Alapon

মা কথাটি ছোট্ট অতি...

মাত্র একটি অক্ষর ‘মা’। অফুরন্ত ভালোবাসা আর পরম মমতার প্রতিক মা। মাকে ভালোবাসা -শ্রদ্ধা জানাতে কোন দিন-ক্ষণের প্রয়োজন হয় না। মা তো সবখানে, সবসময়ের আশ্রয়। তবু পাশ্চাত্যের অনুসরণে মাকে গভীর মমতায় স্মরণ করার দিন আজ। বিশ্ব মা দিবস । প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার পালিত হয় এই দিনটি।

মা দিবসে মায়ের জন্য মেকি ভালোবাসা প্রদর্শনের এ প্রতিযোগীতার ভীড়ে কিছু নির্মোহ সত্য কথা না বললেই নয়। ‘মা’ কথাটির মধ্যে সারা দুনিয়ার মধু যেন লুকিয়ে আছে। আমাদের সকল দুঃখ-দুর্দশা, বিপদ-মুসিবত, অপ্রাপ্তির যাতনা মুছে যায় এই একটি মাত্র উচ্চারণে। আমাদের বিপদের চরম মূহুর্তে নিজের অজান্তে যে নামটি মুখ থেকে বেরিয়ে আসে তা হলো ‘মা’।

কিন্তু এই মায়ের জন্য আমরা কতটুকুই বা করতে পারি! বিশেষত তারুণ্য ও যৌবনে পদার্পন করার পর আমরা আমাদের শক্তিমত্ত্বার পরিপক্কতা ও যোগ্যতার দাপটে ভুলে যাই এই মায়ের কথা। মায়ের কথা-বার্তা শুনতেও তখন বিরক্তি প্রকাশ করি। ইচ্ছে হলেই মাকে বকে দেই। নিজের অযোগ্যতার জন্য মাকে দোষারোপ করি। বিবাহিত জীবনে স্ত্রীর মনোরঞ্জনের জন্য মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করি। কিন্তু এসব কিছু আমরা অবলীলায় করে যাওয়ার সময় আমরা একবারও ভাবার সুযোগ পাই না যে, এই মায়ের জন্যই আজ আমার এই অবস্থান। এই মা আমাকে নিজের জীবন বিপন্ন করে পেটে ধারণ করেছেন। অসহনীয় কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করেছেন। হাজারো বিরক্তিকে সহ্য করে ধৈর্য্যের সাথে আমাকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন।

মায়ের অবদান এর মূল্য দেয়া অসম্ভব। হাদীস শরীফে এসেছে - জনৈক ব্যক্তি রাসূল (সা.) এর দরবারে হাজির হয়ে অভিযোগ করল যে, তার মা বদমেজাজের। রাসূল (সা.) বললেন, নয় মাস পর্যন্ত অব্যাহতভাবে যখন তিনি পেটে ধারণ করে ঘুরছেন তখন তো তিনি বদমেজাজের ছিলেন না। লোকটি বলল, হুজুর আমি সত্যই বলছি, তিনি খারাপ মেজাজের। রাসূলে কারীম (সা.) বললেন, তোমার জন্য যখন তিনি রাতের পর রাত জাগ্রত থেকেছেন এবং তোমাকে দুধ পান করিয়েছেন তখন তিনিতো বদমেজাজের ছিলেন না। সেই ব্যক্তি বলল, আমি আমার মায়ের প্রতিদান দিয়ে ফেলেছি। রাসূল (সা.) বললেন, সত্যিই কি তার প্রতিদান দিয়ে ফেলেছো? জবাবে লোকটি বলল, আমি আমার মাকে কাঁধে চড়িয়ে হজ করিয়েছি। তখন রাসূল (সা.) এবার সিদ্ধান্তকারী রায় দিয়ে বললেন, “তুমি কি তার সে কষ্টের বদলা বা প্রতিদান দিতে পার যা তোমার ভূমিষ্ট হওয়ার সময় স্বীকার করেছেন?” অর্থাৎ মাকে পিঠে করে হজ সম্পাদন করালেও ভূমিষ্ট হওয়ার সময়ে তার যে কষ্ট হয়েছে সেটার ন্যূনতম বদলা হবেনা। 

পাশ্চাত্য সভ্যতায় সাধারণত সারা বছর পিতা মাতার কোনো খোঁজ-খবর রাখেনা। শুধু একটি বিশেষ দিনে পিতা-মাতাকে স্মরণ করে দু-একটি হাদিয়া, কার্ড বা মেসেজ পাঠান। পাশ্চাত্য সভ্যতার আগ্রাসী-প্রভাবে আমাদের দেশেও পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ক্ষমার অযোগ্য অবহেলা শুরু হয়েছে। তাই আসুন, মায়ের মর্যাদা ও সম্মানকে বিশেষ দিনে আবদ্ধ না করে ইসলাম প্রদত্ত মর্যাদা ও সম্মানের আলোকে সারাটি জীবন ভরে তাকে সম্মান করি, মর্যাদা দিই। জাতীয় কবির ভাষায়-
যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!

পঠিত : ৯৩২ বার

মন্তব্য: ০