Alapon

গুনাহ নামক আগুন নির্বাপনের উপায় আপনার জানা আছে কি?

আগুন...আগুন লাগছে...আগুন। পাশে বসে থাকা বড় ভাই চেয়ার থেকে লাফ দিয়ে উঠলেন। তার চঞ্চল দৃষ্টি চারদিকে আগুন খুজতে লাগল। সে আমার দিকে আতঙ্ক ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকাল এবং প্রশ্ন করল, 'কোথায় আগুন? চুপ করে বসে আছিস ক্যান, চল পালাই!'

তার এরূপ আতঙ্কিত অবস্থা দেখে কিছুটা মায়াই হল। তারপর বললাম, এই আগুন থেকে যদি বাঁচতেই পারতাম তাহলে কতই না ভালো হত। আমার কথায় তিনি কিছুটা বিরক্ত হলেন মনে হয়। বললেন, 'আহ! হেয়ালি করিস না তো। কি সব বলছিস! আসল ঘটনা কী?'

তাকে বললাম, একটা হাদিস পড়ছিলাম। সেখানে বলা আছে, গুনাহ হল আগুনের মত। তা সব ভালো গুন পুড়িয়ে শেষ করে দেয়! জীবনে যে কত গুনাহ করেছি, তার হিসাব নেই। আজ সেই গুনাহগুলো আমার সমস্ত ভালো গুনগুলো জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে। এ আগুন দৃশ্যমান আগুনের চেয়েও ভয়ানক।

বড় ভাইয়ের চেহারায় আতঙ্কের মাত্রাটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। বললেন, ' এই আগুন নেভানোর কোনো উপায় আছে কিনা?'

তাকে বললাম আল্লাহর রাসূল এই আগুন নিভানোর একটা উপায় বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'দান বা সাদাকা গুনাহ মিটিয়ে ফেলে, যেমন পানি আগুনকে নিভিয়ে ফেলে।' (সহিহুল জামেঃ ৫১৩৬)

এই প্রসঙ্গে আরও বিস্তারিত বলতে গিয়ে রাসূল সাঃ বলেছেন, ' কারও মুখে হাসি ফুটানো সাদাকা। ভালো কাজ করা এবং অন্যকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখাও সাদাকা। রাস্তায় অন্য কোনো পথচারীর সমস্যা হতে পারে এ আশঙ্কায় সড়ক হতে হাড়, কাঁটা বা বিপদজনক কিছু দেখে তা অন্যত্র সরিয়ে ফেলাটাও সাদাকা। কোনো তৃষ্ণার্ত মানুষকে পান পান করানোটাও সাদাকা। এমনকি যদি কাউকে তার গন্তব্যে পৌঁছতে সঠিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়, তাহলে সেটাও সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে।’ (বুখারি- ৮৯১)

এই বিষয়ে গুরুত্ব বুঝাতে আরও একটি ঘটনা সম্পর্কে বলছি। এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ থেকে।

তিনি বর্ণনা করেছেন, ‘একজন ব্যক্তি একবার রাসূলুল্লাহ সা.-কে প্রশ্ন করল- ‘হে আল্লাহর নবি, একজন মহিলা আছেন যিনি তার ইবাদাতের মাধ্যমে বিশেষত নামাজ ও রোজা সুন্দরভাবে আদায় করে অনেক সুনাম অর্জন করেছে। কিন্তু তার একটাই দোষ। তিনি প্রতিবেশীদের সাথে খুব রুক্ষভাবে কথা বলতেন। দয়া করে বলুন যে, তার পরিণতি কী হবে।’

এই প্রশ্নের জবাবে রাসূল সা. বললেন, ‘এই মহিলা যতই ইবাদাত করুক না কেন, সে জাহান্নামে যাবে।’

প্রশ্নকারী ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করল- ‘কিন্তু হে আল্লাহর রাসূল, আরেকজন নারী আছেন, যিনি ততটা ইবাদাত করেন না। তবে তিনি নিয়মিতভাবে পনির বা মাখন দান করেন। তিনি প্রতিবেশীদেরও ক্ষতি করেন না।’

তখন আল্লাহর রাসূল বললেন, ‘নিশ্চয়ই তিনি জান্নাতে যাবেন।’ (মুসনাদে আহমদ- ৯৬৭৫)

বিগত কয়েকটি ঘটনার পর ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের মাঝে আগুন আতঙ্ক বিরাজ করছে। আমারও করে। সেই আগুন নিভানোর জন্য এখন কত প্রস্তুতি। প্রতি বিল্ডিংয়ে বিল্ডিংয়ে আগুন নির্বাপনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

কিন্তু গুনাহ নামক আগুন যে আমাদের আমলনামায় থাকা ভালো গুন গুলোকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিচ্ছে, সেদিকে কারোর-ই নজর নেই। এই আগুন নেভানোর জন্য আমাদের তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই।

আসুন পবিত্র এই রামাদান মাসে বেশি বেশি দান করে, গুনাহ নামক আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। আল্লাহপাক আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।

পঠিত : ৬৬৩ বার

মন্তব্য: ০