Alapon

বিএনপির পতনের যতসব কারণ...

খালেদা জিয়া জরুরি অবস্থার সময়ে আপস করেই জেল থেকে বের হইছিলেন। আপসের কারণে তিনি সব জেনেবুঝে পাতানো নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন।
মুশকিল হলো ২০০৮ সালের ওই নির্বাচনে যাইতে জামায়াতও উন্মুখ ছিল। তাদের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া তার দলের আপসকামীতা আড়াল করে ফেলছিলেন।
এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি মূলত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মজিনার মিথ্যা আশ্বাসের কারণে। এরসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা আন্দোলনের কোনো সম্পর্ক ছিল না। আবার এ বছর যে পাতানো নির্বাচনে হইছে তাতে বিএনপি খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশেই অংশ নিছে।

গত ১২ বছর বিএনপি বহু আকামই করেছে। কিন্তু তাদের লোকেরা সব দায় জামায়াতের ওপর চাপিয়ে দায় সারছে। এরা এতটা নিকৃষ্ট যে নিজেদের দালালি তাবেদারি নিয়ে কোনো আত্মপর্যালোচনা করে জামায়াতকে সব দোষ দিয়ে নিজেরা সাধু সেজে থাকে।

কিন্তু এবারের খেলা অনেক কঠিন। অবৈধ সংসদে গেছে বিএনপির তথাকথিত এমপিরা। এর জন্য তারা আর জামায়াতের ওপর দোষ চাপাতে পারছেন না। বরং সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি বলতে বাধ্য হচ্ছে যে তারেক রহমানই এই কাজের আসল হোতা।

আমি বারবার বলে আসছি জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলন না করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের নামে ওয়ান ইলেভেনকে বৈধতা দেওয়ার পর খালেদা জিয়ার হাতে আর কোনো রাজনীতি নাই। জিয়ার শাহাদাতের পর বিএনপির কোনো রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছিল না, স্রেফ এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তৈরি হওয়া আপসহীনতার ইমেজের কারণে খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। কিন্তু রাজনীতিক হিসেবে সফল হলেও শাসক হিসেবে তিনি প্রতিবার ব্যর্থ হয়েছেন। একবারও তিনি শান্তিপূর্ণভাবে মেয়াদ শেষ করতে পারেননি। প্রতিপক্ষের কোনো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নয়, ক্ষমতা আকড়ে থাকার লোভ আর দুনীতির কারণে তার সরকারগুলো শেষের দিকে এসে জটপাকিয়ে পতিত হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে সবেধন নীলমনি আপসহীনতার ইমেজটা খুইয়ে খালেদা জিয়া নিঃস্ব হয়ে পড়েছিলেন।

এই বিষয়টি বুঝতে পেরেই একদিকে আপসহীনতার দায় জামায়তকে চাপানো এবং ক্ষমতায় আসতে ভারত আমেরিকার পায়ে লুটিয়ে পড়তে মরিয়া ছিলেন খালেদা জিয়া ও বিএনপি। কিন্তু প্রভুর পা ছোয়ার সুযোগটাও তিনি পাননি।

মাঝখানে একটা বড় ঘটনা ঘটেছে, তাহলো জামায়াতকে দোষারোপ করতে গিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব ফাঁস হয়ে গেছে। দেশের অন্যতম প্রধাম দল হিসেবে বিএনপি যদি ছোট দল জামায়াতের কথায় চলে তাহলে বিএনপি থাকার দরকার কি, তারা জামায়াত হয়ে গেলেই পারে। কিন্তু আসল ঘটনা হলো বিএনপি মোটেই জামায়াতের কথা অনুযায়ী চলে না। বরং আপসকামীতার সবকিছু নিজেরা করে জামায়াতকে দোষারোপ করেছে।

এবার এমপিদের শপথ নেওয়ার মাধ্যমে দেখা গেছে বিএনপি নিজের স্বার্থে কতটা এককভাবে আকাম করে। তারা ২০ দলীয় জোটের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিল শপথ নেবে না। কিন্তু সরকারের সঙ্গে আঁতাত করার পর তারেক রহমান একক সিদ্ধান্তে এমপিদের শপথ নেওয়ালেন। এখানে কিন্তু ২০ দলের সিদ্ধান্তের আর দরকার হয়নি।

যাই হোক, জনগণের কাছে এটি এখন প্রমাণিত যে বিএনপি লোভের বশবর্তী কতটা কী করতে পারে। ভবিষ্যতে তারা আরও করবে। তবে অতীতে যেমন দুর্নীতির কারণে গণপ্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর জামায়াতের একাত্তর ইস্যুকে পরাজয়ের কারণ হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল, এবার আর সেই সুযোগ নাই, বরং মার্কিন-ভারতের তাবেদারি ও বাকশালের দালালির দায়ে গণপ্রত্যাখ্যানের দায়টা বিএনপিরই।

কার্টেসি: খোমেনি ইহসান

পঠিত : ৩৯৩৭ বার

মন্তব্য: ০