Alapon

ভারতীয় আধিপত্যবাদ এবং কিছু কথা...


গতকাল কয়েকজন ছোটভাইয়ের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তারা প্রায় সবাই জাহাঙ্গিরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তারা জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আমরা কি বাহিরে যাওয়ার পরিকল্পনা নিবো? নাকি বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিবো?

সিনিয়রদের মধ্যে একজন বললেন, ‘তোরা বাহিরেই চলে যা। বিসিএস এখন যতো গুরুত্ব পাচ্ছে আগামী ১০ বছর তেমন গুরুত্ব নাও থাকতে পারে। কারণ, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়ানক খারাপ। রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কাঠামো মূলত ফাপা। ভীত বলতে কিছুই নেই। সরকার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ভল্ট পর্যন্ত রেহাই দিচ্ছে না। যেখানে পাচ্ছে সেখান থেকেই লুটে পুটে খাচ্ছে। এই যখন অবস্থা তখন ১০ বছর হয়ত দেখা যাচ্ছে, সরকার সরকারি চাকুরিজীবিদের ঠিকমত বেতন দিতে পারছে না। অথবা এখন যেসব সুবিধা প্রদান করতেছে পরবর্তিতে তা দিতে পারছে না। আবার এটা নিশ্চিত করতে গিয়ে সরকারকে হয়ত মুদ্রাস্ফিতি মেনে নিতে হবে। ফলে তখন ১ লাখ টাকার মুল্যমান বর্তমানের ৫০ হাজারের সমান হয়ে যাবে। মোটাদাগে যে লাউ সেই কদুই।’

তখন একজন বলল, ‘ভাই দেশের এই যখন অবস্থা, তখন বাংলাদেশে ভারতীয়রা এসে চাকরি করে কেন? ভারতীয় এই আগ্রাসন থেকে মুক্তি কি আমরা পাবো না?’

এই কথাগুলো এক সময় শিবিরের ছেলেরা বলত। একটা সময় ছিল যখন তরুণ প্রজন্মের মধ্যে কেউ যদি ভারত বিরোধীতা করত তাহলে চোখ বন্ধ করে বোঝা যেত, এই ছেলে শিবির! আগে ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবল শিবিরের ছেলেরাই কথা বলত। যেমন টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে শিবির যে পরিমাণ আন্দোলন করেছেন, অন্য কোনো ছাত্র সংগঠন তার সিকি ভাগও করেনি। শিবিরের সেই ভারত বিরোধীতা এখন সার্বজনীনতা পেয়েছে। এখন ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কেবল শিবিরের ছেলেরাই কথা বলে না, দেশ প্রেমিক প্রতিটা তরুণই কথা বলে।

এই সার্বজনীনতা কীভাবে অর্জিত হল?

বাংলাদেশের মানুষ অনেক আগে থেকেই ভারত বিরোধী। তা প্রত্যক্ষভাবে বোঝা যায় যখন বাংলাদেশ বনাম ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ হয়। যেদিন বাংলাদেশ ভারতের বিরুদ্ধে জয়লাভ করে সেদিন বাংলাদেশের আপামর জনতার উল্লাস দেখলে মনে হয়, আর একটি যুদ্ধ জয় হয়েছে। এর কারণ, ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের সরকার কোনো ভূমিকা পালন করতে পারে না। কারণ, বাংলাদেশের প্রত্যেক সরকার ভারতের সহায়তা নিয়েই ক্ষমতায় আসে। সরকার ভারতপন্থি হলেও জনগণ ভারত বিরোধী। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের সমস্ত আগ্রাসনের রাগ গিয়ে মিলিত হয় ক্রিকেট মাঠে। তাই বাংলাদেশ বনাম ভারতের ক্রিকেট ম্যাচ শুধুই ক্রিকেট খেলা হয়, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জবাব দেওয়ার একটি হাতিয়ার।

এতোদিন তা শুধু নিজেদের মধ্যে চাপা ছিল। কিন্তু এক আবরার ফাহাদ নিজের জীবনের বিনিময়ে ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে গোটা দেশের তরুণ প্রজন্মকে সোচ্চার করে তুলেছে। অথচ ওরা এখন সবেমাত্র অনার্স ১ম বর্ষে পড়ছে। এই সময়ে আমরা ভারত বিরোধী আগ্রাসন খুব কমই বুঝতাম। কিন্তু এখনকার প্রজন্ম জন্ম থেকেই ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদি কণ্ঠস্বর হয়ে জন্ম নিচ্ছে। ইনশা আল্লাহ একদিন এই ভারতীয় আধিপত্যবাদ বাংলার জমিন থেকে চিরতরের জন্য বিদায় নিবে।

পঠিত : ১৩০৩ বার

মন্তব্য: ০