Alapon

আমরা সত্যিই দুর্ভাগা জাতি

দুঃখজনক! এখনকার ঈমানদারেরা নিজেদের বাঙালি, বাংলাদেশী, রোহিঙ্গা, কাশ্মীরি, ইরাকি, ইরানি, ফিলিস্তিনি, তুর্কি এসব পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। নিজেদের তারা মুসলিম বা এক জাতি পরিচয় দেওয়াটাকে সুখকর মনে করে না।

এজন্য রোহিঙ্গা হয়ে যায় 'তারা', মানে আলাদা কিছু। রোহিঙ্গাদের নিজেদের ভাই মানতে নারাজ। অথচ ইসলামের শিক্ষা কখনোই এমন ছিলো না। মদীনার আনসাররা কীভাবে মুহাজিরদের সাহায্য করেছেন আমরা তা জানি। কিন্তু আমল করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। আমরা তাদের সমস্যা মনে করি। তাদের আপন করে না নিয়ে শরনার্থী ক্যাম্প করে আটকে রাখি। আমরা তাদের নিয়ে ট্রল করি, বের করে দেয়ার কথা বলি, তাদের শিশু জন্মহার নিয়ে কটাক্ষ করি।

অথচ কথা ছিলো আমরা তাদের ভাই বানিয়ে নিবো। তাদের সাথে আত্মীয়তা করবো। আমরা আর তারা বলে কিছু থাকবে না। সব একাকার হয়ে যাবো। মিয়ানমারের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়বো। পর্যায়ক্রমে আরাকান আমাদের করে নিবো। মক্কা আর মদীনার মুসলিমদের মতো আমরা একজাতি হয়ে যাবো। আমরা কি পারবো আমাদের ভাইকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিতে? রোহিঙ্গাদের আমরা ভাই মানতে পারিনি বিধায় আমরা তাদেরকে মিয়ানমারের সন্ত্রাসীদের হাতে জোর করে তুলে দেয়ার কথা বলছি। 

আমাদের মধ্যেকার একজন আলেম বলেন, কাশ্মীরিদের জন্য যুদ্ধ করা যাবে না। মিছিল মিটিং করা হারাম। এজন্য শাসকের অনুমতি লাগবে। ওনার কথাগুলো সরাসরি আল্লাহ তায়ালার বিরুদ্ধে চলে যায়। আল্লাহ তায়ালা সূরা নিসায় বলেন, আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী! আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও।

আফসোস! সেই আলেম কাশ্মিরিদের কাশ্মিরি মনে করেন, মুসলিম ভাই মনে করতে পারেননি। যেমনিভাবে আমরা বিহারী ও রোহিঙ্গাদের ভাই মনে করি না।

আমরা কখনোই জাতিগতভাবে আনসার বা সাহায্যকারী হতে পারিনি। আমাদের উপর চেপে বসেছে নিকৃষ্ট জাতীয়তাবাদ। আমরা আমাদের ভাষা ও কাঁটাতারের সীমারেখাকে আমাদের মুখ্য পরিচয় বানিয়ে নিয়েছি। অথচ আল্লাহ তায়ালা বহু নামের বহু দলে বিভক্ত মুসলিমদের এক নামেই অর্থাৎ মুসলিম নামেই সম্বোধন করেছেন এবং পরিচয় দিতে বলেছেন। মহান রব আমাদের পরিচয় সম্পর্কে বলেছেন, 

বল, ‘হে কিতাবীগণ, তোমরা এমন কথার দিকে আস, যেটি আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান যে, আমরা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারো ইবাদাত না করি। আর তার সাথে কোন কিছুকে শরীক না করি এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ছাড়া রব হিসাবে গ্রহণ না করি’। তারপর যদি তারা বিমুখ হয় তবে বল, ‘তোমরা সাক্ষী থাক যে, নিশ্চয় আমরা মুসলিম।
[আলে ইমরান, আয়াত ৬৪]

আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, আর তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ কর যেভাবে জিহাদ করা উচিত। তিনি তোমাদেরকে মনোনীত করেছেন। দীনের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোনো কঠোরতা আরোপ করেননি। এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দ্বীন। তিনিই তোমাদের নাম রেখেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বে এবং এ কিতাবেও। যাতে রাসূল তোমাদের জন্য সাক্ষী হয় আর তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হও। অতএব তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে মজবুতভাবে ধর। তিনিই তোমাদের অভিভাবক। আর তিনি কতইনা উত্তম অভিভাবক এবং কতই না উত্তম সাহায্যকারী!
[আল-হাজ্জ, আয়াত ৭৮]

আর যখন তাদের নিকট তা তিলাওয়াত করা হয় তখন তারা বলে, ‘আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি, নিশ্চয় তা সত্য আমাদের রবের পক্ষ
থেকে। নিশ্চয় আমরা এর পূর্বেও মুসলিম ছিলাম’।
[আল-কাসাস, আয়াত ৫৩]

আর তোমরা উত্তম পন্থা ছাড়া আহলে কিতাবদের সাথে বিতর্ক করো না। তবে তাদের মধ্যে ওরা ছাড়া, যারা জুলুম করেছে। আর তোমরা বল, ‘আমরা ঈমান এনেছি আমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং তোমাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি এবং আমাদের ইলাহ ও তোমাদের ইলাহ তো একই। আর আমরা তাঁরই সমীপে আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম)।
[আল-‘আনকাবূত, আয়াত ৪৬]

আর তার চেয়ে কার কথা উত্তম, যে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, সৎকর্ম করে এবং বলে, অবশ্যই আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত?
[হা-মীম-সাজদাহ আয়াত ৩৩] 

আমাদের এই চরিত্র কি নতুন? 
না, নতুন নয়। আমরা আরো খারাপ কাজ করেছি। ১৯৪৭ সালে ভারত থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে ও পূর্ব পাকিস্তানে বহু মুহাজির নিঃস্ব অবস্থায় এসেছিলো। পশ্চিম পাকিস্তান তাদের ভাই হিসেবে আশ্রয় দিয়েছে। আলাদা করে রাখেনি। আর আমরা পূর্ব পাকিস্তানের লোকজন ভারতের বিহার থেকে আসা বিহারীদের আমাদের ভাই বানিয়ে নিতে পারিনি। শুধু তাই নয় আমরা একাত্তরে তাদের উপর গণহত্যা চালিয়েছি আমাদের দাবীকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে।

আমরা সত্যিই দুর্ভাগা জাতি। আল্লাহ আমাদের বুঝ দান করুন। ক্ষমা করুন।

পঠিত : ৫৯০ বার

মন্তব্য: ০