Alapon

আজ আমরা কেমন মুসলমান?

এক যুবক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলো। শিকার করার জন্য তীর-ধনুকও সঙ্গে নিল। পথিমধ্যে শিকারি দেখতে পেয়ে কাল বিলম্ব না করে  সে তীর ছুঁড়ে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ছোঁড়া তীর শিকারির পরিবর্তে জৈনক বৃদ্ধদের গায়ে লাগে, সঙ্গে সঙ্গেই সে বৃদ্ধ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এতে বৃদ্ধের সন্তান সেই  যুবকের বিরুদ্ধে খলিফার দরবারে হত্যার অভিযোগ নিয়ে আসে। পর্যটক যুবকটিও হত্যার দায় স্বীকার করে। তখন তার জন্য দুটি পথ খোলা থাকে; এক, মৃত্যুদণ্ড বরণ করে নেওয়া। দুই, প্রাণভিক্ষা চাওয়া।

কিন্তু তার জন্য সে প্রাণভিক্ষা চাইতে অস্বীকার করে। তার কথা হচ্ছে ,প্রাণভিক্ষা চাইতে হলে চাইব আল্লাহর কাছে, কেননা তিনিই প্রাণভিক্ষা চাওয়ার একমাত্র হকদার। সে যেহেতু একটা জীবন কেড়ে নিয়েছে তার বিনিময়ে সেও তার জীবন বিলিয়ে দিতে রাজি।

কিন্তু তাকে এজন্য তিন দিন সময় দিতে হবে। সে জানায় তার কাছে একজন ইয়াতিম ছেলে আছে যার দায়-দায়িত্ব তার ওপরই। সেই ইয়াতিম উত্তরাধিকার সূত্রে যা পাবে তা সে একটি জায়গায় গর্ত করে পুঁতে রেখে দিয়েছে। এ তিন দিনে উত্তরাধিকারের সম্পদগুলো সেই যুবকটি ইয়াতিম ছেলেকে বুঝিয়ে দিবে। কিন্তু যদি সে কাজটি না করেই মারা যায় তাহলে ঐ ইয়াতিমটা একটা কানাকড়িও পাবে না । ফলে সে অসহায় হয়ে পড়বে ।

 যুবকটি ওয়াদা করে সে যাবে এবং তিন দিনের মধ্যে কাজটি সম্পন্ন করে ফিরে আসবে। তারপর সে তার জন্য নির্ধারিত মৃত্যুদণ্ড মাথা পেতে নিবে। খলিফা তার প্রস্তাবে রাজি হন। কিন্তু এই শর্তে যে তার একজন জামিনদার থাকবে যে কিনা গ্যারান্টি দেবে; যদি যুবকটা ফিরে না আসে তাহলে যুবকের পরিবর্তে সেই ব্যক্তিই শাস্তিটি ভোগ করবে। এই শর্ত যুবকটাকে নার্ভাস করে দেয়। কারণ, সে এই এলাকার কাউকেই চেনে না, এখানে তার কোনো লোকজনও নেই।

 তাই কোনো লোক কী এই অপরিচিত যুবকের জামিনদার হয়ে অহেতুক শাস্তি পেতে চাইবে? সেই সময়ে রাসূল (সা.)-এর ঘনিষ্ঠ সাহাবি আবুজর গিফারি (রা.) সেই যুবকের জামিনদার হতে চাইলেন। ফলে যুবকটি তিন দিনের জন্য চলে যাওয়ার সুযোগ পেল। কিন্তু তিন দিন পার হলেও যুবকটা ফিরে এল না। কেউ তাতে খুব একটা অবাক হলো না, কারণ সবারই ধারণা ছিল যুবকটি মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে পালিয়েছে।  কিন্তু সকলেই রাসূল (সা.)-এর সাহাবি আবু জর (রা.)-এর জন্য দুঃখ প্রকাশ করল।


কারণ, অজানা-অচেনা এক যুবকের জন্য রাসূল (সা.)-এর এই ঘনিষ্ঠ সাহাবিকে হয়তো জীবনটা দিতে হবে। জল্লাদ আবু জর (রা.)-কে জবাই করার জন্য উদ্যত হচ্ছে ঠিক এমনই সময় ধুলো-ময়লাভরা একটি ঘোড়া চালাতে চালাতে সেই যুবকটিকে আসতে দেখা গেল। তার পুরো শরীর ঘামে ভিজে একাকার। সে এসেই চিৎকার করে বলতে লাগল- আমি দুঃখিত, আমি দুঃখিত, আমার দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু আমি চলে এসেছি, তাই এবার আপনারা আমার শিরশ্ছেদ করুন। উপস্থিত সকলে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল।

 তারা যুবকটিকে বলল, ‘তুমি তো মুক্তি পেয়েছিলে, ইচ্ছে করলেই পালিয়ে যেতে পারতে। কেন তুমি ফিরে এলে? যুবকটি উত্তরে বলল, আমি এসেছি, আমি কথা রেখেছি। কারণ, আমি একজন মুসলমান। আমি কীভাবে কাউকে এই কথা বলার সুযোগ দিব যে মুসলমানরা ওয়াদা দিলে তা রাখে না। সমবেত জনতা এবার হযরত আবু জর (রা.)-কে প্রশ্ন করলেন, আপনি কি এই যুবককে চিনতেন? অথবা আপনি কি জানতেন যে, সে প্রতিশ্রুতি রাখার ব্যাপারে খুবই দায়িত্ববান? এই জন্যই কি আপনি তার জামিনদার হতে চেয়েছিলেন? আবু জর (রা.) উত্তর দিলেন, না। আমি জীবনে কখনো এই যুবককে দেখিনি। কিন্তু আমি কেন কাউকে এই কথা বলার সুযোগ দিব যে, মুসলমানদের মধ্যে কোনো সহানুভূতি নেই, মানবিকতা নেই। তাই আমি তার জামিনদার হয়েছিলাম।

এসব ঘটনা দেখে নিহত সেই বৃদ্ধের পরিবার-পরিজনরা এবার হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন। তারাই আবেদন করলেন, দয়া করে ওই যুবককে শাস্তি দিবেন না। আমরাইবা কেন অন্য কাউকে এই কথা বলতে সুযোগ দিব যে, ইসলামে ক্ষমার আর কোনো অনুশীলন নেই। আহ কতই না মহান ছিলেন সেই সব মানুষেরা। ভাবতেই অবাক লাগে আর আজ আমরা কীসের মানুষ, কীসের মুসলমান?

গ্রন্থসূত্র: ডেসটিনি ডিজরাপ্টেড

পঠিত : ৮৬৬ বার

মন্তব্য: ০