Alapon

যেখানে শহীদ আবরার সফল, সেখানেই তার বাবা ব্যর্থ...


আবরার হত্যাকাণ্ড! অন্যান্য অনেক ইস্যুর মত এই ইস্যুটিও ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি ছোট্ট দেশ। কিন্তু ছোট্ট একটি দেশে ইস্যুর কোনো অভাব নেই। একটার পর একটা ইস্যু লেগেই আছে। আর সাধারণ মানুষসহ মিডিয়া পাড়া নতুন ইস্যু পাওয়ার সাথে সাথে পুরনো ইস্যুগুলো ভুলে যাচ্ছে। তাই আবরার ইস্যু ভুলে যাওয়ার আগেই কিছু কথা জরুরী মনে করছি।

আবরার হত্যার পর পরই বুয়েটে আসে আবরারের নিকট আত্নিয়রা। তারা এসেই দাবি করেন, ‘আবরার শিবির ছিল না।’
এরপর বুয়েটে আসলেন আবরারের বাবা। তিনিও বললেন, ‘আমার আবরার তো শিবির ছিল না। আমার পরিবারের সবাই আওয়ামিলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আর আবরারের শিবিরের সাথে জড়িত হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।’

আবরারের বাবার মর্মা‍র্থ দাড়ায় যেহেতু আবরার শিবির নয়, তা-ই তাকে হত্যা করা অন্যায়। কিন্তু আবরার যদি শিবির হতো তাহলে তাকে হত্যা করা অন্যায় হতো না। সে আবরারই হোক অন্য যেই হোক, শিবির হলে তাকে হত্যা করা বৈধ। আবরারের বাবার কথার সুরে এই ম্যাসেজটিই পাওয়া যায়।

শুধু আবরারের বাবাই নয়, আবরার ইস্যুতে যারাই প্রতিবাদ করেছেন তাদের অধিকাংশই একই কথা বলেছেন- আবরার তো শিবির না! তার মানে দাঁড়ায় আবরার যদি শিবির হতো তাহলে এতো প্রতিবাদ, আন্দোলন কিছুই হতো না। ফেসবুকে এখন যেমন আন্দোলন করছে, সেটাও করতো না। প্রতিবাদকারীদের খুব অল্প সংখ্যক মানুষই বলেছেন, ‘তার মানে আবরার যদি শিবির হতো তাহলে তাকে হত্যা করা বৈধ ছিল?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে এক প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত হয়ে বলেন, ‘আবরারকে হত্যা করা হয়েছে শিবির সন্দেহে! তার মানে শিবির করা অন্যায়। শিবির যারা করে তাদের হত্যা করা যাবে। তাহলে সংবিধান পরিবর্তন করেন। সংবিধান পরিবর্তন করে লিখুন, শিবির নিষিদ্ধ! আর যারা শিবির করে ছাত্রলীগ যদি তাদের পিটিয়ে হত্যা করে তারপরও তা অন্যায় বা অপরাধ বলে গণ্য হবে না।’

বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে শিবিরকে এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়নি। আর যদি কখনো নিষিদ্ধও করা হয়, তারপরও কি এভাবে পিটিয়ে হত্যা করা বৈধ হয়ে যাবে? রাষ্ট্র এ ধরণের হত্যাকাণ্ডকে সাংবিধানিকভাবে বৈধতা দান করবে?

আবরার এক অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। দেশের স্বার্ধবিরোধী চুক্তির বিরোধীতা করে শহীদ হয়েছে। আপামর দেশের মানুষের ন্যায্যতার কথা বলতে গিয়ে শহীদ হয়েছে। সেখানে শহীদ আবরারের পিতা হিসেবে আবরারে বাবা সম্পূর্ণ ব্যার্থ হয়েছে।

আবরারের বাবার বক্তব্য শুনে বোঝা যায়, আজ যদি আবরার না হয়ে অন্য কোনো বুয়েটের শিক্ষার্থী শিবির করার কারণে এভাবে নিহত হতো, তাহলে আবরারের বাবাও প্রতিবাদ করতো না। আর সবার মত আবরারের বাবাও বলতেন, ‘শিবিরকে মেরেছে!’

কিন্তু শিবির হওয়ার আগে সেই ছেলে যে দেশের সন্তান তা আবরারের বাবারা আজও উপলবদ্ধি করতে পারেনি। শিবির হোক আর যেই হোক, কাউকেই এভাবে পিটিয়ে হত্যা করার অধিকার সরকারি দল কেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও নেই।

হত্যাকাণ্ড মানেই হত্যাকাণ্ড। হত্যাকাণ্ডের কোনো দল বা মত নেই। অন্যায় মানেই অন্যায়। অন্যায়ের কোনো রাজনৈতিক দল নেই। তাই সকল অন্যায়ের প্রতিবাদ করার প্রাকটিস থাকা উচিত। আজ যেভাবে আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলন করা হচ্ছে, অনুরূপ দেশে ঘটমান প্রতিটি ঘটনার বিপরীতে আন্দোলন হওয়া উচিত। দল মত নির্বিশেষে গণমানুষের স্বার্থের দিকে চেয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন হওয়া উচিত।

নচেৎ, বছর কয়েকপর যখন সবাই আবরারের ঘটনা ভুলে যাবে। তখন দেশের অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবরারের মত কাউকে ভিন্নমতের কারণে জীবন দিতে হবে। তাই আসুন, অন্যায়কে অন্যায় বলতে শিখি। সকল হত্যাকাণ্ডকে হত্যাকাণ্ড বলি। হত্যাকাণ্ডের মাঝে কোনো শ্রেণি বৈষম্য টানার চেষ্টা না করি। তাতে আমাদেরই ক্ষতি। আমরা আম জনতাই দুর্বল হয়ে যাবো। আর শক্তিশালী হবে জালিমের গোষ্ঠি। আর আমরা জালিমের গোষ্ঠিকে শক্তিশালী হওয়ার আর কোনো সুযোগ দিতে পারি না।

পঠিত : ১২২৪ বার

মন্তব্য: ০