Alapon

বাংলা বানান অনুশীলন পর্ব_০১


বাংলা বানান অনুশীলন
পর্ব__০১
হৃদয়ে রেখে ভাষার রীতি, আসুন শিখি শুদ্ধ বানান রীতি।

#প্রাককথন
বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির মা বললে বিন্দুপরিমাণ অত্যুক্তি হবে না। তাই মাতৃভাষা ভুল করা মানে মায়ের প্রতি অসদাচরণ করা। নিজের সন্তান যদি তার মায়ের প্রতি অসদাচরণ করে, তাহলে অন্যরা কি তার মায়ের প্রতি সদাচরণ করবে? অর্থাৎ আমরা আমাদের ভাষা বলতে কিংবা লিখতে যদি অহরহ ভুল করি তাহলে ভারত, পাকিস্তান কিংবা নেপালের লোকেরা কি বাংলা ভাষার প্রতি সদাচরণ করবে? অবশ্যই না, বরং উপহাস করবে ! তাই মায়ের প্রতি যাতে আমাদের সন্তানদের অসদাচরণ না হয়, সে জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। এখান থেকে কেউ অণুপরিমাণ উপকৃত হলে আমার শ্রম সার্থক বলে বিশ্বাস করি।
.
অনেক কথায় হলো আসুন এবার আমাদের মূল বিষয়ে ফিরে যাই।
আপনারা জানেন, ভাষা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই প্রতিনিয়ত যেমন এর শব্দভান্ডার সমৃদ্ধ হচ্ছে , আবার ব্যাপকহারে এর পরিবর্তন ও পরিবর্ধনও হচ্ছে। সে জন্য আমাদের মতো সাধারণ মানুষ তো বটেই,শিক্ষিতজনেরাও মাঝে মাঝে শব্দের শুদ্ধতা নিরূপণে বিপাকে পড়ে যান। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলা একাডেমিসহ বিভিন্ন পণ্ডিতজন ভাষার শুদ্ধতার জন্য অসংখ্য গ্রন্থ প্রণয়ন করছে। আজ আমরা সেগুলো থেকে কিছুর আলোচনা করব।
.
বানান কী?
বানান শব্দের উৎস হলো সংস্কৃত শব্দ 'বর্ণন' [description or spelling] অর্থাৎ, অন্তর্গত বর্ণসমূহের বিশ্লেষণকে বানান বলে।
মনে রাখা ভালো,বাংলা ভাষায় মোট শব্দ সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার। তার মধ্যে প্রায় ৫৫ হাজার তৎসম বা সংস্কৃত , ২ হাজার ৫শ আরবি-ফারসি, ৮শ ইংরেজি , ৪শ তুর্কি এবং ১শ ৫০টি পর্তুগিজ ও ফরাসি শব্দ রয়েছে। বাদ বাকিগুলো তদ্ভব ,দেশি ও অন্য বিদেশি শব্দ।

আজ আমরা জানব এমন কিছু শব্দ যে শব্দগুলো খুবই প্রচলিত কিন্তু মারাত্মাক ভুল।
তাহলে চলুন দেখে নেওয়া যাক কী সে শব্দ গুলো...

মোঃ, মোহাঃ, মুঃ, ডাঃ, ডঃ,বিঃদ্রঃ ইত্যাদি। এই শব্দগুলোর মাঝে সংক্ষেপকরণের জন্য ব্যবহৃত বিসর্গ ( ঃ ) বহুল প্রচলিত ভুল প্রয়োগ। প্রকৃতপক্ষে বিসর্গ একটি পৃথক বর্ণ; কোনো সংক্ষেপকরণ-চিহ্ন নয়। আসলে বিসর্গ দিয়ে যদি আমরা লিখি তাহলে এর অর্থ দাঁড়াবে মোহ্‌,ডাহ্‌, ডহ্‌,বিহ্‌,দ্রহ্‌।যা সত্যিই হাস্যকর। প্রমিত বাংলা নিয়মে একবিন্দু (.)-কে সংক্ষেপকরণ চিহ্ন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তাই এখন থেকে আমাদের লিখতে হবে_মো. মোহা. মু. ডা. ড. এবং বি.দ্র. । আর উক্ত শব্দগুলো এভাবে লেখায় বাঞ্ছনীয়।

আগামীতে - ভবিষ্যতের কোনো বিষয় বা কাজ প্রকাশে অনেকেই 'আগামীতে' শব্দটি ব্যবহার করে থাকেন। আসলে এটি একটি ভুল শব্দ। শুদ্ধ হচ্ছে আগামী দিনে বা ভবিষ্যতে। যেমন: আগামী দিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কপালে কী আছে তা কেউ বলতে পারে না!
পরবর্তীতে - এটিও একটি ভুল শব্দ। যার কোন অর্থ নেই। লিখতে হবে পরবর্তীকালে/সময়ে।
শুধুমাত্র ভুল, হবে শুধু । কেননা,শুধু অর্থ মাত্র। মাত্র অর্থই শুধু।
কেবলমাত্র লিখাও ভুল, লিখতে হবে কেবল। কেননা, কেবল অর্থ মাত্র আর মাত্র অর্থ কেবল।
দেশী নয়, দেশি; কিন্তু দেশীয়।
ইসলামী নয়, -- ইসলামি।[ প্রমিত নিয়মে অর্ধতৎসম শব্দে ই-কার বসবে]
বেশী নয়, বেশি। [বেশী মানে বেশভূষা আর বেশি মানে অধিক]
উপাধী নয়, উপাধি।
আটক বোঝাতে বন্দী নয়,বন্দি হবে।[ বন্দী অর্থ বন্দনা, আর বন্দি অর্থ আটক]

হজ্জ্ব কিংবা হজ্ব নয়, শুধুই হজ।
জরুরী নয়, জরুরি।
মডার্ণ নয়, মডার্ন ।[বিদেশি শব্দে ণ-ত্ব, ষ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য নয়]
ফার্ণিচার নয়, ফার্নিচার । [ বিদেশি শব্দ]
পোষ্ট নয়, পোস্ট। [ " ]
ষ্টোর নয়,স্টোর। [ " ]
ষ্টেশন নয়, স্টেশন। [ " ]
লিষ্ট নয়, লিস্ট। [ '' ]
বাসষ্ট্যান্ড নয়, বাসস্ট্যান্ড। [ '' ]
রেষ্টুরেন্ট নয়, রেস্টুরেন্ট।  [  " ]
এই জাতীয় অর্থাৎ বিদেশি যতগুলো শব্দ আছে, সেগুলোতে মূর্ধন্য-ষ না হয়ে দন্ত্য-স হবে।
.
আজ এপর্যন্তই । পরবর্তী পর্বের জন্য অপেক্ষা করবেন বলে আশা রাখি। আর এ-ব্যাপারে কোনো পরামর্শ বা মতামত থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে জানাবেন।
গ্রন্থসূত্র:
১.খটকা বানান অভিধান।
২.প্রথম আলো ভাষারীতি।
৩.প্রমিত বানান লেখার নিয়মকানুন।
৪.বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন, ইত্যাদি।

পঠিত : ১১৮৪ বার

মন্তব্য: ০