Alapon

"যে গল্পে স্বপ্ন মেলে, গোবরে পদ্মফুল ফোটে"

গত মাসেরই মেনসার একটি চমৎকার তথ্য দিয়েই শুরু করছি- সবথেকে প্রাচীন ও সর্ববৃহৎ আইকিউ সোসাইটি (intelligence quotient (IQ) মেনসা (Mensa is the largest and oldest high IQ society in the world) এরা মানুষের আই কিউ টেস্ট করে। তাদের গতমাসের টেস্টের ফলাফল টি জানো তো? আমিই বলছি শোনো-

মেয়েটির বয়স মাত্র ১২ বছর। অথচ এই বয়সেই বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন, ইংলিশ কিংবদন্তি স্টিফেন হকিং বা সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটসকে মেধায় ছাড়িয়ে গেছে নিকোলা বার। ইংল্যান্ডের এসেক্সের হার্লোয়ারের এই মেয়ে মেনসার আইকিউ টেস্টে (১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত বিখ্যাত সংগঠন মেনসা) স্কোর করেছে ১৬২’র মধ্যে ১৬২! আইনস্টাইন, হকিং আর বিল গেটসের স্কোর ১৬০। নিকোলাকে নিয়ে তাই মাতামাতি চলছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে। গত সপ্তাহে আইকিউ টেস্টের ফল পাওয়ার পর নিজের চোখকেই নাকি বিশ্বাস হচ্ছিল না নিকোলার। 

বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে এই বিস্ময় বালিকা ইংলিশ দৈনিক মিররকে বলেছে, ‘১৬২-র মধ্যে ১৬২, সত্যিই অবিশ্বাস্য। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম কিছুক্ষণ।’ এই বিস্ময় বালিকাকে বলা যায় গোবরে পদ্মফুল। কেননা তার বাবা ৩৬ বছর বয়সী জেমস নর্দমা পরিচ্ছন্নতাকর্মী। 

জীবিকার তাগিদে কাজ করেন বাড়ি মেরামতেরও। মেয়ের কৃতিত্বে গর্বিত জেমস বললেন, ‘আমার মেয়ের সাফল্যই বলছে মেধাবীরা আসতে পারে সমাজের যেকোনো পর্যায় থেকে।’ জেমসের সঙ্গে অবশ্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে নিকোলার মা ডলি বাকল্যান্ডের। মেয়ের সাফল্যে জেমসের মতো খুশি ডলি বললেন,‘সেই ছোট্টটি থেকে ম্যাগাজিন বা বইয়ের ভুল ধরত ও। 

মেয়েটা ভীষণ পরিশ্রমী। স্কুল শেষে হোমওয়ার্ক ক্লাবে মিস করেনি একটা দিনও। বিশ্বজুড়ে মেনসার সদস্য এক লাখ ১০ হাজার। ইংল্যান্ডে সংখ্যাটা ২০,০০০ এর মতো। মাত্র ৮ শতাংশ সদস্যের বয়স ১৬ বছর। গড়ে একজন মানুষের আইকিউ স্কোর থাকে ১০০। সেটা ১৪০ হলে বলা হয় ‘জিনিয়াস।’ অথচ নিকোলার স্কোর ১৬২’র মধ্যে ১৬২! তাকে কী নামে ডাকবে? সূত্র: মিরর।

বোধহয় তোমাদের আগেই বলেছিলাম,আমি আসলে লেখক নই মূলতঃ পাঠক। এ যেমন ধরো লিখছি নিউটন নিয়ে; তার জন্মের বছরই গ্যালিলিও মারা যায়,তাই সেটি পরতে গিয়ে পাওয়া গেল মজার তথ্য আজকের মুক্তচিন্তার সবচেয়ে বড় প্রবক্তা সেদিনের খৃষ্টান পোপরা পৃথিবী নয় সুর্য সৌরজগতের মাঝখানে বলার অপরাধে (!) এমনকি মৃত গ্যলিলিও এর একটি দাত তিনটি আঙ্গুল তুলে নেয়।

পড়লাম দেখলাম সেগুলি যা আজও সংরক্ষিত আছে। এরপর পড়লাম কোন কোন বিখ্যাত মানুষের দেহের কি কি সংরক্ষিত আছে ইত্যাদী। লিখতে গিয়ে কখন যেন পড়ায় ডুবে যাই । ওদিকে সকাল গিয়ে সন্ধা হলো অবস্থা । তোমাদের চাপে পরেই এই লেখালেখির দুঃসাহস। তাই হাজারো কাজের চাপে অনেক সময় খেই হারিয়ে ফেলি। অনেকটা চিরেচেপ্টা।

যাকগে মূল প্রসঙ্গে যাই। প্রায় ৬৬ বছর আগের একটি ঘটনা; তৎকালিন রাজবাড়ী জেলার কোন এক নিভৃত গ্রাম। এক নববধু প্রাত্যাহিক কাজে দুয়ারের এপাশ হতে ওপাশে যাচ্ছিলেন। মাঝেই বেল গাছ, হঠাৎ মাথার উপর একটি ছোটখাট আকারের বেল পড়লো,কি ভয়ঙ্কর ঘটনা ! তবে রক্ষা,বেলটি আকারে ছোট হওয়ায় হয়তো এ যাত্রা বেচেঁ গেলেন। তবে সমস্যা বাধলো অন্য যায়গায় নববধুর শ্বশুর সাহেব গেলেন ভিষণ ক্ষেপে। 

হুঙ্কার ছাড়লেন ওহে সবাই দা কুড়াল নিয়ে আয় এ গাছ আর রাখবো না। নিজেই রেগেমেগে দা দিয়ে সেই বেলগাছের গোড়ায় দু-তিন ঘা বসিয়ে দিলেন। আশপাশের সদাশয় সবাই দৌড়ে এলো আরে, বেলগাছের কি দোষ ? হ্যা, বলে নেই, সেই সময়ে সেই নববধু মায়ের পেটে যে শিশু সন্তান ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামি পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক অধ্যাপক হয়েছিলেন।

এ ঘটনার প্রায় তিনশ বছর আগে ১৬৬৬ সালে ইংল্যান্ডের নিজবাড়ীতে গ্রীষ্মের শেষ সময় লাঞ্চের পর এক কাপ ধুমায়িত চা নিয়ে এক আপেল গাছের নিচে বসেছিলেন ২৩ বছরের এক তরুণ। হঠাৎ একটি আপেল টুপ করে তার গর্বধারিণী মা নয় বরং সরাসরি তার মাথায় পড়লো আর সাথে সাথেই সে মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠলো সেই বিখ্যাত অভিকর্ষের ফর্মুলা। তিনি হচ্ছেন বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ‘কী ফিগার’ স্যার আইজ্যাক নিউটন।

১৬৪২ সালে বিখ্যাত বিজ্ঞানী গ্যালিলিও ইটালির ফ্লোরেন্সে মারা যাওয়ার একই বছর প্রায় দুইহাজার কিলোমিটার দুরে ইংল্যান্ডের লিঙ্কনশাওয়ার কাউন্টির (উপজেলা) ওলস্টরপ মেনর নামক গ্রামে স্যার আইজ্যাক নিউটনের জন্ম হয়। বাবা ছিলেন (তার নামও আইজ্যাক নিউটন) একজন অশিক্ষিত ও দরিদ্র কৃষক,নিউটনের জন্মের তিনমাস পূর্বে বাবার মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন অপরিপূর্ণ ক্ষুদ্রাকৃতির এক শিশু,তার মা হানার ভাষায় তাকে এক লিটারের একটি মগের ভিতরই রাখা যেত। কেউ ভাবেনি  সে বাচবে । নিউটনের বয়স যখন কেবল তিন,তখন মা বিয়ে করেন এক ধনাঢ্য লোককে।

শিশু নিউটনকে তার নানুর কাছে রেখে স্বামীর বাড়ীতে চলে যান। জন্মের আগেই পিতা হারানো এবং ৩ বছর বয়স থেকেই মায়ের ¯স্নেহ বঞ্চিত,দারিদ্র ও অপুষ্টির শিকার এই শিশুটি প্রবল সংগ্রাম করেই বড় হন। তাই শিশু নিউটন তার সৎ পিতা এমনকি নিজের মায়ের প্রতিও যথেষ্ট ক্ষুদ্ধ ছিলেন। আর এই বেদনাবোধ থেকে তিনি জীবনে বিয়েই করেননি। ৭ বছর পর তার সৎপিতা মারা গেলে মা আবার তার কাছে চলে আসেন এবং রীতিমত তাকে একজন কৃষক বানানোর ব্যাপারে সর্বাত্তক চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু নিউটন কষ্ট করে লজিং থেকে এবং ইউনিভার্সিটিতে ছোটখাট নানা পার্টটাইম কাজ করে ক্যামব্রিজের বিখ্যাত ট্রিনিটি কলেজ তার পড়ালেখার চালিয়ে যান। এ কলেজটি কতটা ঐতিহ্যবাহী ও বিখ্যাত তা বুঝা যায় এর সাবেক ছাত্রদের ভিতর এ পর্যন্ত ৬জন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন এবং ৩৬জন নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। লর্ডবায়রন,নিলস বোর এমনকি বার্টার্ন্ড রাসেল এখানকার ছাত্র ছিলেন। ১৬৬৫সালে এখান থেকে নিউটন একটি সাদামাটা গ্রাজুয়েশন ডিগ্রী পান। ছিল না কোন অনার্স কিংবা ডিস্টিংশন মার্কস। 

এ সময় শুরু হয় লন্ডনের সেই ভয়াল গ্রেট প্লেগ (১৬৬৫-৬৬)। লন্ডন শহরেই এক লক্ষ অর্থাৎ প্রায় একচতুর্থাংশ মানুষ মারা যায়। ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে যায়। নিউটন তার নিজগ্রামে চলে আসেন এবং প্রায় ১৮ মাস গ্রামের অবারিত প্রকৃতির মাঝে সময় কাটান। আর এ সময়ই তার বিখ্যাত আবিস্কারসমূহ অভিকর্ষ,অপটিকস এবং ক্যালকুলাসের বিখ্যাত আবিস্কারসমূহ সম্পন্ন করেন।

নিউটন তার পরবর্তী স্মৃতিমূলক লেখাসমূহে এই দুই বছরের প্রকৃুতির মাঝে অবারিত অবস্থান ও পর্যবেক্ষণকে তার আবিস্কারসমূহের জন্য সবচেয়ে গুরুত্ব দেন। আর আমরাও বুঝতে পারি ছোটবেলায় তার একাকিত্ব,দারিদ্রতা ও শারীরিক দুর্বলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম। ছাত্রজীবনে ভাল প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়ালেখা, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌবনে প্রকৃতিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ ও সতত প্রশ্নকরার মত মনন যা তাকে সত্যিকার নিউটন হিসেবে তৈরী করে। যাকে সর্বকালের সবচেয়ে সেরা প্রভাব বিস্তারকারী বৈজ্ঞানিক বলা হয়।

আমরা আজকাল ‘পড়া’ বলতে শুধু বই পড়াই বুঝি। কিন্তু নিউটনের মাথায় আপেল পড়া কিংবা আর্কিমিডিসের পানির চৌবাচ্চায় পড়াও কিন্তু এক ধরনের পড়া। বানানতো একই। আসলে এ হচ্ছে প্রকৃতির মাঝে সন্তরণ এবং প্রকৃতিকে পর্যবক্ষণ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ আবিস্কারসমূহ এমনকি শ্রেষ্ঠ ছবি,নাটক,উপন্যাস সবই হয়েছে প্রকৃতিকে পর্যবেক্ষণ করে। কিন্তু হায় ! আজ প্রকৃতি থেকে আমরা কত দুরে । প্রকৃতি আমাদের ঘরে আজ বনসাই হয়ে আছে কিংবা টেলিভিশনের পর্দায় ডিজিটাল ফরমেটে। কিভাবে আমাদের ভিতর আর্কিমিডিস আর নিউটন তৈরী হবে।

তোমরাই পারো হতে আগামীদিনের নিউটন। আজই সিদ্ধান্ত নাও। এখই......স্বপ্ন দেখো।

পঠিত : ৭৬৯ বার

মন্তব্য: ০