Alapon

শিয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি

আমাদের মাঝে অনেকেই শিয়া মতবাদ নিয়ে ধুয়াশাগ্রস্ত। এর অন্যতম কারণ হলো বর্তমানে শিয়াদের সামরিক শক্তি। তাঁদের সামরিক শক্তি আর রাষ্ট্র পরিচালনার অভিনব কৌশল দেখে অবনেকেই তাঁদের মতবাদের প্রেমে পরে যান। আর সত্যি কথা বলতে তাঁদের কার্যকলাপ মানুষকে আকৃষ্ট করারই মতো। কিন্তু আমরা যারা তাঁদের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছি তাঁরা কি কখনো তাঁদের সম্পর্কে ন্যূনতম জানার চেষ্টা করেছি নাকি তাঁদের বাহ্যিক মরীচিকা আমাদের ধোঁকায় ফেলেছে?

তো যাদের মনে সত্যকে গ্রহণ করার সৎ সাহস আছে তাঁদের জন্যই মূলত আমারা আজকের এই দীর্ঘ পোস্ট। আশা করি পড়ার পর ফায়েদা বৈ কিছুই হবে না। আর কারো পরামর্শ বা সংশোধন সাদরে গৃহীত হবে।

(শিয়া মতবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস)

হিজরী ৩৫ সাল। হযরত আলী রাঃ ও মুয়াবিয়া রাঃ এর মাঝে দ্বন্দ চলছে উসমান রাঃ এর হত্যার বিচার নিয়ে। ইহুদীরা ইসলামের সূচনালগ্ন থেকেই মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করতে সদা তৎপর। কিন্তু কোন ভাবেই না একটি দেহের ন্যায় এই মুসলিম জাতীকে বিভক্ত করার কোন ইস্যু পাওয়া যাচ্ছিলো না। অবশেষে মুসলিমদের মাঝে এই মতানৈক্যকে তাঁরা মহা সুযোগ মনে করে এবং তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে মাঠে নেমে পরে।

আমরা জানি রাসূল সাঃ এর যুগ থেকেই অনেক মুনাফিক ছিলো যারা গোপনে ইসলামের ক্ষতি করতে চাইতো। তাঁরাও এবার ক্ষতি সাধনের একটা সুযোগ পেয়ে গেলো। তো এভাবেই ইহুদী আর মুনাফিকেরা একত্রে মিলিত হয়ে তাদের প্ল্যান কার্যকর করতে শুরু করলো। তারপর যা হোল তা খুবই মর্মান্তিক।

লোকটির নাম আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা। নাম শুনেই মনে হচ্ছে এ যেন এক মুসলিম। আল্লাহর প্রিয় দু’টি নামের একটি নাম তাঁর। কিন্তু সে ছিলো নিফাক ধারণকারী বা মুনাফিক। ইহুদীদের সাথে তাঁর ছিল খুব খাতির। ইহুদীরা তাকে পেয়ে যেন অমাবস্যার অন্ধকারে আকাশের চাঁদ খুঁজে পেল। মুহূর্তের মাঝেই নীলনকশা রেডি।

তাঁর জাগরণের মূখ্য বিষয় ছিল খেলাফতকে কেন্দ্র করে।এহেন অবস্থায় আব্দুল্লাহ বিন সাবা তাঁর প্ল্যান বাস্তবায়নে তাঁর সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে হযরত আলী রাঃ এর পক্ষ নিয়ে মিশন বাস্তবায়নের সূচনা করে। সে আলী রাঃ এর নামে নানা রকম অলৌকিক কথা প্রচার করতে থাকে। তাঁর বংশ নিয়ে তাঁর পরিবার নিয়ে নানা রকম আজগুবি কথার প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে লাগলো। তাঁরা বলতে লাগলো রাসূল সাঃ এর পরিবার দুনিয়ায় আল্লাহর ছায়া,পাপমুক্ত, ত্রুটিহীন এবং তাঁদের মাঝে আল্লাহর অংশ রয়েছে কাজেই তাঁদের উপর আর কারো ইমামাতের অধিকার থাকে না।

যখন আলী রাঃ এসব জানতে পারলেন তখন তাঁদের কঠোরভাবে হুঁশিয়ার করেন। তাঁর নামে এদের এমন প্রপাগান্ডার কথা শুনে তাঁদেরকে তওবা করতে বাধ্য করেন। তাঁর সাথে সাথে আব্দুল্লাহ বিন সাবা ও তাঁর সাথীদের মাদায়েনে বিতারিত করেন। পরবর্তিতে খেলাফতের দায়িত্ব পালন ও নানান দ্বন্দের কারণে আলী রাঃ এদের ভ্রূক্ষেপ করার সুযোগ পাননি।

এরপর যখন যরত আলী রাঃ ইন্তেকাল করলেন তখন তাঁরা আবারো মাথা চারা দিয়ে উঠলো। এবং প্রকাশ্যে চালাতে লাগলো তাঁদের প্রপাগান্ডা। হুসাইন রাঃ এর শাহাদাতের পর এদের আন্দোলনে অনেক ইরানিরাও যোগ দিলো। তাঁরা বলতে লাগলো ইমামাতের ক্ষেত্রে প্রকৃত হকদার আলী রাঃ এবং তিনি জীবিত আছেন(!) মেঘের গর্জন তাঁরই আওয়াজ, বিদ্যুতের ঝিলিক তাঁরই হাসি(!) তাঁদের এই প্রপাগান্ডার কারণে জন্ম নিলো আরো কিছু সম্প্রদায়ের।

১২৯ হিজরীতে আবু মুসলিম খোরাসানি,১৮৭ হিজরীতে বারমাকি সম্প্রদায় এবং ২৫৯ হিজরী পর্যন্ত তাহেরিয়া প্রসাসন উল্লিখিত আন্দলনের ফল। তারপর ৫৬৮ হিজরীতে সুলতান সালাহউদ্দিনের পর এ আন্দোলনের নতুন নামে আত্মপ্রকাশ ঘটলো।
রেফারেন্সঃ পৃষ্ঠা নং ১-৩, শীয়া মতবাদ ও ইসলাম (সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আলী)

শিয়াদের কিছু সম্প্রদায়
শীয়া মতবাদের অনেকগুলো ফিরকা বা দল রয়েছে এর মাঝে সবচেয়ে প্রভাবশালী দল বা ফিরকা হচ্ছে “ইসনা আশারিয়া ইমামিয়া” বা ইমামিয়া শিয়া বা ১২ ইমামিয়া শীয়া। এর পরেই রয়েছে ইসমাঈলিয়া বাতেনিয়া শীয়া এবং যাইদিয়্যাদাহ শীয়া। এছাড়াও এদের অনেক ফিরকা আছে। কেও কেও এদের ফিরকা ৮৫ বলেও উল্লেখ করেছেন। আমাদের আলোচ্য বিষয় হলো এই তিন প্রকার প্রভাবশালী শীয়াদের নিয়ে। এরাই বর্তমান সময়ে ভয়ঙ্কর সব ফাঁদ পেতে রেখেছে আর আমদের সাধারণ মুসলিমরা এসব ফাঁদে পা দিচ্ছে অহরহ।

প্রচার ও প্রসারে শিয়া মতবাদ......
এভাবে শিয়াদের ধর্মমত একটি বিশেষ রূপ ধারণ করলো। তাঁরা খোলাফায়ে রাশেদিনের মাঝে একমাত্র আলী রাঃ কে ইমামাতের একমাত্র হকদার বলে আকীদা রাখেন এবং তাঁদের অধিকাংশ ইমামামিয়া শিয়া নামে পরিচিত। শিয়া পণ্ডিত হাসান ইবনে ইউসুফ ইবনে আলী ইবনে মোতাহার আল হাল্লি (৬৪৮-৭২৬ হিঃ) “মিনহাজুল কারামাহ” নামক বই লিখে কুরআন হাদিসের আজগুবি ব্যাখ্যা দিয়ে শিয়া মতবাদকে সঠিক ও সত্য প্রমাণে চেষ্টা করেন, এসময় শিয়ারা তাতারিদের সাথে মিশে মুসলিম উম্মাহের ধ্বংশ সাধনে ঝাঁপিয়ে পরে।

হাসান ইবনে ইউসুফ ইবনে আলী ইবনে মোতাহার আল হাল্লি ইলখানি রাজা যায়েতুর (৬৭০-৭১৬ হিঃ) এর নামে উক্ত বইটি লিখেন। তিনি রাজাকে খোদাবান্দা বলে দাবী করেন। “একবার রাজা তাঁর স্ত্রী কে রাগান্বিত হয়ে তালাক প্রদান করেন, তারপর তিনি তাকে ফিরিয়ে নিতে চাইলে আলেমগণ ফতোয়া দেন যে তাঁদের আবার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া আবশ্যক কিন্তু রাজা এ বিধান মানতে নারাজ। ইবনে মোতাহারের নিকট এই সমস্যার ফতোয়া চাইলে তিনি তাকে বলেন, তালাকের সময় কি দুজন সাক্ষ্য উপস্থিত ছিলো কিনা, রাজা দুজন সাক্ষ্যি ছিলনা বললে তিনি ফতোয়া দেন যে তালাকের শর্ত পূর্ণ হয়নি এবং তালাক হয়নি। এতে রাজা তাঁর প্রতি যারপর নাই খুশি হলেন এবং তাকে নিজের একান্ত বিশেষ ঘনিষ্ট ব্যক্তি বলে গ্রহণ করলেন, (আলমুনতাক্বা, আল্লামা যাহাবী রহঃ)


হিজরী ৭৭ সালে খোরাসান ও ইরানে সর্বপ্রথম সরকারীভাবে শিয়া মত এভাবে চালু হয়। এরপর ৩০০ বছর পর সফবিয়া রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলে দ্বিতীয়বার ইরানে সরকারী ভাবে শিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়।এ বিষয়ে বিস্তারিত ইতিহাস দেখুন (শীয়া মতবাদ ও ইসলাম, সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ আলী) এই ছিলো একনজরে শিয়াদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।  

পঠিত : ৫৭৭৩ বার

মন্তব্য: ০