Alapon

আমাদের প্রয়োজন পেশাদার লেখক!

১৯৮৩ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম নাটক ‘প্রথম প্রহর’ বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। একটা নাটক দিয়ে বাজিমাত। বাজিমাত হবার পর সাংবাদিকগণ তাঁকে প্রশ্ন করেছিল, আপনি এই নাটক কেনো লিখেছেন?

জবাবে হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন, ‘একটা রঙ্গিন টেলিভিশনের জন্য। বিটিভির সঙে আমার চুক্তি হয়েছিল, যদি তাদেরকে একটা নাটক লিখে দিতে পারি তাহলে তারা আমাকে একখানা রঙ্গিন টেলিভিশন কিনবার টাকা দিবে। আর এ-কারণেই আমি ‘প্রথম প্রহর’ নাটকটি রচনা করি।’

বাঙালী কোনো কালেই অতিসরল এবং সাবলিল সত্যিকে সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। তখনো পারেনি। যথারীতি শুরু হল সমালোচনা; হুমায়ূন আহমেদ হয়ে গেলেন বাজারি লেখক!

বাঙালী কেনো যেনো মনে করে, লেখালেখি কারো পেশা হতে পারে না। বরঞ্জ অন্য কোনো পেশার পাশাপাশি লেখালিখিটা চালানো যেতে পারে কিন্তু লেখালিখি পেশা হতে পারে না। তাহলেই বাঙালীর নাকি জাতকূল সব বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে যাবে!

আমার প্রশ্ন হলো, ডাক্তারি কিংবা ওকালতি যদি পেশা হতে পারে তবে লেখালিখি কেনো পেশা হতে পারে না। লেখালিখি পেশাটাও তো ডাক্তার কিংবা ওকালতির ন্যায় জনসম্পর্কিত পেশা। বরঞ্জ তখন, বাংলা সাহিত্য প্রতারণার হাত থেকে রক্ষাই পেতো।

যেমন, কোনো ব্যক্তিই এম.বি.বি.এস পাশ না করে নিজেকে ডাক্তার কিংবা এল.এল.বি সম্পন্ন করে অতঃপর বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় পাশ না করে নিজেকে এ্যাডভোকেট হিসেবে পরিচয় দিতে পারে না। তেমনি, কোনো যদু-মদুও শুধুমাত্র দুই পাতা লিখে প্রকাশককে টাকা দিয়ে বই প্রকাশ করে নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে পারতো না। লেখক হতে গেলেও তখন যোগ্যতার দরকার হতো। আর লেখক হবার প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতাই হল ‘পড়া। সেইসাথে ব্যাকরণ শিক্ষা এবং বানান চর্চা।

বাঙালী না পড়েই, ব্যাকরণ না শিখেই, বানান চর্চা না করেই কোনোরূপ দু-পাতা লিখে প্রকাশকের হাতে ৫০ হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে শ’পাঁচেক বই বের করেই হয়ে যান লেখক। আহ, কি শান্তি! এই শান্তির যোশেই কিনা প্রতিবছর বই মেলায় প্রায় ১০-১৫ হাজার মানহীণ বই প্রকাশিত হয়ে থাকে। তখন আর বাঙালীর জাতকূল কিচ্ছু যায় না। অথচ পেশাদার লেখক সমাজ তৈরী হলে তখন প্রকাশকদেরকেও এই ধান্দাবাজির আশায় চাতক পাখির ন্যায় পথ চেয়ে বসে থাকতে হেতো না।

শুধু পেশাদার লেখক হতে গেলেই বাঙালীর যতো আপত্তি! প্রতিবছর যে প্রতারিত হচ্ছে তাতে বাঙালের আপত্তি নেই।

হুমায়ূন আহমেদ স্বজ্ঞানে-স্বইচ্ছায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষকের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে পেশাদার লেখক বনে গেলেন। অথচ বাঙালীরাই নামের আগে বসাইয়া দেয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রভাষক’! তাঁকে শুধু কথাসাহিত্যিক বলতেই বাঙাল শরমে-লইজ্জায় মারা যায়!

কিছুদিন আগে এক প্রবীণ সাহিত্যিক বড়ই আফসোস করে বললেন, ‘আহহা! আমাদের যদি হুমায়ূন আহমেদ-এর মত আরও কয়েকজন বাজারি লেখক থাকতো। তাহলে বাংলা সাহিত্যের দাদাগিরিটা আর পশ্চিম বাংলার দাদাদের হাতে থাকতো না। ’

পঠিত : ২৪১৭ বার

মন্তব্য: ০