Alapon

কারো সমস্যা দেখে সহযোগিতা করলে, অনেক মানুষই কৃতজ্ঞ-বদান্য ব্যক্তি হয় না...

সমস্যা জর্জরিত কারো করুণ পরিস্থিতি দেখে এবং সে ব্যক্তিকে হাত পাতার আগেই, অনেকে সহযোগিতা করে থাকে। এই চরিত্রটা মানুষকে মহানুভবতা প্রদান করে। আল্লাহ মানুষের এই গুনকে খুবই পছন্দ করে। সৃষ্টি-জগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জ্বীনের কিছুমাত্র ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ এ কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেনা। কোন কারণে তার জন্য যা করা হয়েছে তার কোন দৃষ্টান্ত দিলে উল্টো বলে দেবে, উপকার করেছেন কেন? আমি কি দাবী করেছিলাম নাকি যে, আমার জন্য উপকার করেন? এই ধরনের প্রতিউত্তরে যিনি উপকার করেন, তিনি খুবই আঘাত প্রাপ্ত হন। কখনও নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন যে, বাকী জীবনে আর কারো উপকার করব না!

ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা যায়, স্বয়ং আল্লাহ তাঁর এই গুণাবলীর পরিপূর্ণতা দিয়েই মহাবিশ্ব পরিচালনা করেন। মানুষ তার নিজের প্রয়োজনীয়তাকে উপস্থাপন করার আগেই, তাদের প্রয়োজন অনুপাতে পানি, অক্সিজেন, বৃষ্টি, খাদ্য, বাতাস, আর্দ্রতা, সহনীয় উষ্ণতা, পরিমিত আবহাওয়া সহ যাবতীয় সবই দান করেন। এটাই আল্লাহর অনুপম দয়া। কেউ এটার জন্য আল্লাহর বদান্যতা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুক বা নাই করুক, আল্লাহ তার সকল সৃষ্টির জন্যই এই অফুরন্ত দয়া দেখিয়ে যান। আল্লাহর এই গুনাবলীকেই ‘রব’ তথা রাব্বুল আলামীনের অসীম দয়া হিসেবে পরিগনিত হয়।

তাই বলে কি গায়ে পড়ে উপকার করা বন্ধ করতে হবে? কখনই নয়! এই ধরনের উপকারে আল্লাহ যে পরিমান খুশী হয়,শয়তান ততোধিক পরিমানে পেরেশান হয়। ফলে শয়তান তার চিরাচরিত পন্থায় খেলতে থাকে। যিনি উপকার পেয়েছেন তার দ্বারা উপকারের কথা অস্বীকার করা, অবজ্ঞা-তাচ্ছিল্য করা, এমনকি কটুক্তির মোকাবেলাও করতে হতে পারে। এ কারনে উপকারী ব্যক্তি হৃদয়ে বড় ব্যাথা পায়। তখন তিনি উত্তেজিত হয়ে দুটো কাজ করে ফেলতে পারেন!

এক, হয়ত উপকার নেওয়া মানুষটির চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে তাকে অপমান করবে। 
দুই, গোস্বা করে ওয়াদা করতে পারে যে, ভবিষ্যতে আর কোনদিন উপকারের কাজ করবে না।

দুটোর যেকোন একটিই হউক শয়তান তা ঘটাতে চায়, যেটিই ঘটুক সে খুশিতে লাফাতে থাকে। কেননা মানুষটি পথভ্রষ্ট হল, আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেছেন, “দানের কথা মনে করিয়ে খোটা দিয়ে এবং কষ্ট দিয়ে তোমাদের দানকে বরবাদ করে দিয়ো না” আল বাক্বারাহ। সুতরাং খোঁটা দিলে দান বরবাদ হয়, আবার আর কারো উপকার না করার সিদ্ধান্ত নিলে কাজটি ওখানেই থেমে দাড়ায়। এভাবে শয়তান শোধ নেয়!

আল্লাহ বলেছেন, “আমি পরীক্ষা ব্যতীরেকে, এমনিতেই কাউকে জান্নাত দিয়ে দিব না” আল বাকারাহ। কোন মানুষ জানেনা যে, তার পরীক্ষার ধরন কেমন হতে পারে? কিন্তু শয়তান ঠিকই জানে কোনটি মুল পরীক্ষা। নরম হৃদয়ের অধিকারী, উপকারী মানুষের জন্য, উপকারকে অস্বীকার করাটাই হল এক ধরনের পরীক্ষা। এটা কঠিন পরীক্ষা। সতর্ক না হলে, এই পরীক্ষায় পাশ করা খুবই দূরহ। কাউকে উপকার করলে, যেন হৃদয়ে এই চিন্তা থাকে যে, নিতান্ত আল্লাহকে খুশী করার জন্যই কারো উপকার করা হয়েছে। উপকার পাওয়া ব্যক্তি ভবিষ্যতে কখনও স্বচ্ছল হয়ে বদান্যতা দেখাল, নাকি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, তার জন্য তোয়াক্কা না করা। ভবিষ্যতে সে কোন একদিন তার শত্রু হয়েও উঠতে পারে। তাই চিন্তায় দৃঢ়তা থাকা দরকার, এই ধরনের পরিস্থিতিতেও যেন, উপকারের উদাহরন না টানা হয়।

উপকারীর উপকার স্বীকার না করা মানুষের স্বভাবজাত খাসিয়ত। যে আল্লাহ মানুষকে এত ক্ষমতা, এত সুবিধা দিয়েছেন, তারা সেই আল্লাহর উপকার সম্পর্কে বে-খবর। সেখানে একজন মানুষের উপকারের কথা ভুলে যাবে এটাতো আরো সাধারণ কথা! আর অকৃতজ্ঞ মানুষের কথা বলেছেন? না তারা জান্নাতে যাবে না এবং দুনিয়াতে যতদিন বেঁচে থাকবে, ততদিন অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের উ্পর ভর করেই চলতে থাকবে। দুনিয়ার জীবনে ক্ষুদ্র একটি শখ পুরন করাও তাদের পক্ষে দুষ্কর হয়।

লিখেছেন: নজরুল ইসলাম টিপু

পঠিত : ১৩৪৫ বার

মন্তব্য: ০