Alapon

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষ দিন এবং কিছু কথা...


প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জীবনের শেষ দিনটি ছিল অন্যান্য সাধারণ দিনগুলোর মতোই। দিনটি ছিলো শুক্রবার। তিনি এসেছিলেন চট্টগ্রামে। সেখানে সকালে নাস্তার পর বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে আলাপ-আলোচনা সেরে তিনি জুম্মার নামাজ পড়ে নেন। দুপুরে দলের লোকজনের সাথে খাওয়াদাওয়া সেরে তিনি ঘণ্টাখানেক বিশ্রাম নেন। বিকেলে চা পান সেরে স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। রাত ১১টার পর খাওয়া সেরে স্ত্রী খালেদা জিয়ার সাথে ফোনালাপ করেন ১৫ মিনিটের মতো। এরপরই তিনি শুতে চলে যান, যাবার আগে সকাল পৌনে সাতটায় তাকে সকালের চা দেয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যই বলতে হবে, কারণ, জিয়াউর রহমানের জীবনে সেই পৌনে সাতটা আর কখনোই আসেনি।

সেদিন রাতে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছিলো। সাড়ে তিনটার কিছুক্ষণ পর সেনাসদস্যদের তিনটি দল এই প্রতিকূল আবহাওয়ার মাঝেই গাড়িতে করে কালুরঘাট থেকে গাড়িতে করে এগোতে থাকে। তাদের সাথে ছিল ১১টি এসএমজি, ৩টি রকেট লঞ্চার ও ৩টি গ্রেনেড ফায়ারিং রাইফেল। ১৬ জন অফিসারকে তিনটি দলে বিভক্ত করা হয়েছিল, যার মাঝে দুটি দলের দায়িত্ব ছিলো সার্কিট হাউজে ঢুকে আক্রমণ পরিচালনার, অপর দলটি ছিলো সার্কিট হাউজের পেছনের আলমাস সিনেমা হলের কাছে। সার্কিট হাউজ থেকে কেউ যদি পালিয়েও যায়, তবে তাকে খতম করে দেয়াই ছিল তৃতীয় দলটির কাজ।

দুটি দল বিনা বাঁধায়ই সার্কিট হাউজে ঢুকে পড়ে। লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলে হোসেনের হাতে থাকা রকেট লঞ্চার থেকে দুটি গোলা ছুটে যায় জিয়াউর রহমানের শোবার ঘরের দিকে। গোলা দুটো প্রেসিডেন্টের ঘরের নিচে বেশ বড় রকমের দুটো গর্ত তৈরি করে। এটা ছিলো সহযোগীদের জন্য সংকেত। সাথে সাথেই গ্রেনেড, রকেট আর মেশিন গানগুলো গর্জে ওঠে। সাদা পায়জামা পরে এলোমেলো চুলে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে জিয়াউর রহমান জানতে চাইলেন, “তোমরা কী চাও?” এর কোনো সদুত্তর তিনি পাননি। কারণ, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতি তার এসএমজি চালিয়ে ঝাঁঝরা করে দেন জিয়ার শরীরের ডানদিক। দরজার কাছেই তিনি মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়েন। লে. কর্নেল মতির ক্ষোভ তখনও প্রশমিত হয়নি। তিনি জিয়ার মুখমণ্ডল ও বুক বরাবর গুলি চালিয়ে যান, যতক্ষণ না এসএমজির ম্যাগজিন খালি হয়।

পুরো হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটতে ২০ মিনিট সময় লেগেছিল। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়ার শরীর। একটি চোখ খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিলো না, অস্তিত্ব ছিলো না ঘাড়ের দিককার মাংসের, বুক-পেট-পা ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল গুলির আঘাতে। তার মৃতদেহটি অনেকক্ষণ ধরে এভাবেই পড়ে ছিল। কেউই সাহস করছিল না এগিয়ে আসার জন্য। অবশেষে বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী তার নিজের বিছানার সাদা চাদর দিয়ে ঢেকে দেন মৃতদেহটি।

তথ্যসূত্র: বাংলাদেশ – অ্যা লিগ্যাসি অফ ব্লাড (অ্যান্থনি মাসকারেনহাস)

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

১) অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের বইটি পড়তে গিয়ে আজ জানলাম যে, বেগম খালেদা জিয়ার ডাকনাম ‘পুতুল’।

২) এই পোস্টের লেখক একজন ইতিহাসপ্রিয় ব্যক্তি। তিনি কেবলই বই পড়ছেন এবং নিজে যা জানছেন তা সকলকে জানাচ্ছেন, কারণ, মানুষজন আজকাল বই পড়তে চায় না। তাই, দয়া করে এর সাথে পোস্টের লেখকের কোনো রকম রাজনৈতিক যোগসূত্র খুঁজতে যাবেন না। বরঞ্চ, লেখক উপকৃত হবেন যদি আপনি তাকে বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত কোনো বই পড়ার পরামর্শ দিতে পারেন, যা তাকে আরও জানতে সাহায্য করবে। আর যদি আপনি বই গিফট করতে চান তাহলে তো কথাই নেই!

৩) আমি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে এখনও কোনো পোস্ট দেইনি কেন সেটা নিয়েও কেউ কেউ কথা প্যাঁচাতে আসতে পারেন। তাদের জ্ঞাতার্থে বলি, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় প্যারালালি তিনটা অপারেশন চলেছিল, যেগুলোর প্রত্যেকটা নিয়েই কিছু লেখা দরকার। এজন্য একটু সময় করে বড় ধরনের লেখা লিখতে হবে বলে সময় নিয়েছি। আশা করি কয়েদিনের মাঝে সেটাও দেখতে পাবেন।

সংগৃহিত...

পঠিত : ১৪১০ বার

মন্তব্য: ০