Alapon

দিন দিন ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ছে কেন...?


এ পর্যন্ত আমার যত বান্ধবীর বিয়ে হয়েছে তাদের মোটামুটি সবারই বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। বা কারোটা হওয়ার পথে।

আমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেছিলামঃ ক্যান ডীভোর্স দিলে?
প্রথম কথা আসছে- বন্দী বন্দী লাগে।
দ্বিতীয় কথা- ও আর সেই আগের মত নেই।

আমি আমার কালচার বাংলাদেশ কনট্যাক্সটে সব কিছু তুলে ধরব।

আমরা বিয়ে নিয়ে এত বেশী ফ্যন্টাসিতে ভুগি তা বলার মত না। হোক এটা খুব কালচারাল ফ্যামিলি, হোক রিলিজিয়াস ফ্যামিলি।

যারা একটু সংস্কৃতিমনা তারা কল্পনা করেন বিয়ে করলে এখানে ঘুরতে যাব, ওখানে যাব, এটা কিনবো, ওটা কিনব, দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকব, হাত ধরব, এভাবে ছবি তুলবো ওভাবে তুলবো।

আর যারা রিলিজিয়াস তারা কল্পনা করেন, জামাইকে নিয়ে মক্কা মদিনা যাবে, জামাই আমাকে অনেক টেক কেয়ার করবে, বউকে দেখে চক্ষু শীতল হবে, অনেক ধার্মিক হবে, আইডিয়াল বউ/জামাই হবে।

আসলে বাস্তব খুব ভিন্ন। বাস্তবে এইগুলো অনেক সময়ই এরকম আইডলিষ্টিক হয়ে উঠে না। হতে পারে আর্থিক সমস্যা, সামাজিক নানান সমস্যা কিংবা জীবনকে যেভাবে কল্পনা করি বাস্তবতা সেভাবে গড়ায় না।

বিয়ে ভাঙ্গার ক্ষেত্রে তৃতীয় কোন ব্যাক্তি লাগে। যেমন জামাই বউয়ের মাঝে মনোমালিন্য হয়েছে খুব কোন ছোট বিষয়েই, ওদিকে মেয়ের মা ফোন করে বলবে একবারে চলে আয়, আমাদের কি টাকা পয়সা কম আছে? না তোর যৌবন ফুঁড়িয়ে গেছে? চলে আয় তাড়াতাড়ি, লাগবেনা এই ছেলে। ডিভোর্স দিয়ে দে।

অথবা স্বামীর বন্ধু বা বৌয়ের বান্ধবীরাও এইসব ক্ষেত্রে ইনভল্ব হতে পারে। তারা নিজ নিজ বন্ধুকে কুপরামর্শ দিয়ে সবসময় সদা প্রস্তুত। অথচ গুড মেন্টরিং বা কনস্ট্রাকটিভ কাউন্সেলিং কিন্তু জীবন থেকে অনেক সমস্যা দূর করে দিতে পারে।

স্বামীর বন্ধু এসে বলছে ভাবি আপনি এত ভাল, আপনার জামাই আপনার সাথে এরকম করে? এরকম একটা কিউট মেয়ের সাথে এরকম করতে পারলো? অথচ কেঁচো খুঁড়তে বেরিয়ে পরবে সাপ। দেখা যাবে এই লোকও ঘড়ে বউয়ের সঙ্গে খারাপ আচরণই করছে। আগলা পিরিত দেখাতে আসছে।

আবার বউয়ের বান্ধবীরা এসে বলবে- আপনার মত এইরকম ভাল জামাই পেলে আমরা খুশিতে নাচতাম। ও তো আসলে মানুষই চিনল না।

আমাদের নেইচারটাই এমন যে আমরা অন্যের সব কিছু পছন্দ করি, আবার তার চেয়েও মূল্যবান জিনিস নিজের থাকলে সেটার পাত্তাই দিতে চাই না।

পরিচত একজন আছেন- তার স্বামী বন্ধুর বউকে হুট করে বিয়ে করে ফেলে। সেই জামাই আবার ঐ লোকের বউকে পরে বিয়ে করে।

তখন আমার মনে হলো এই ভাঙ্গনের পেছনে অপশন থাকাটাও একটা কারণ। জীবনে এত অপশন থাকলে মানুষ তার নিজের জিনিস নিয়ে কনফিউজড হয়।

এবং এই অপশন বেছে নেয়ার যে অবারিত স্বাধীনতা সেটা তাকে দিশেহারা করে দেয়। স্বেচ্ছাচারিতাই তখন নিত্যদিন হয়ে দাঁড়ায়।

এবার আসি অন্য কথায়।

এখন একটা কথা বলব যা আপনার বিশ্বাস না ও লাগতে পারে, কিংবা খারাপ ও লাগতে পারে। তবে আমি খুব বিশ্বস্ত সূত্রে জেনেছি-

ছেলে যখন বিয়ে করে- অনেক ছেলের মা- বউ দরজা বন্ধ করে তার ছেলেকে নিয়ে এক ঘরে থাকবে এটা সহ্যই করতে পারে না। যদিও দুজনের সম্পর্ক সম্পুর্ন আলাদা, কিন্তু তবুও একটা অন্য পরিবার থেকে আসা মেয়ে তার ছেলেটাকে দখল করে ফেলছে এটা মানা কষ্টকর।

আবার এমনও হচ্ছে যে মেয়েটি কয়দিনের মাথায় বলে দিচ্ছে তোমার ভাইবোনকে টাকা দিতে পারবা না, মাকে দিতে পারবা না, এই সেই। মানে টাকা পয়সার হিসেব নেয়া শুরু করে দেয়।

এইসব নিয়ে পরবর্তিতে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় যেগুলো গড়াতে গড়াতে ডিভোর্সের দিকে এগোয়।

একটি মেয়ে যখন বিয়ে করে নতুন বাড়ীতে আসে- তাকে কিন্তু বর্তমান অবস্থান দেখেই নিয়ে আসে। সেখানে আগে কি করত না করত এইসব দেখেই আনা হয়। কিন্তু দেখাযায় বিয়ের পরে বলে তোমার চাকরি ছাড়তে হবে, এই করতে হবে সেই করতে হবে। অথচ এগুলো বিয়ের আগের শর্ত ছিল না। এবং তার টাকার হিসেব নেয়া শুরু করে।

মেয়ে মেয়ের বাবা মা কে অর্থনৈতিক ভাবে সহযোগিতা করলে তখন ছেলের আবার অনেক সমস্যা শুরু হয়ে যায়। এগুলোতে আপত্তি তোলে। তখন মেয়েটা ধ্বাক্কা খায়।

আবার কখনো চাকরি ছেঁড়ে ঘরের এমন সব কাজ করতে চাপ দেয়া হয় যেগুলো একটি উপার্যনক্ষম পরিবারে ১/২ হাজার টাকা দিয়ে একজন কাজের মানুষ দিয়েই করানো সম্ভব। নারী যদি তার মেধাকে শাণিত করে সমাজের গুরুত্বপূর্ন অংশে কন্ট্রিবিউট করার জন্য আর তাকে যদি তা করতে না দিয়ে খুবই বেসিক কিছুতে সীমাবদ্ধ করা হয় তাহলে এটা মেধার অপচয়।

একজন ইঞ্জিয়ারকে ঝাড়ুদার হিসেবে বাধ্য করার মতই।

হ্যাঁ অবশ্যই নারী তার ঘরকে ভালবেসে মাকড়সার জ্বাল পরিষ্কার করবে, বাথরুম ধুবে, সন্তানদের ময়লা কাপড় কেঁচে দেবে এটা তো জীবনের স্বাভাবিক নিয়ম। কিন্তু এটাকেই যদি একমাত্র কাজ বানিয়ে তাকে আর কোন বড় কাজে অংশগ্রহণ করতে বাঁধা দেয়া হয় তখনই কিন্তু নানান রকম কনফ্লিক্ট তৈরি হয়।

নারীরা শিক্ষিত হচ্ছে, এবং এর সাথে সাথে দুইটা জিনিস আমাদেরকে মাথায় রাখতে হচ্ছে। এক হচ্ছে শিক্ষিত নারীর নিজের এডাপটেশন, আর একজন শিক্ষিত নারীকে হ্যান্ডেল করার জন্য পুরুষের যোগ্যতা।

অনেক শিক্ষিত নারীই শিক্ষা ও অর্থনৈতিকসামর্থের গরম দেখাতে গিয়ে সংসারই করতে পারছে না, সুখ হারিয়ে যাচ্ছে তার নিজের আত্মঅহমিকায়। এর মানে হচ্ছে সে শিক্ষার সাথে নিজের মানবিকতা ও মানবতাকে এডাপ্ট করতে শিখেনি।

আবার অনেক পুরুষ জানে না একজন শিক্ষিত নারীকে কতটুকু ফ্রিডম কিভাবে দিতে হবে। তার সঙ্গে কিরকম আচরণ করতে হবে, হয়ত দেখাগেছে আগের জেনারেশন যেভাবে একতা আলাদা প্রভুত্ব দেখাতো সেটাই দেখাচ্ছে, এতে করে কনফ্লিক্ট দানা বাঁধছে।

আরেকটা জিনিস- আমাদের এই ভারত উপমহাদেশীয় কনটেক্সটে আমরা সন্তানদেরকে একদম প্রতিবন্ধী হিসেবে গড়ে তুলি। পানি টাও পারলে গিলে দেই। কাপড় ধুয়ে, বিছনা গুছিয়ে এমনকি স্কুল কলেজ পর্যন্ত পারলে বিয়ের আগ পর্যন্ত সমস্ত সাপোর্ট দিয়ে এমন প্রতিবন্ধী বানাই যে তারা নিজের জীবনে সব কিছুতেই ডিপেন্ডেন্ট হয়ে পরে।

যার কারণে আমরা পরবর্তিতে যে কোন সমস্যার সমাধানে তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগাতে পারি না, নিজেরা সেইসব সমস্যা দূর করনে কোন ধরণের ভূমিকাও রাখতে পারি না, পারব কিভাবে? তাদের সময়টা আমাদের সময়টা তো ভিন্ন।

তখন ঐ উন্ডোজ সেটাপ দেয়ার মত একটাই সমাধান দেই ডিভোর্স। অথচ আমি বিশ্বাস করি জীবনের প্রতিটি ক্রিটিকাল সমস্যারই শান্তিপূর্ন সমাধান আছে।

সবশেষে বলবো- সংসারে অশান্তি হোক এটা চরম বদ লোকটাও চায় না। অথচ শান্তি কিসে আসবে সেই জিনিসটাই আমরা খুঁজতে চাই না।

চিন্তার গভীরে গেলেই পাবেন...

আল্লাহ্‌ আমাদেরকে শান্তি ও সুখের জীবন দান করুন। সকলের মঙ্গল করুন।

সংগৃহিত...

পঠিত : ৮৫৮ বার

মন্তব্য: ০