ইরান-মার্কিন যুদ্ধ নয়, ইসরাঈলী আনুগত্যই মূল কথা
তারিখঃ ১৯ মে, ২০১৯, ১০:২২
ইরানকে কেন্দ্র করে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তাপ-উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। এটি যে একবারে বিচ্ছিন্ন কোনো তৎপরতা নয়, তা স্পষ্ট হয় গোটা অঞ্চলের নানা ঘটনার কারণে। এমন সময় এই উত্তেজনা বাড়ছে, যখন সুদানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সৌদি-আমিরাত- মিসর-ইসরাইলের পছন্দের জেনারেলদের ক্ষমতায় আনা হয়েছে। লিবিয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকারের বিরুদ্ধে একই বলয়ের সমর্থনপুষ্ট খলিফা হাফতারকে পুরো রাষ্ট্রের কর্তৃত্বে নিয়ে আসার জন্য রাজধানী ত্রিপোলিতে সামরিক অভিযান চালানো হচ্ছে। আলজেরিয়ায় সেনাবাহিনীর নতুন কোনো জেনারেলকে ক্ষমতায় বসানোর আয়োজন চলছে সন্তর্পণে। আর বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘শতাব্দীর সেরা শান্তিচুক্তি’র নামে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বিন্যাস আনার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এ অবস্থায় প্রশ্ন হলো, ইরান বনাম যুক্তরাষ্ট্র অথবা ইরান বনাম সৌদি-আমিরাত-ইসরাইল কি যুদ্ধ বেধে যাবে? আর এই যুদ্ধ সত্যি সত্যিই শুরু হয়ে গেলে এর ব্যাপ্তি কতটা হবে?
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছেন, ইরানের সাথে যুদ্ধ চায় না আমেরিকা। ইরান ও ‘যুক্তরাষ্ট্র এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ক্রমাগত বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাশিয়া সফর করার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন, আমেরিকা চায় ইরান যেন একটি ‘স্বাভাবিক দেশের’ মতো আচরণ করে। তবে আমেরিকার স্বার্থ আক্রান্ত হলে তারা ‘সমুচিত’ জবাব দেবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ হবে না ইরানের। তার এ বক্তব্য দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সাথে যে পরমাণু চুক্তি বাতিল করেছেন, সেটির বদলে ভিন্ন কোনো চুক্তির বিষয়ে আমেরিকার সাথে আপস করবে না ইরান। তিনি বলেন, ‘আমরা যুদ্ধ চাই না, তারাও যুদ্ধ চান না।’
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান কেউই যুদ্ধ চায় না বলে উল্লেখ করলেও উভয়েই নিজস্ব স্বার্থের ব্যাপারে আপস না করার কথাই বলেছেন। আর উত্তাপ যেভাবে বাড়ছে, তাতে কোনো পক্ষ নতি স্বীকার না করলে কী হবে বলা মুশকিল। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের সর্বশেষ উত্তেজনায় মনে হচ্ছে, যেকোনো সময় কিছু একটা অঘটন ঘটে যেতে পারে। এমনকি ইরান বা যুক্তরাষ্ট্র না চাইলেও ঘটতে পারে সেটি। ইরান-মার্কিন উত্তেজনা বাড়তে শুরু করে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র উপসাগরীয় অঞ্চলে যুদ্ধজাহাজ এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করার পর। এর আগে ও পরে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবিশ্বাস্য ধরনের কিছু ঘটনা ঘটেছে। তুরস্কসহ আটটি দেশের জন্য ইরানের তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় তুলে নেয়ার কথা বলা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে বিমানবাহী রণতরী, ক্ষেপণাস্ত্র বাহক, অ্যাটাকিং জাহাজ, এফ -৩৫ বিমানবহরসহ বিমানবাহী রণতরী এবং এক হাজার লোকের জন্য একটি হাসপাতাল জাহাজ স্থাপনের আয়োজন করেছে। এসব আয়োজনে ইরানে একটি সম্ভাব্য আক্রমণ করার জল্পনা চালু হয়েছে।
গত তিন দিনের মধ্যে পারস্য উপসাগরের একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকায়- সৌদি আরব এবং আরব আমিরাতের মোট চারটি জাহাজে এবং সৌদি আরবের দু’টি তেল স্থাপনায় রহস্যজনক ‘অন্তর্ঘাতী আক্রমণের’ ঘটনা ওই অঞ্চলে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। সৌদি আরবের দাবি, ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা এই হামলার জন্য দায়ী। মার্কিন নৌবাহিনী শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছিল, ইরান পারস্য উপসাগরে তেল ট্যাঙ্কারগুলো আক্রমণ করতে পারে। দুই দিন পরই রোববার সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জানিয়েছে, চারটি মালবাহী জাহাজে ‘অন্তর্ঘাতী আক্রমণ’ হয়েছে।
এসব ঘটনা যখন ঘটছে তখন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব তার দু’টি বিদেশ সফরকে দুই দফা সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে বলেন, ‘আমাকে ওয়াশিংটনে থাকতে হবে।’ সৌদি ও আমিরাতের জাহাজে যে অন্তর্ঘাতী হামলা নিয়ে গোয়েন্দা প্রচারণা চালানো হচ্ছে, তাতে ইরানের ওপর আক্রমণের আগে ইরাকের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলেই মনে হয়। ইরাকে আগ্রাসনের আগে সাদ্দাম হোসেনের কাছে রাসায়নিক অস্ত্র ছিল এবং এমনকি দেশটিতে মোবাইল রাসায়নিক অস্ত্রও উৎপাদিত হচ্ছে বলে দাবি করা হয়েছিল। এটি বলে জর্জ বুশ, টনি ব্লেয়ার আর কলিন পাওয়েল পুরো বিশ্বকে প্রতারিত করেছিলেন এবং জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে এক মিথ্যা রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছিল। আর এই বড় মিথ্যাটি ইরাক অভিযান শেষ হওয়ার পরে স্বীকার করা হয়। বলা হলো, ইরাকে গণবিধ্বংসী অস্ত্র থাকার তথ্যটি আসলে সঠিক ছিল না। অথচ এর মধ্যে সামরিক আগ্রাসনের কবলে পড়ে ইরাকের মতো একটি দেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। তথাকথিত ‘গোয়েন্দা তথ্যের’ ওপর ভিত্তি করে, ইরাক আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যে ধরনের প্রস্তুতি শুরু করেছে, সেই একই প্রস্তুতি যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইসরাইল, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও এখন চলছে।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানি তেল আমদানিকারক দেশগুলোকে বলেছিল, ‘এখন আপনারা সৌদি আরব থেকে তেল কিনবেন।’ ইরানের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্য বাগদাদ প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে যুক্তরাষ্ট্র। এখন ‘মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন’ হলো, সুদান থেকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চল এবং লিবিয়া থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত সামরিক হস্তক্ষেপও অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তারা কিসের প্রস্তুতি নিচ্ছে?
দৃশ্যত মনে হচ্ছে, একটি নতুন পারস্য-আরব সঙ্ঘাতের মুখোমুখি বিশ্ব। পারস্য জাতীয়তাবাদ এবং আরব জাতীয়তাবাদের সঙ্ঘাত সমগ্র অঞ্চলটিকে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের দিকে টেনে নিয়ে যাবে- এমন একটি নতুন সঙ্কটের সম্ভবত সূচনা হচ্ছে। অবশ্যই, এই সঙ্ঘাতে ধর্ম ও সম্প্রদায়গত বিষয় নিয়ে প্রচার করা যায়। সৌদি আরবের ‘সুন্নিবাদ’ এবং ইরানি ‘শিয়াবাদ’-এর দ্বন্দ্ব হিসেবে এটিকে তুলে ধরা হচ্ছে। অথচ মুসলিম বিশ্ব চায় না, এ দুই পরিচয়ে আধিপত্যবাদী বা ঔপনিবেশিক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হোক। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল এবং তাদের পশ্চিমা অংশীদাররা মুসলিম বিশ্বে এ ধরনের একটি নতুন ও চূড়ান্ত সঙ্ঘাতের সূচনা দেখতে পেয়ে খুশি।
ইরাক ও সিরিয়া যুদ্ধের পর, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরাইল-ব্রিটেন অক্ষ এখন ইরান ও সৌদি আরবের সামনে আরো ব্যাপক সঙ্কটের অবকাঠামো তৈরি করছে। এ ধরনের উত্তেজনা দীর্ঘ দিন ধরে তৈরি করা হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরবের মধ্য দিয়ে পরিচালিত হস্তক্ষেপগুলো এ অঞ্চলের পুনর্নির্মাণের প্রচেষ্টার বেপরোয়া উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হয়। ফিলিস্তিনের জেরুসালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণা, গোলান হাইটসকে ইসরাইলভুক্ত করার স্বীকৃতি এবং সর্বশেষ, ট্রাম্পের কথিত ‘শতকের সেরা চুক্তি’, আমেরিকান নাগরিক জেনারেল হাফতারের মাধ্যমে লিবিয়ায় ক্ষমতাসীন সরকারের ওপর হামলা এবং সুদানের সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান এ অঞ্চলকে নতুন অবয়ব দেয়ার মহা নকশাটির প্রথম ধাপ।
এই আঞ্চলিক হস্তক্ষেপের প্রতিটিতে সাধারণ একটি লক্ষ্যবিন্দু লক্ষ করা যায়। তা হলো, এ অঞ্চলের শক্তিধর দেশ তুরস্ক। এই অঞ্চলে যেখানে তুরস্কের স্পর্শ রয়েছে তার সর্বত্র তারা হস্তক্ষেপ করেছে। ইরানের সাথে যুদ্ধের প্রস্তুতির সময়ও তুরস্কের মুভমেন্টকে সীমাবদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন ঘটনার পরিকল্পিত উন্নয়ন করা হচ্ছে। তুরস্ক উত্তর আফ্রিকা ও সুদান, সিরিয়া এবং পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের বর্তমান কার্যক্রমের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। এ পর্যায়ে তুরস্ককে লক্ষ্যবস্তু করার কারণ হলো, এ অঞ্চলে পুনর্বিন্যাস দেয়ার যে প্রচেষ্টা, তাতে যেন কোনো বাধা হয়ে দেশটি দাঁড়াতে না পারে। ইউএই-সৌদি ফান্ডগুলো তুরস্কে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে ‘অভ্যন্তরীণ অপারেশন’ তুর্কি রাষ্ট্রপতি রজব তাইয়েব এরদোগানের পতন ঘটাতে নতুন অভ্যুত্থান নিয়ে প্রস্তুত ছিল। এ জন্য ২০১৬ সালের ১৫ জুলাইয়ের চেয়ে তারা আরো একটি বড় জোট প্রতিষ্ঠা করেছিল। বহুজাতিক হস্তক্ষেপ আর অভ্যন্তরীণ পদক্ষেপে সাম্প্রতিক ইস্তাম্বুল মেয়র নির্বাচনে ব্যাপক কারসাজির মাধ্যমে নির্বাচনী ফল চুরি করার বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইস্তাম্বুলের নতুন নির্বাচন ঘোষণায় এই প্রচেষ্টা কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। তুরস্কের অঘোষিত এই জোটে বিরোধী সিএইচপি, গুড পার্টি, পিকেকে এবং গুলেনিস্টদের নিয়ে এসে এক বৃহত্তর সমঝোতা তৈরি করা হয়েছে।
কিছু উপসাগরীয় দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের পেছনে নিজেদের লুকিয়ে রাখতে চায় এবং দাবি করে যে, ওয়াশিংটন ও তেলআবিব এ অঞ্চলে ইরানের হুমকি মোকাবেলা করতে পারে। তারা এ বিষয়টিও উল্লেখ করে যে, ১৯৯০ সালে আমেরিকা তাদের ইরাকি সামরিক আগ্রাসন থেকে উদ্ধার করেছিল। তবে এ বিষয়টি সত্য বলে অনেকে মনে করছেন যে, আমেরিকা এই সময় ইরানের সাথে যুদ্ধ করবে না এবং তেহরান সরকার আসলে এ অঞ্চলের জন্য হুমকিও নয়। পুরো ‘ইরানি হুমকিতত্ত্ব’ আসলেই ভিত্তিহীন।
তবুও আমরা ক’বছর ধরে উপসাগরীয় অঞ্চলে এ ধরনের উত্তেজনা দেখিনি যা এখন দেখছি। এই সপ্তাহে রহস্যজনক ফুজাইরা ঘটনা এবং দুই সৌদি তেল ট্যাঙ্কারের ওপর হামলার ঘটনার পর সামনে পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে। মার্কিন নৌবাহিনী এ অঞ্চলে মোতায়েন করা মানে এই নয় যে, যুদ্ধ আসন্ন কিংবা তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ সৃষ্টি হবে। যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে অন্যান্য বাহিনীকে ইরানকে ঘিরে কোনো যুদ্ধের সুযোগ না-ও দিতে পারে। কারণ, ওয়াশিংটন ইরানের সাথে যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষেই হয়তো করতে চায় না।
এর অনেক কারণ আছে। আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে তার বাহিনীকে আগে থেকেই বেশ কিছুটা গুটিয়ে ফেলেছে। সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, তারা আরো সৈন্য পাঠানোর পরিকল্পনাগুলো পর্যালোচনা করছে বলে উল্লেখ করা হলেও বাস্তবে তাদের উপস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে না। ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় আমেরিকার ছিল ৬.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ঋণ এবং পরের ১০ বছরে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঋণের বোঝা চাপে তাদের ওপর, যার পরিমাণ ১৭ ট্রিলিয়ন ডলার। ইরাকে কয়েক বছরের আমেরিকান প্রকল্প ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি এটি তাদের ওপর তৈরি করে বাড়তি চাপ। এ ছাড়া উপসাগরীয় অঞ্চলের সামরিক সঙ্ঘাতের অর্থ হলো, তেলের দাম ব্যারেল ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যাওয়া। এটি ওয়াশিংটনের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না; রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প গত বছরের শেষের দিকে তেলের দামের অবনয়ন নিশ্চিত করতে সক্ষম হন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তেলের বৃহত্তম ভোক্তা এবং পৃথিবীর বৃহত্তম তেল আমদানিকারক। এর অর্থ হলো, ইরানের সাথে যুদ্ধে দু’টি প্রধান বিল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুক্ত হবে, এর একটি হলো সামরিক ব্যয় আর দ্বিতীয়টি, তেলের মূল্যবৃদ্ধিজনিত অর্থনৈতিক ব্যয়।
তেহরানের সাথে সরাসরি ও উন্মুক্ত সামরিক সংঘর্ষ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশকেও প্রভাবিত করবে। তখন অন্য ধরনের এক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এটা গ্রহণ করতে পারে না। তাহলে প্রশ্ন হলো, ইরানের সাথে এই উত্তেজনা বৃদ্ধি থেকে যুক্তরাষ্ট্র কী অর্জন করতে চায়? উত্তরটি হলো, ট্রাম্প প্রশাসন এ ব্যাপারে রাজনীতির পরিবর্তে ব্যবসার স্বার্থকে উপরে স্থান দিয়ে থাকতে পারে। সম্ভবত আরব উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সামনে ইরানি হুমকি বৃদ্ধির বিষয়টি এনে দু’টি লাভ তারা একসাথে পেতে চায়। আমেরিকার সামরিক উপস্থিতির খরচ উপসাগরীয় দেশগুলোর কাছ থেকে আদায় করবে। এতে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার লাভ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে চলে যাবে ওয়াশিংটনে। আর তেলের দাম হ্রাস পাওয়া থেকেও লাভবান হবে তারা।
যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে না এ কারণেও যে, এ ধরনের যুদ্ধ বিশ্ব তেলবাজারে হুমকি সৃষ্টি করবে। এটি আঞ্চলিক মানচিত্রও পাল্টে দিতে পারে। তা ছাড়া, আমেরিকার জন্য বড় কোনো অর্জন এর মাধ্যমে সম্ভব নয়। তবে চাপ প্রয়োগ করে অনেক কিছু অর্জন করতে চাইতে পারে ওয়াশিংটন। মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে মিসর ইসরাইলের আনুগত্য কবুল করে নিয়েছে। সৌদি আরব ও আমিরাত একই পথে যাত্রা শুরু করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত হয়ে সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া ও ইরাক নিজেদের সক্ষমতা হারিয়েছে। বাকি থাকে ইরান আর তুরস্ক। এ দু’টি দেশকে বিধ্বস্ত বা অনুগত করা সম্ভব হলে মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলি আধিপত্য নিরঙ্কুশ হবে। এই অর্জনই সম্ভবত এখন মুখ্য। এটি হলে বৃহত্তর ইসরাইল প্রতিষ্ঠার যে আদি স্বপ্ন, সেটি বাস্তবায়নে বড় কোনো বাধা আর থাকবে না। এই অর্জনকে ইসরাইলের পাশাপাশি আমেরিকান ট্রাম্পপন্থী নিউকনরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্জন বলেও মনে করে।
এই মহাপরিকল্পনা যে, শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়েই যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখানে অপর খেলোয়াড়রাও সক্রিয়। নতুন এক স্নায়ুযুদ্ধ এখন চলছে। বাণিজ্যযুদ্ধ ও অর্থনৈতিক অবরোধকে ঘিরে স্বার্থের বড় রকমের সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে রাশিয়া আর চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের। ফলে সব কিছু ইসরো-মার্কিন পরিকল্পনার একই লাইনে অগ্রসর না-ও হতে পারে। আগামী দিনগুলোতে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে।
মন্তব্য: ০