Alapon

এ-এক অন্যরকম ভালোবাসার অনুভূতি



এই স্মৃতিটা হয়তো আজীবন স্মৃতির পাতায় অম্লান হয়ে থাকবে; কিন্তু স্মৃতিটা যাকে নিয়ে সে মানুষটিই আজ বহুদূরে...

আজ আমার ক্লাস টু'য়ে পড়ুয়া একটা ছাত্রের কাণ্ড; অনার্স, মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্রদের হার মানাবে!
আমি তখন ক্লাস এইটে ক্লাস নিচ্ছিলাম, হঠাৎ  ছেলেটি দরজায় এসে আমাকে সালাম দিল,সাথে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। 
আমি সালামের জবাব দিয়ে তাকে ভেতরে আসতে বললাম।

ছেলেটি রুমে ঢুকে আমাকে বলল, 'স্যার আন্নের চোখ বন্ধ করেন, আঁর একটা দরকার আছে!( স্যার, আপনার চোখ বন্ধ করুন, আমার একটা দরকার আছে)
আমি তো পুরাই থ! 
যেহেতু ছোট মানুষ, তার ওপর শতহোক আমার ছাত্র, তাই সাত-পাঁচ বিবেচনা না করে চোখ দুটো বন্ধ করলাম.
কিছুক্ষণ পর অনুভব করলাম একটা ভারী কিছু আমার পাঞ্জাবির পকেটে ঢুকতেছে.. ওমনি চোখ দুটো খুলে খপ্ করে ভারী বস্তুটি ধরে পেললাম!
তারপর যে দৃশ্যের অবতারণা হলো, তাতে তো আমি রীতিমতো যারপরনাই হয়ে গেলাম।
আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম,ওই ভারী বস্তুটি অন্য কিছু নয় আমার ছাত্রের ডান হাত!
তার মানে কি দাঁড়ায়, সে দুষ্টুমি করে আমার পকেট থেকে টাকা নিচ্ছে?? নাহ আসলে তা নয়, তার উদ্দেশ্যটা ভিন্ন।
জিজ্ঞেস করলাম, কিরে বেটা এটা কী করলি?

সে অসহায়ের মতো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, 'স্যার, আজইগা বাড়ি থেইকা হাসটিয়া আনছি! আঁই তিন টিয়া খাইছি, আর দুই টিয়া দি আন্নের লাই চকলেট আইঞ্চি(স্যার, আজ বাড়ি থেকে ৫টাকা এনেছি, সেখান থেকে ৩টাকা আমি খেয়েছি আর ২টাকা নিয়ে আপনার জন্য চকলেট এনেছি)।
হাত দিয়ে দেখি সত্যিই ভালোবাসার মূর্তপ্রতীক চকলেট ২টি পকেটে চকচক করছে!
এই দৃশ্য দেখার পর, চোখের পানি আটকানোর ক্ষমতা কার আছে? এমনই সময় চোখে পাখি চলে এল।
শত চেষ্টা করেও তাকে আটকাতে পারলাম না! কিছু সময় পর চোখের পানি মুছে; ছাত্রটির কপাল ও মুখে দু-তিনটি আদর দিয়ে ক্লাস থেকে বিদায় হলাম।
 
চিন্তা করলাম_
সামান্য একজন শিক্ষক হিসেবে আমার জন্য এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে?
হাজার বছর বেঁচে থাকুক ছাত্র-শিক্ষকের এমন ভালোবাসা।

পঠিত : ৮০৬ বার

মন্তব্য: ০