Alapon

কবি আল মাহমুদ আজ উপেক্ষিত কেন?

আল মাহমুদ এদেশের বড় কবিদের একজন অবশ্যই । তবে আদর্শিকভাবে ইসলাম-ঘেষা হবার কারণে তিনি আজ চরমভাবে উপেক্ষিত । একটা সময় ছিল যখন ইসলামের বারোটা বাজাবার জন্য গণকণ্ঠ (অধুনালুপ্ত) নামে একটি পত্রিকা বের করা হয়েছিল । এর সম্পাদক ছিলেন আল মাহমুদ । তখন তার কবিতা এবং কবিত্ত্বের বন্দনা করার লোকের অভাব ছিল না । এখনও আছে, তবে তার প্রকাশ আমরা দেখতে পাইনা ।

সাংবাদিক সমাজের এক বিশাল অংশ বাম ঘরানা হবার কারণে মিডিয়াও তাকে বিসর্জন দিয়েছে । কিছুদিন আগে (২৩ অক্টবর, ২০১৫) প্রথম আলো জীবনানন্দ গবেষক ভূমেন্দ্র গুহ এর একটি স্বাক্ষাৎকার ছাপে । সেখানে বিষয়টি খুব প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে । সাক্ষাৎকারের একটি অংশ লক্ষ করুণঃ

ফয়জুল: বাংলাদেশের কবিতা পড়া হয়? বিশেষ কারও কবিতার কথা মনে পড়ে?—শামসুর রাহমান আমাদের দেশের বড় কবি ছিলেন।

ভূমেন্দ্র: আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ নামে একজন। ওঁর কবিতা ভালো লেগেছিল। পেল্লায় চাকরি করতেন সরকারের। আরেকজন আছেন আপনাদের—আল মাহমুদ, বিখ্যাত কবি, যথার্থ বড় কবি। তিনি কী রাজনীতি করেন তা নিয়ে আমার মাথাব্যথা নেই। দু-দুবার আমি বাংলাদেশে গেলাম। আমাকে আল মাহমুদের সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে আমাকে যাঁরা নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা কখনোই আমাকে বলেননি ‘ওঁর বাড়ি যাবেন না’। বলেছেন, ‘কাল নিয়ে যাব, পরশু নিয়ে যাব’—এভাবে কালক্ষেপণের কারণে আর যাওয়াই হলো না। আরেকবার গেলে দেখা তাঁর সঙ্গে করেই আসব। আমি হুেমায়ূন আহমেদের বাড়ি গিয়েছি। অবসরের মালিক আওরঙ্গজেব— আসলে নাম আলমগীর—আমি আওরঙ্গজেব বলি—একই বিল্ডিংয়ে থাকতেন দুজনে। পেল্লায় লেখক ছিলেন, বছর ঘুরতেই লাখ কপি বই বিক্রি হয়ে যেত তাঁর!

লক্ষ করলে দেখবেন, ফয়জুল সাহেব বড় কবি হিসেবে শামসুর রহমানের নাম মনে করিয়ে দিলেও তিনি সেখানে কোন পাত্তা পেলেন না, এমনকি ভূমেন্দ্র সাহেব তার সম্পর্কে একটি কথাও না বলে আল মাহমুদের কথাই বললেন ।

কবির সাথে দেখা করতে না দেয়ার কথা পশ্চিমবঙ্গের জনপ্রিয় কবি জয় গোসামিও একবার বলেছিলেন । তাকে নাকি আল মাহমুদ এর সাথে দেখা করতে অনেকে নিরুৎসাহিত করছিল।

কিন্তু যা ভাল, সত্য ও সুন্দর তা পরিস্ফুটিত হবেই । আজ আর কালের ব্যবধান । আজ সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে আমাদের দেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীরা তাকে উপেক্ষা করেন । শুধু তাকে নয় যেখানেই ইসলামের গন্ধ পাওয়া যায় সেখানেই তারা সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ খুঁজে পান । কিন্তু তারা একথা ঘুণাক্ষরেও চিন্তা করতে পারে না যে ইসলামকে ঘৃণার মাধ্যমে তারা নিজে কতবড় সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছেন !

অবশ্য কবি নিজেও এই সব নোংরামীর ব্যাপারে সচেতন । এ নিয়ে তিনি কবিতাও লিখেছেন,
একদা আমি যাদের কাছে নত হওয়া শিখেছিলাম,
রপ্ত করেছিলাম অভিবাদনের কায়দা-কানুন,
তারাই আজ আমার ঝুঁটি দেখে চিন্তিত।
তাদের দাঁত ঘষটানির শব্দ আমি শুনতে পাচ্ছি,
তাদের বন্দুকের নল এখন আমার দিকেই তাক করা।

আমার মাথার জন্যে অশ্রুসজল আবেদনে কাঁপছে
ভ্রমরকৃষ্ণ একজোড়া চোখের পাতাঃ
তার সন্তানদের কেউ যেন ‘বেঈমানের বাচ্চা’ না বলে।
দূর মফস্বল শহরের এক দুর্বল বৃদ্ধা
তার সান্ধ্য প্রার্থনার জায়নামাজ বিছিয়েছেঃ
প্রভু, আমার ছেলের ঘাড় পাথরের মতো শক্ত করে দাও।’
সাবধান, আমার মাকে কেউ যেন গোলামের গর্ভধারিণী না বলে।
(আমার মাথা - আল মাহমুদ)

কী দৃঢ় "মাথা"র লোক আল মাহমুদ ! যুগ তার মাথার দাম দিতে পারছে কি ?

"আল মাহমুদের ত কপাল ভাল । উনি এখন হাসপাতালে আছেন, চিকিৎসা পাচ্ছেন । আল মাহমুদের চাইতে বড় কবি ফররুখ আহমহদ এবং তার মেয়ে এই চেতনাজীবিদের খপ্পড়ে পরে বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন । ইতিহাস এসবের বিচার করবে । কলকাতার লোকেরা আল মাহমুদকে সবসময়ই শামসুর রমানের উপর স্থান দিয়েছেন, দিচ্ছেন । ধর্মের কল বাতাসে নড়ে"

ফররুখ আহমেদকে মুছে ফেলার অনেক চেষ্টাই করা হয়েছে, হচ্ছে । কারণ ফররুখ কখনো পেটের ক্ষুধার কাছে, খ্যাতির কাছে, রাজনীতির কাছে নিজেকে, নিজের বিশ্বাস ও আদর্শকে পরাজিত হতে দেননি । তাই মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি অখন্ড পাকিস্তানে বিশ্বাস করতেন । ভাবাই যায় না, একাত্তর পরবর্তী মুজীব শাসনামলে কেউ পাকিস্তানের সমর্থক হবেন । তার বিশ্বাসের ভিত কতখানি মজবুত ছিল ! একারণেই হয়ত "পাঞ্জেরী"কে, "সিরাজুম মুনীরা"কে কেউ মুছে দিতে পারে নি ।

আল মাহমুদকেও মুছে দেয়ার চেষ্টা আছে বেশ । কিন্তু চাইলেই কি "কাবিলের বোন", "বখতিয়ারের ঘোড়া", "জীবরাইলের ডানা" কি মোছা যায় ?? এরা কি পাখির কাছে, ফুলের কাছে, মুমিনের কাছে, মানুষের কাছে বেঁচে থাকে না ?

পঠিত : ১২৯৭ বার

মন্তব্য: ০