাই বিশ্ব মানবতার মুক্তির উপায়। হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর নবুওয়াতের মধ্য দিয়ে ৫১ কোটি বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত এই পৃথিবীতে শুরু হয় মানব সভ্যতা এক প্রজ্জ্বল পরিক্রমা। যিনি নখ, চুল কাটা, হাঁচি কাশির শিষ্টাচার থেকে বিশ্ব পরিচালনার সর্বোত্তম মডেল দিয়েছেন। খাওয়ার মানার থেকে বৃক্ষরোপণ, পানি সংরক্ষণ এমনকি দুনিয়া আখেরাতের তাবৎ বিষয়ের সমাধান দিয়েছেন। তাইতো বিশ্ব বিখ্যাত ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইল এর ভাষায়-" মুহাম্মদ সাঃ এর আবির্ভাব জগতের অবস্থা ও চিন্তা স্রোতে এক অভিনব পরিবর্তন সংঘটিত করে। যেন একটি স্ফুলিঙ্গ তমসাচ্ছন্ন বালকস্তূপে নিপতিত হলো কিন্তু এই বালুকা রাশি বিস্ফোরক বারুদে পরিণত হয়ে দিল্লি হতে কানাডা পর্যন্ত আকাশ মন্ডলী প্রদীপ্ত করল।" ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত "Population Reference Bureau"-এর মতে আদি থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবীতে জন্মগ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা ১০,৮০০ কোটি প্রায়। বিগত ১০ হাজার বছরে জন্মগ্রহণকারী এই ১০ হাজার ৮০০ কোটি মানুষের ভেতর সর্বশ্রেষ্ঠ কি? এই প্রশ্নটির উত্তর দিয়ে ৪৪ বছর আগে ১৯৭৮ সালের শেষ দিকে আমেরিকার নিউইয়র্ক সিটিতে এক অনাড়ম্বর প্রকাশনী উৎসবের মধ্য দিয়ে উপস্থিত হাজার হাজার বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ , সাংবাদিক তথা সে দেশের শ্রেষ্ঠ সুধিগনের কাছে তুলে ধরা হলো ৫৭২ পৃষ্ঠার একটি বৃহৎ বই নাম "the 100: A ranking of the most influential person in history"। মাইকেল এইচ হার্টের নেতৃত্বে বহুমুখী ক্ষেত্রের দক্ষ গবেষকদের একটি দলের ১০ বছরের বেশি অক্লান্ত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে কোন ব্যক্তির শ্রেষ্ঠত্বের মানদন্ড করা হয়েছে তার কর্মও মানবজাতির উপর কর্মের প্রভাবের স্থায়িত্বের উপর। সেখানে পৃথিবীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় মুহাম্মদ সাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যাকে আমাদের জন্য আদর্শ বানিয়ে রেখেছেন। এমন কোন মিনিট বা সেকেন্ড পাওয়া যাবে না যখন পৃথিবীর আকাশ বাতাসে মুহাম্মদ সাল্লাহু ইসলামের নাম উচ্চারিত হচ্ছে না। তার বাল্যকাল, যৌবনকাল এবং জীবনের প্রতিটি সময় এবং কাজে আমাদের জন্য অনুকরণীয়, অনুসরণীয় এবং আদর্শ।
বাল্যকালের সময়সীমা সম্পর্কে মনােবিদগণের মধ্যে মতভেদ দেখা যায়। পিকুনাসের মতে আড়াই বছর থেকে বারাে বছর পর্যন্ত বাল্যকালের ব্যাপ্তি। বাল্যকালকে তিনি তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন প্রারম্ভিক কাল (আড়াই বছর থেকে পাঁচ বছর) মধ্যবাল্য (পাঁচ বছর থেকে নয় বছর) এবং প্রান্তীয় বাল্য (নয় বছর থেকে বারাে বছর)। আবার জোন্স শিশুর পাঁচ বছর থেকে বারাে বছরকে বাল্যকাল বলে অভিহিত করেছেন। "মুহাম্মদ সাঃ এর মধ্যেই রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ"। এখন মুহাম্মদ সাঃ বাল্যকালের বিশেষ কিছু দিক এবং আমাদের শিক্ষানীয় বিষয়গুলো উল্লেখ করা হলো-
•আত্মশৃঙ্খলা:শৃংখলার মধ্য দিয়ে শিশুরা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে। তাদের আচার-আচরণ সন্তোষজনক হয়। ঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখে। মুহাম্মদ সাঃ মরুভূমিতে থাকাকালীন শৃংখলার পাঠ নিয়েছিলেন। নির্দিষ্ট সময় তাকে ঘুমাতে যেতে হতো আবার নির্দিষ্ট সময় উঠতে হতো। তাকে বিভিন্ন কাজের সহযোগিতা করতে হতো এবং গবাদি পশুর দেখভাল করা লাগতো। মন চাই যাক একজন কিশোরকে দায়িত্ববান হয়ে গড়ে উঠতে হবে এটাই শৃঙ্খলা।
•সামাজিক দক্ষতা শিখা: মরুভূমিতে থাকা অবস্থায় শিশু মুহাম্মদ সাঃকে বেশ কিছু কাজ করতেন। যেমন__ পানি আনা- নেওয়, গবাদি পশু দেখভাল করা, তাবু টাঙ্গানো , অন্যকে মেহমানদারী করার দায়িত্ব পালন ইত্যাদি। এগুলো তার মধ্যে সহযোগিতা এবং ভাগাভাগি করে দায়িত্ব পালনের দক্ষতা শিখায়। শারীরিক সক্রিয়তার তার সাথে দক্ষ হওয়ার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। যেসব শিশু শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় তারা কম সক্রিয় শিশুদের তুলনায় সামাজিক নেতৃত্ব দানে অগ্রগুনি হয়।
•ভাষা দক্ষতা: স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই শিশুদের মাঝে এই দক্ষতা গড়ে ওঠে। মরু ভূমির পরিবেশ বিজাতীয় সংস্কৃতি এবং ভাষা বিকৃতি থেকে মুক্ত ছিল। যে কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম হয়ে উঠেছিলেন বিশুদ্ধভাষী। তিনি অনেক শব্দ শিখেছিলেন। হজের মৌসুমে যখন বিভিন্ন লোকজন সেখানে যাতায়াত করত তখন তিনি তাদের সংস্পর্শেও ভাষা দক্ষতা অর্জন করেছিলেন। আমাদের উচিত ভাষা দক্ষতা অর্জন করা।
•প্রতিকূল পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে চলা: মরুবাসীদের জীবন ছিল যেনতেন বেঁচে থাকা। বেঁচে থাকাটাই ছিল মুখ্য । এখানে বিলাসিতার কোন সুযোগ ছিল না। মরুভূমিতে প্রচন্ড দাবদাহে সূর্যের নিচে ডিম পর্যন্ত ভাজি হয়ে যেত। পানি এবং ছায়া দুটোরই অভাব ছিল। পানির উৎস যেহেতু কম তাই খাবারের উৎস কম ছিল। সেখানে পেট পুরে খাওয়ার সুযোগ ছিল না। শিশু মুহাম্মদ সাঃ কেও অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হয়েছে। বিশেষ করে তার মা এবং দাদা মারা যাওয়ার পর নতুন পরিস্থিতির সাথে অনেক কষ্টেই তাকে খাপ খাইয়ে চলতে হয়েছে। অনেক সময় না খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন।
•সৃষ্টিশীল হওয়া: মুহাম্মদ সাঃ মক্কায় উদীয়মান তারকাতে পরিণত হন। মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তিনি সহজেই সকলের নজর কাড়েন। কাবা ঘর নির্মাণ নিয়ে কুরাইশদের মধ্যকার বাকবিতণ্ডতার একটি সুন্দর সমাধান দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ী তিনি খুব অল্প বয়সে সততার সাথে সাফল্যের পরিচয় দিয়েছিলেন।
"যৌবন যার সৎ, সুন্দর ও কর্মময় ,
তার বৃদ্ধ বয়সকে স্বর্ণযুগ বলা হয়।"- জর্জ গ্ৰসভিল।
জীবনকে সফল ও সার্থক করে গড়ে তুলতে চাইলে যৌবন কালকে সবচাইতে বেশি কাজে লাগাতে হবে। আর এই যৌবনকে সার্থক করতে চাইলে অবশ্যই মুহাম্মদ সাঃ আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে কাজ করতে হবে। রাসূল সা.এর যৌবনকালের বিশেষ কিছু দিক এবং আমাদের শিক্ষা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
•বিশ্বাস ও মূল্যবোধ চর্চা: আমরা দেখেছি রাসুল সা. সমাজের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সমাজের বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর ছিলেন। সমাজের সকলের সাথে মিশতেন কিন্তু নিজের বিশ্বাসের জলাঞ্জলি তিনি দিতেন না। বিশ্বাসের বিষয়ে তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা এক শক্তিশালী মানুষ। তিনি সমাজের সাথে সক্রিয় সম্পৃক্ত থাকা সত্ত্বেও সমাজের অধিকাংশ মানুষের অন্ধ ধর্ম বিশ্বাসকে তিনি গ্রহণ করেননি। তথাপি তিনি কখনো মদ খাননি এবং জুয়াও খেলেননি।
•সংঘাত নিরসন করা: কাবা ঘর নির্মাণের সময় যে সংঘাতে সূত্রপাত হয় তা যে কোন সময় বড় সংঘাতের রূপ নিতে পারত। কারণ টানা পাঁচ দিন এ নিয়ে বাকবিতণ্ডতা চলে। মুহাম্মদ সাঃ সেই সংঘাতের একটি স্মার্ট সমাধান দিয়েছিলেন। কর্মক্ষেত্র এবং পরিবারে সংঘাত নিরসন এক প্রয়োজনীয় দক্ষতায় পরিণত হয়েছে। তাই আজ যারা সংঘাত নিরসনে দক্ষ তাদের কদর অনেকাংশেই বেড়েছে।
•ব্যক্তিত্ব বজায় রাখা: মুহাম্মদ সাঃ যে বিষয়টি আমাদেরকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয় সেটি হল ভারসাম্য বজায় রেখে তার জীবন পরিচালনা। তিনি সমাজের সকল শ্রেণীর সাথে অনেক ভালো নেটওয়ার্কিং তৈরি করেছিলেন। তিনি খুব অল্প বয়সেই মক্কার বিভিন্ন চুক্তিতে যুক্ত ছিলেন। এছাড়াও খুব অল্প বয়সে তিনি "মর্যাদাপূর্ণদের মৈত্রী" নামক একটি সংগঠনে যুক্ত হন। বয়স যাই হোক না কেন নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে সমাজের বিভিন্ন কাজে যুক্ত হওয়া উচিত।
•বাহ্যিক সৌন্দর্য ঠিক রাখা: এটা ঠিক যে শুধু মানুষের বাহ্যিক রূপ দিয়ে মানুষের আদর্শ নির্ণয় করা যায় না। কিন্তু মুহাম্মদ সাঃ বিষয়টি ছিল অন্যরকম তার বাহ্যিক সৌন্দর্যের বিষয়টি আপনার জীবনের জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। তার মুখ ছিল গোলাকৃতির দীপ্ত সুন্দর চেহারা। মুখে কোন দাগ ছিল না। তার দাঁতগুলো সাদা পরিস্কার পরিচ্ছিন্ন থাকতো এবং চুল থাকতো মাঝারি । তিনি তার চুলগুলোকে গুছিয়ে রাখতেন। হাঁটার সময় সতেজ ভাব নিয়ে হাঁটতেন। কারো দিকে তাকালে শুধু মাথা ঘুরাতে না পুরো শরীর সেদিকে ঘুরিয়ে নিতেন। শরীর থেকে যাতে কোনরকম দুর্গন্ধ না হয় এজন্য তিনি সবসময় পরিপাটি থাকতেন। যা বর্তমান সময়ে ইসলামী দাওয়াহ কাজে আমাদের অনুকরণীয়, যাতে সকল শ্রেণীর মানুষের সাথে খাপ খাইয়ে চলা যায়।
মুহাম্মদ সাঃ এর এর গোটা জীবনটাই আমাদের জন্য অনুকরণীয় এবং আদর্শ। তবে তরুণ সমাজের জন্য বিশেষ কিছু করণীয় নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
•বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ কমানো: কিশোর কিশোরীদের যৌন আকাঙ্ক্ষা জাগা স্বাভাবিক বিষয়। এটাকে দমিয়ে রাখা চ্যালেঞ্জ নয় বরং এটাকে গাইড করা হচ্ছে আমাদের মূল কাজ। এ বিষয়ে মুহাম্মদ সাঃ এর কথা হচ্ছে -"ইসলাম পূর্ব যুগে মানুষ যেভাবে নারীর প্রতি আকৃষ্ট ছিল আমি তেমন ছিলাম না। শুধু দুই রাত বাদে। সেই দুইরাতে আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। এক রাতে আমি আমার বন্ধুকে বললাম তুমি আমার ভেড়াগুলো দেখে রাখো যাতে করে আমি এই রাত মক্কায় কাটাতে পারি। এরপর আমি যখন মক্কায় গেলাম সেখানে বাঁশি এবং তাম্বুরিনের এর আওয়াজ শুনতে পেলাম। আমি যেইমাত্র এসব দেখা এবং শোনার জন্য বসলাম তখনই আল্লাহ আমার কানে আঘাত করলেন এবং আমাকে সকাল হওয়া পর্যন্ত উঠাননি। এরপর দ্বিতীয় রাতেও আমি সেখানে গেলাম এবং যেইমাত্র আমি সেখানে বসলাম আল্লাহ আমার কানে আঘাত করেন এবং আমাকে তিনি সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে উঠাননি। এরপর আমি আর কখনোই ওইসবের ধারে কাছে যাইনি।" রাসূল সা. কিশোর বয়সে দুইবার পার্টিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় তা সম্ভব হয়নি। এবং এরপর তিনি আর তৃতীয়বার কখনো চেষ্টা করেননি। আর এটাই আমাদের তরুণদের সবচেয়ে বড় শিক্ষনীয় দিক। কোন খারাপ কাজে পা বাড়ালে অনেক ক্ষেত্রে আমরা হোচট খায় কিন্তু এরপরও আবার আমরা চেষ্টা করি। তবে রাসূল সা. শিক্ষা হচ্ছে দ্বিতীয় বার ওই পথে আর না পা বাড়ানো। বিশেষ করে নারীদের প্রতি আকৃষ্ট কমানো।
•বন্ধু নির্বাচনে সতর্কতা : খুব সতর্কতার সাথে রাসূল সা. তার বন্ধুদের নির্বাচন করেছেন। তিনি মর্যাদাবান এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদেরকে বন্ধু হিসেবে। যেমন আবু বকর রা. , হাকিম ইবনে হিযাম, জাব্রা আর রুমি প্রমূখ। তার বন্ধুবান্ধব ছিল খুবই সম্মানিত এবং ভদ্র মানুষ। তৎকালীন মক্কায় অধিকাংশ লোকই ছিল বিভিন্ন খারাপ কাজে লিপ্ত। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই পরিবেশের মধ্য থেকে সবচাইতে সম্মানিত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিদেরকে তার বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন। তাই আমাদেরও বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং বিচক্ষণতার সাথে বন্ধু নির্বাচন করতে হবে। কারণ সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
•খারাপের হাতছানি মাড়িয়ে চলা: সময়ের ঘড়িতে চড়ে কেউ যদি সুক উকাজে যেতে পারতো তাহলে সে অবশ্যই অনেক বিস্ময়কর এবং অবাক করা বিষয় দেখতে পেত। যদিও সেটা সে সময়ের জন্য স্বাভাবিক ছিল। যেখানে সেখানে জুয়া এবং মদের আসর ছিল। ছিল সংখ্যা পতিতাবৃত্তির জায়গা। যা ছিল সেই সময়ের মানুষের জন্য স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু সে সময় যেমন একদিকে খারাপের আগড়া ছিল অন্যদিকে ছিল কিস ইবনে সাদ এর সতর্কবাণী পূর্ণ লেকচার। যে সময় সকলে খারাপ আর নোংরা কাজে জড়িত ঠিক সেই সময়ে সেই একই জায়গায় মুহাম্মদ সা. সকল নোংরামিতে মাড়িয়ে কিস ইবনে সাদ এর ভাষণ শুনতেন। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের চারপাশেও নানা খারাপ হাতছানি দিয়ে ডাকবে কিন্তু আমাদেরকেও এর মধ্য থেকে সত্যকে বেছে নিতে হবে, সত্যের পথে হাঁটতে হবে।
বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মের মূল্যবোধের অবক্ষয় আমাদেরকে বিশেষভাবে নাড়া দেয়। তরুণরা হল জাতির কান্ডারী এবং এরাই শতাব্দীর কারিগর। কিন্তু আজ সময়ের স্রোতে আমাদের অহংকার তরুণ সমাজ অনৈতিকতার নীল ছোবলে ধ্বংস-গহ্বরের মধ্যে পতিত হয়েছে। কারণ আমাদের আদর্শ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দেখানো পথ থেকে আমরা সরে দাঁড়িয়েছি। মুহাম্মদ সাঃ এর বাল্যকাল এবং যৌবনকালের সময় পরিলক্ষিত করলে আমরা যে সকল বিষয়গুলো দেখতে পাই সেগুলো যদি আমরা আমাদের জীবনে সঠিক এবং যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি তাহলে অবশ্যই আমরাও একটি সুন্দর সোনালী জীবন ঘটতে পারব। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাল্যকালে ছিলেন তার বন্ধুদের জন্য এক আদর্শ। তিনি যখন ভেড়া ছড়াতে যেতেন তিনি সকলের জন্য সেখানে এক প্রিয় ছিলেন। তিনি চাচার সাথে ব্যবসায় গিয়েছেন সেখানেও তিনি তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছে। খুব অল্প বয়স থেকেই তিনি সমাজের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন। মক্কায় বিভিন্ন অপকর্মের তিনি কঠিন সমালোচক ছিলেন। আর এসবই রাসূল সা. বাল্যকাল থেকেই করে এসেছেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের তরুণ সমাজ কি ঠিক তেমনটা করে নাকি তারা সময়ের সাথে গা ভাসিয়ে নিজেকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। তাই আমাদের উচিত রাসুলের সা. বাল্যকাল ও যৌবনকাল থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের বাল্যকাল এবং যৌবন কালকে সুন্দর করে সাজানো।।
লেখক: মুশিউর রহমান
শিক্ষার্থী এবং সংগঠক।।

মন্তব্য: ০